Quantcast
Channel: QuranerAlo.com – কুরআনের আলো ইসলামিক ওয়েবসাইট
Viewing all 452 articles
Browse latest View live

ইসলামে ‘তাকওয়া’র স্বরূপ ও সমাজ জীবনে এর প্রভাব~ পর্ব~ ১

$
0
0

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

লিখেছেনঃ ড. মোঃ ছানাউল্লাহ    ।    ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ ইবনে গাফফার

পর্ব~ ১ | পর্ব~ ২ | পর্ব~ ৩

172

 একজন মুসলিমের সামাজিক জীবনমানের অপরিহার্য ও অনিবার্য গুণ হল তাকওয়া। এর অর্থ বেঁচে থাকা, সাবধানতা অবলম্বন করা ও ভয় করা। সাধারণত যে বোধ মানবীয় সহজাত প্রবৃত্তি (নফস) মানুষকে অন্যায়, অশ্লীল, খারাপ ও অনিষ্টিকর কথা, কাজ ও চিন্তা থেকে বিরত রাখে মুলত সেটাই হচ্ছে তাকওয়া। আর এ তাকওয়াই সমাজে মানবতাবোধ, নীতিবোধ ও মূল্যবোধ নামে পরিচিত। উঁচু-নিচু, ধনী-গরীব, সাদা-কালো নির্বিশেষে যে কোন মুসলিম নারী পুরুষ তাকওয়া অবলম্বন করে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক তথা সামগ্রিক জীবন পরিচালনা করেন, তিনি ইসলামের দৃষ্টিতে মু্ত্তাকী নামে পরিচিত। মানুষের জীবনে সাফল্য অর্জনে তাকওয়ার প্রভাব অনবদ্য ও অপরিমেয়। বিশেষ করে সকল মুসলিমের সমাজ জীবনে তাকওয়ার সুদূর প্রসারী প্রভাব অনস্বীকার্য। সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনয়নে তাকওয়া তথা সুস্থ মানসিকতা, মননশীলতা ও আল্লাহ ভীতির কোন বিকল্প হয় না। বর্তমান প্রবন্ধে উপর্যু্ক্ত দিকগুলোর পযালোচনা কুরআন, সুন্নাহ ও যুক্তির আলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

 

তাকওয়া পরিচিতি

‘তাকওয়া’ শব্দটি ইসলামের একটি মৌলিক পরিভাষা। এর আভিধানিক অর্থ হল- ভালভাবে বেঁচে থাকা , পরহেয করা, রক্ষা করা, দূরে থাকা, সচেতনতা, জবাবদিহীতা, সচ্ছতা, বিরত থাকা ও সাবধান থাকা। যিনি তাকওয়া অবলম্বন করেন, তাকে বলা হয় ‘মুত্তাকী’ আল্লামা যামাখশারী [৫৬৭-৫৩৮ হি.] বলেন, শাব্দিকভাবে ‘মুত্তাকী’ কর্তাবাচক বিশেষ্য, যা আরবদের কথা ‘ওয়াক্বাহু ফাত্তাক্বা’- ‘সে তাকে বাঁচিয়েছে, ফলে সে বেঁচে গেছে’ থেকে এসেছে।

 

যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“তোমরা সে আগুন থেকে বেঁচে থাক, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর [2]।”

 

অন্যত্র বলা হয়েছে,

“আল্লাহুর শাস্তি থেকে তাদের রক্ষাকারী কেউ নেই [3]।”

 

যে ঘোড়া কাঁদা ও ধুলোবালি থেকে নিজ ক্ষুর বাঁচিয়ে রাখে তাকে ‘ফারাস ওয়াক্বি’ বলা হয়। কারণ কষ্টদায়ক সামান্য কিছুর স্পর্শ থেকেও সে তার ক্ষুরকে রক্ষা করে [4]।”

 

আভিধানিকভাবে তাকওয়া শব্দের আর এক অর্থ হল- ভয়, সতর্কতা ও জবাবদিহিতা। ‘তাকওয়াল্লাহ’ মানে ‘আল্লাহ্‌র বিষয়ে সতর্ক হওয়া’ [5] তাঁর (আল্লাহর) যাবতীয় নির্দেশসমূহ প্রতিপালন ও সকল নিষেধাধ্জ্ঞা থেকে দূরে থাকা, বেঁচে থাকার মাধ্যমে আল্লাহকে ভয় করা [6] এই দ্বিতীয় অর্থে পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতে তাকওয়া শব্দের ব্যবহার রয়েছে।

 

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন,

“হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর।[7]

 

নূহ (আ) , হূদ (আ), সালেহ (আ), লুত (আ) এবং শুআইব (আ) নিজ নিজ জাতিকে বলেছিলেন,

“তোমরা কি আল্লাহ্‌কে ভয় করবে না?”[8] তাঁরা এও বলেছিলেন, “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার অনুসরণ কর।” [9]

 

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, তাকওয়া শব্দটি আভিধানিকভাবে দু’টি অর্থ ধারণ করে। এক, আত্মরক্ষা, বেঁচে থাকা, বিরত থাকা, মুক্ত থাকা, রক্ষা করা ও পরহেয করা। দুই, ভয়-ভীতি তথা কোন প্রকার অনিষ্ট ও ক্ষতিকর বিষয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চিন্তা মিশ্রিত ভয়  [10]। ইসলামী শরী’আতের পরিভাষায় তাকওয়া অর্থ হল, আল্লাহ্‌ তা’আলার ভয়ে নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ হতে দূরে থেকে ইসলাম নির্ধারিত পথে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করা। অথবা, যে কাজ করার কারণে মানুষকে আল্লাহ্‌র শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে, তা থেকে নিজেকে রক্ষা করা হচ্ছে তাকওয়া। আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে প্রাপ্ত করুণা, ভালবাসা, দয়া ও অনুগ্রহ হারানোর ভয় অন্তরে সদা জাগ্রত থাকার নাম তাকওয়া  [11]

 

 

মুত্তাকীর পারিভাষিক সংজ্ঞায় কাযী নাসিরুদ্দীন বায়যাবী (র) [মৃ. ৬৮৫ হি] বলেন,

“শরীয়তের পরিভাষায় মুত্তাকী বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যিনি নিজেকে এমন সব কিছু থেকে রক্ষা করেন, বাঁচিয়ে রাখেন, যা তাকে পরকালে ক্ষতির সম্মুখিন করবে”  [12]

 

আবু মুহাম্মদ আল হুসাইন ইব্‌ন মাসউদ আল বগবী (র) [মৃ. ৫১০ হি] বলেন,

“মুত্তাকী ঐ ব্যক্তি, যিনি শির্‌ক, কবীরা গুনাহ ও সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখেন। মুত্তাকী শব্দটি আল ইত্তিকাউ থেকে নির্গত। এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে দু‘বস্তুর মাঝখানের অন্তরাল-দেয়াল। যেমন এক হাদীসে আছে, সাহাবায়ে কিরামের উক্তি, “যুদ্ধক্ষেত্রে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হলে আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে আড়াল করে থাকতাম। অর্থাৎ যখন যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যেত তখন আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে আমাদের ও শুক্রদের মাঝখানে অন্তরায় করে রাখতাম। সুতরাং মুত্তাকী আল্লাহর আদেশ পালন এবং তাঁর নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকাকে তার এবং আল্লাহর শাস্তির মাঝখানে অন্তরায় তৈরী করে বলেই তাকে মুত্তাকী বলা হয়।[13]

 

আল্লামা জারুল্লাহ যামাখশারী (রা) [মৃত. ৫৩৮ হি] বলেন,

“ ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় মুত্তাকী হল ঐ ব্যক্তি, যে নিজ সত্তাকে রক্ষা করে এমন বিষয় থেকে, যার জন্য সে শাস্তির উপযোগী হয়ে যায়; সেটি করণীয় হোক বা বর্জনীয়।[14]

 

 

পবিত্র কুরআনে তাকওয়া

পবিত্র কুরআনের পনের জায়গায় তাকওয়া শব্দটির উল্লেখ রয়েছে।[15]” ‘আল-মুত্তাকুন’ শব্দের উল্লেখ রয়েছে মোট ছয় জায়গায় এবং ‘আল-মুত্তাক্বীন’ শব্দের উল্লেখ রয়েছে মোট ৪৩ জায়গায়  [16]। এছাড়া ‘আলবিকায়াতু’ ও ‘আল-ইত্তিকাউ’ শব্দমূল থেকে গঠিত বিশেষ্য-বিশেষণ বা ক্রিয়ারূপে ব্যবহার রয়েছে প্রায় দু’শ জায়গায়। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত করণীয় বা বর্জনীয় প্রায় প্রত্যেকটি বিষয়ের বর্ণনার সাথে ‘তাকওয়া’ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে। ‘তাকওয়া’র আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থের সাথে মিল রেখে প্রাসঙ্গিক বিষয়ের অর্থ নির্ধারণ করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ এর কিছু নিম্নে বর্ণনা করা হলো:

 

তাকওয়া অর্থ ঈমান। যেমন, আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন:

“কুরআন মাজীদ মুত্তাকীদের তথা মু’মিনদের জন্য পথপ্রদর্শক [17]

 

অন্যত্র বলা হয়েছে,

“আর তিনি তাদের জন্য তাকওয়ার বাণী তথা তাওহীদের বাণী অর্থাৎ ঈমান অবধারিত করে দিলেন [18]”।

 

আরো বলা হয়েছে,

“তারাতো ঐ ব্যক্তি যাদের অন্তরসমুহকে আল্লাহ তা‘আলা তাকওয়ার তথা ঈমানের জন্য নির্বাচন করেছেন।[19]” “ফিরআউন সম্প্রদায়, তারা কি তাকওয়া অবলম্বন তথা ঈমান গ্রহণ করবে না? [20]

 

 

তাকওয়া অর্থ তাওবা-অনুশোচনা। যেমন, “আর যদি গ্রামের অধিবাসীরা ঈমান গ্রহণ করে ও তাকওয়া অবলম্বন করে অর্থাৎ তওবা করে তবে তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম।[21]” তাকওয়া অর্থ আনুগত্য। যেমন, “তোমরা ভীত হও যে, আমি ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই আনুগত্য কর [22]” অতএব, তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া আর কারও আনুগত্য করছ? [23]” “আর তোমরা ঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর অর্থাৎ তাঁর অবাধ্য হয়ো না।[24]

 

 

তাকওয়া অর্থ নিষ্ঠা-আন্তরিকতা বা একাগ্রতা। যেমন,

“ আর নিশ্চয়ই এটি মনের তাকওয়া অর্থাৎ মনের একাগ্রতা।[25]

 

তাকওয়া হচ্ছে মূল্যবোধ, মানসিক শুদ্ধতা ও দৃঢ়তা। এটি যে কোন ধরনের পদঙ্খলন থেকে মানুষকে রক্ষা করে; সকল মন্দ ও অশ্লীল কথা, কাজ ও পরিবেশ থেকে ফিরিয়ে রাখে; ‘খাহেশাতে নাফসানী’ তথা প্রবৃত্তির খেয়াল-খুশি বা অভিলাষ ও দুষ্টচক্রের ফাঁদে পড়ে নিজের ক্ষতি করা থেকে এবং পরিবার, সমাজ ও দেশের ক্ষতি করা থেকে রক্ষা করে। জনমানব শূন্য নির্জন স্থানে বা দুর্নীতি করার অসংখ্য সহজ পথ উন্মুক্ত থাকার পরও যে শক্তি মানুষকে তাতে লিপ্ত হওয়া থেকে মুক্ত রাখে তা-ই তাকওয়া। যাদের মনে তাকওয়া রয়েছে, তাদের ওপর শয়তান তথা দুষ্টচক্রের আক্রমণ ঘটার সাথে সাথেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনা শক্তি জগ্রত হয়ে উঠে। [26]

 

 

তাকওয়া মানুষের মধ্যে ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার শক্তি জাগ্রত করে। আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে বলেন,

“হে বিশ্বাসীগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাকওয়া অর্জন কর, তবে তিনি তোমাদের ভাল-মন্দ পার্থক্য করার শক্তি দান করবেন।…[27].

 

”অর্থাৎ তাকওয়ার ফলে মানুষের বিবেক বুদ্ধি প্রখর হয় এবং সুষ্ঠ বিচার-বিবেচনা শক্তি জাগ্রত হয়। তাই সে সত্য-মিথ্যা ন্যায়-অন্যায় ও ভাল-মন্দ চিনতে এবং তা অনুধাবন করতে ভূল করে না। তার হাতে তাকওয়ার আলোকবর্তিকা থাকার ফলে জীবন পথের মন্দ দিকসমূহ সে স্পষ্টত দেখতে পায়। বিবেচনার শক্তির প্রখরতা ও বুদ্ধিদীপ্ততা তার মধ্যে এমনভাবে কাজ করে যে, তার কাছে তখন ইহ-পারলৌকিক যে কোন বিষয়ের কোনটি সঠিক আর কোনটি ভূল তা স্পষ্টতই ধরা পরে। ফলে সে কোন সংশয়, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, ইতস্তত, দুর্বলতা ও হীনমন্যতা ছাড়াই দিবালোকের মত সুস্পষ্ট ও সঠিক পথে চলতে সক্ষম হয়। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন, “হে মু’মিনগণ ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর-তাকওয়া অর্জন কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তিনি নিজ অনুগ্রহের দ্বিগুন প্রতিদান তোমাদেরকে দিবেন এবং তোমাদেরকে দিবেন জ্যোতি-আলো, যার সাহায্যে তোমরা পথ চলবে।[28]

 

অর্থাৎ তাকওয়া জীবনকে এমন এক সুদৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপন করে, যা সকল প্রকার ভয়-ভীতি, লোভ-লালসা, প্ররোচনা-প্রতারণা, প্রলভন-পদস্খলন থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখে। অন্ধকারাচ্ছন্ন গভীর সমুদ্রে কম্পাস বা দিক-দর্শন যন্ত্র যেমন সমুদ্রভিযাত্রীকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকে, সমস্যা-সংকুল জীবন পথে তাকওয়াও তেমনি মানুষকে নির্ভূল পথের সন্ধান দেয়।

 

 

তাকওয়া একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। শিষ্টের লালন ও দুষ্টের দমন নীতির পরিচায়ক একটি শক্তি। ভালকে গ্রহণ করার তীব্র আগ্রহ এবং মন্দকে পরিহার করে চলার দৃঢ় মনোবলই হচ্ছে তাকওয়া। মানুষের সকল সৎগুণের সঞ্জীবনী শক্তি হচ্ছে তাকওয়া। এ ক্ষেত্রে তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিদের ইতবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকাণ্ডের বর্ণনা সম্বলিত নিম্নোক্ত আয়াতগুলো প্রণিধানযোগ্য। যেমন, “এ গ্রন্থ (আল কুরআন) পথ প্রদর্শণকারী পরহেযগারদের জন্য। পরহেযগার হচ্ছে তারা, যারা অদৃশ্য বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে; এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সেসব বিষয়ের ওপর যা কিছু আপনার ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে, এবং যা কিছু আপনার পূর্ববর্তীদের ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তারা আখিরাতের প্রতিও দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে।[29]

এখানে তাকওয়ার অর্থ হচ্ছে সৎকাজ সম্পাদন করা। কারণ, অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,

“ পবিত্র কুরআন সৎকর্মশীলগণের জন্য পথপ্রদর্শক ও অনুগ্রহ স্বরূপ”।  [30]  আর সৎকর্মশীলগণের পরিচয়ে তা-ই বলা হয়েছে, যা মুত্তাকীগণের পরিচয়ে বিধৃত হলো।

 

অন্যত্র বলা হয়েছে,

“শুধমাত্র পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ ফিরানোর মধ্যে কোন কল্যাণ নেই; বরং কল্যাণ হচ্ছে, যে ঈমান আনবে আল্লাহ্‌র ওপর, কিয়ামত দিবস, ফেরেশতাগণ, আসমানী কিতাবসমূহ ও নবী-রাসূলগণের ওপর; আর তাঁরই ভালবাসার মানসে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির-পথিক, ভিক্ষুক ও সর্ব প্রকার দাসত্ব থেকে মানুষকে মুক্তির জন্য সম্পদ ব্যয় করবে; আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে; আর যারা তাদের অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করে যখন তারা অঙ্গীকার করে এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী। আর তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই তাকওয়া অবলম্বনকারী-মৃত্তাকী।[31]

 

‘তারাই হল সত্যাশ্রয়ী’ অংশের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, “আয়াতে বর্ণিত বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন কর্মকান্ডসমূহ যখন তারা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করবে তখনই তারা মুত্তাকীরূপে পরিগণিত হবে।[32]

“তারাই তো সেসব লোক যারা সত্য প্রমাণিত করেছে, আর তারাই হল মুত্তাকী” আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় আবূ হাইয়্যান (র) বলেছেন, ‘সত্যবাদীতা দিয়ে এখানে কথাবার্তায় সত্যবাদীতা বোঝানো হয়ে থাকতে পারে; যদি তা-ই হয় তবে তা হবে মিথ্যার বিপরীত। তখন এর অর্থ হবে তাদের কথাবার্তা তাদের তৃদয়ে যে ঈমান ও কল্যাণ রয়েছে তার অনুরূপ। সুতরাং তারা যদি কোন বিষয়ে সংবাদ দেয় তখন তা হয় এমন সত্য সংবাদ যার মধ্যে কোন মিথ্যা মিশ্রিত হয় না।[33]

বস্তুত, “যারা সত্য নিয়ে এসেছে এবং যারা সত্যকে সত্য বলে গ্রহণ করেছে তারাইতো মুত্তাকী  [34]

 

সুতরাং জেনে-বুঝে কোন অন্যায়তো সে করেই না; বরং সঙ্গদোষ বা পরিবেশ-পরিস্থিতির শিকার হয়ে কোন অন্যায়, অনৈতিক বা পাপের কাজে প্রবৃত্ত হলে অথবা যে কোন ধরনের ভূল করলে মনে পড়ার সাথে সাথে সে নিজেকে সুধরে ফেলে[35]। কোন কুসংস্কার বা গর্হিত কাজ যারা করে না তারই মুত্তাকী।

 

“ঘরের পিছন দিক থেকে প্রবেশের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই; বরং কল্যাণ হচ্ছে পিছন দিক থেকে প্রবেশের মত কুসংস্কার বর্জন করে ঘরের দরজা দিয়ে-সামনের দিক থেকে প্রবেশ করা।[36]” কাযী নাসিরুদ্দীন বায়যাবী (র) বলেন, ‘কল্যানের অধিকারী সে ব্যক্তি, যে সকল হারাম ও শাহ্ওয়াত-লালসা থেকে বেঁচে থাকে।[37]

 

যুদ্ধ চলাকালীন কঠিন অবস্থায় ধৈর্যধারণের সাথে তাকওয়ার সংযোগ ঘটলে বিজয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। “ আর যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না।[38] এ আয়াতসমূহে মানুষের জন্য কল্যাণকর বিষয়গুলোর বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে এবং এগুলো তখনই মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে, যখন তারা এগুলো জীবনের বাঁকে বাঁকে মেনে চলে ও বাস্তবায়ন করে।

আল্লাহ্‌ তা‘আলা এ প্রসঙ্গে বলেন,

“ হে ঈমানদারগণ ! তোমরা আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিত ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক।[39] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবূ হাইয়্যান, ইব্‌নু মাসঊদ, রবী, কাতাদাহ (রা) ও হাসান বসরী (র) বলেন, ‘হাক্কা তুক্বাতিহি-যথাযথ ভয়’ হল প্রত্যেক কাজে আল্লাহর আনুগত্য করা, আনুগত্যের বিপরীতে কোন কাজ না করা, আল্লাহকে সর্বদা স্মরণ রাখা-কখনও কিস্মৃত না হওয়া এবং সর্বদা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, অকৃতজ্ঞ না হওয়া। কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, ‘হাক্কা তুক্বাতিহি’ এর অর্থ হল, আল্লাহর সকল অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকা।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি বিধানের কাজে কোন ব্যক্তির ভর্ৎসনা বা নিন্দা তাকে কুন্ঠিত করে না। সে ন্যায়-নীতি অবলম্বন করে সকল কাজ সামাধা করে; হোক সে কাজ তার নিজের অথবা তার সন্তানের অথবা তার পিতার বিরুদ্ধে।[40]” এ আয়াতের ব্যাখ্যায় কাযী নাসির উদ্দীন বায়যাবী (র) বলেন, “এখানে স্পষ্টত বা প্রচ্ছন্নভাবে প্রমাণ রয়েছে যে, এটি পূর্ণাঙ্গ মানবীয় গুনাবলী সম্বলিত একটি আয়াত। এখানে বর্ণিত সমুদয় বিষয় এর শাখা-প্রশাখাসহ মুলত তিন ভাগে বিভক্ত। এক. মানুষের আকিদা-বিশ্বাসের বিশুদ্ধতার বিবরণ, দুই. সুন্দর আচার-আচরণ এবং তিন. ব্যক্তি-মানসের কুদৃষ্টি-কালচার। প্রথমটির দিকে ইঙ্গিত রয়েছে আল্লাহর বাণী মান আমানা থেকে ওয়ান্‌নাবিয়্যীন’ পর্যন্ত অংশে, এবং তৃতীয়টির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে ‘ওয়া আকামাস সালাতা’ থেকে শেষ পর্যন্ত অংশ দিয়ে। এ কারনেই আয়াতে বর্ণিত সমুদয় গুণের অধিকারী ব্যক্তিকে তার সুদৃঢ় ঈমান ও ই’তিকাদের ভিত্তিতে সত্যবাদী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং তাকে মুত্তাকী বল হয়েছে তার সুন্দর ব্যবহার ও যথাযথ লেন-দেনের ভিত্তিতে।

আর এ জন্যই মহানবী (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এ আয়াতের উপর আমল করল সে অবশ্যই তার ঈমান পরিপূর্ণ করল।[41]

তাকওয়ার দাবী হচ্ছে বেশি বেশি ভাল কাজ করা ও আল্লাহর ইবাদত করা। কল্যাণমূলক কাজে দ্রুত এগিয়ে আসা; চাই তা জাগতিক হোক বা পারলৌকিক।

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন;

“ আর তোমাদের প্রভূর ক্ষমার প্রতি এবং জান্নাতের প্রতি দ্রুত এগিয়ে যাও, যার পরিধি হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য। (মুত্তাকী হচ্ছে তারা) যারা সচ্ছলতা ও অভাবের সময় (মানুষের প্রয়োজনে সম্পদ) ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগ-ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে। আর আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালবাসেন। (মুত্তাকী তারাও) যারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের ওপর যুলম করে ফেললে (সাথে সাথে) আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ্ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? আর তারা জেনে-শুনে নিজেদের (ভূল) কৃতকর্মসমূহ বারংবার করতে থাকে না।[42]

 

“তারা (আহলে কিতাবগণ) সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবগনের মধ্যে কিছু লোক এমনও আছে যারা অবিচলভাবে আল্লাহ্‌র আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং রাতের গভীরে তারা সেজদায় রত থাকে। তারা আল্লাহ্‌র প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং কল্যাণকর বিষয়ের নির্দেশ দেয়: অকল্যাণ থেকে বারণ করে এবং সৎকাজের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে থাকে। আর এরাই হল সৎকর্মশীল। তারা যেসব সৎকাজ করবে, কোন অবস্থাতেই সেগুলোর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শণ করা হবে না. আর আল্লাহ্‌ মুত্তাকীদের বিষয়ে অবগত।[43]

এ আয়াতসমূহে বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রত্যেকটি বিষয়ই আমাদের বাস্তব জীবনে অবশ্য করণীয় ও পালনীয়। সুতরাং একজন মানুষ যত বেশী ভাল কাজ করবে তার মধ্যে ততবেশী তাকওয়া বদ্ধমূল হবে।

 

 

মুত্তাকীগণ অনুসন্ধিৎসু, উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারী হয়। দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক পরিবর্তন-বিবর্তন তাকে স্পর্শ করে, তাকে নাড়া দেয়, ঘটনার মূল কারণ সন্ধানে ব্যাপৃত করে। ফলে সে বিভিন্ন সূত্র আবিষ্কারে উদ্বুদ্ধ হয় এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখতে সক্ষম হয় [44]

চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ নক্ষত্র তথা সৌর জগত এবং পৃথিবীর জীব-জন্তু, পাহাড়-পর্বত, বৃক্ষলতা, খাল-বিল, নদী-নালা, সাগর-মহাসাগর, রাত-দিনের পরিবর্তন ইত্যাদি মুত্তাকীদের কাছে গবেষণার উপাদান হয় এবং গবেষণার আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও এর থেকে উপকৃত হওয়ার বিষয়ও তাদের সাথে সম্পর্কিত, যারা তাকওযার অধিকারী [45]

বৃষ্টির পানি দিয়ে জমিতে উৎপন্ন ফল-ফসল ও উদ্ভিদের কথা চিন্তা করে এর উৎকর্ষ সাধন ও উৎপাদন বাড়ানোর ওপরও মুত্তাকীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে [46]

 

বদান্যতা প্রদর্শন হচ্ছে তাকওয়া। বিয়ে করার সময় মোহর ধার্য করে বা পূর্ণমোহর প্রদান করে যদি বিয়ে সম্পন্ন হয় এবং যুক্তিসঙ্গত কোন কারণে সে বিয়ে বহাল রাখা সম্ভব না হয় তাহলে ইসলামের বিধান অনুযায়ী নারী (স্ত্রী) তার জন্য নির্ধারিত মোহরের অর্ধাংশের অধিকারী হবে। বাকী অর্ধেক পুরুষকে (স্বামীকে)ফিরিয়ে দিবে। তবে নারী সম্পূর্ণ মোহর ফিরিয়ে দিলে বা পুরুষ সম্পূর্ণ মোহর আদায় করে দিলে তা হবে বদান্যতার ব্যাপার। আর এ বদান্যতা-উদারতা পুরুষের পক্ষ থেকে হোক এটিই তাকওয়া  [47]

এমনিভাবে নিয়ম মোতাবেক স্বামী-স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে খোর –পোষ দেয়া তাকওয়ার অধিকারী ব্যাক্তির ওপর কর্তব্য  [48] বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। সুতরাং বড় মনের অধিকারী হওয়া, উদারতা প্রদর্শন করা ও কর্তব্য কাজ যথাযথ সম্পাদন করা হল তাকওয়ার দাবী।

 

 

পৃথিবীতে বসবাসরত অসংখ্য মানুষের মধ্যে সবাই একত্ববাদের বিশ্বাসী নয়। আল্লাহ্‌র একত্ববাদে বিশ্বাসী মুসলিম জাতি অন্যান্য কুফরী মতবাদে বিশ্বাসী জাতি-গোষ্ঠীর সাথে ব্যক্তিগত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্পর্ক রক্ষা করা ও লেনদেন করাতে ইসলামে কোন বাধা নেই। কারণ, ইসলামে সংকীর্ণতা বা প্রতিবন্ধকতা নেই।[49]

মুসলিম-অমুসলিম যে কোন ব্যক্তি, জাতি-গোষ্ঠি বা রাষ্ট্রের সাথে কৃত চুক্তি বা অঙ্গীকার পূর্ণ করা এবং তাতে আন্তরিক হওয়া তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য। এরুপ ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ্‌র ভালবাসার পাত্র বলে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।[50]

তবে সম্পর্ক রক্ষা ও লেন-দেনের আড়ালে যেন মুসলিমদের কৃষ্টি-কালচার, ধর্মীয় বিশ্বাস হারিয়ে না যায় এবং অমুসলিমদের কোন চক্রান্তে না পড়ে সে বিষয়ে অত্যন্ত সতর্কতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে চলার জন্য পবিত্র কুরআনে তাকওয়া শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছে,

“ যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে  [51]

 

 

স্বাবলম্বন বা আত্মনির্ভরতা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ তাকওয়া। আয়-উপার্জন, শিক্ষা-প্রশিক্ষণ ও সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপনের সকল উপায়-উপকরণ অবলম্বন করে স্বাবলম্বী হয়ে চলার নাম তাকওয়া। সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় আল্লাহর ওপর নির্ভর করে আল্লাহর রাস্তায় বেরিয়ে পড়া, স্থানীয় জনগণের ওপর বোঝা হওয়া, জীবন-জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে কারো গলগ্রহ হওয়া, হাত পাতা, ভিক্ষে করা ও পরনির্ভরশীল হওয়া তাকওয়া হতে পারে না। কেবল হাদীয়া-তোহ্‌ফার ওপর নির্ভর করে যারা জীবন-যাপন করে, তারা মুত্তাকী হতে পারে না। আত্মনির্ভরশীল জীবন গঠন এবং ব্যাক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের ওপর বোঝা হয়ে জীবন-যাপন থেকে বিরত থাকার মনোবৃত্তিকে তাকওয়া বলা হয়েছে।

 

 

আল্লাহ্ তা’আলা হজ্জের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন,

“আর তোমরা পাথেয় সাথে নিয়ে নাও। নিশ্চয় সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া। আর হে বুদ্ধিমানগণ! তোমরা আমাকেই ভয় করতে থাকো [52]

এখানে তাকওয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে, “এমন সহায়-সম্বল অবলম্বন যা থাকার ফলে অন্যের কাছে হাত পাততে হয় না [53]

এ আয়াতের শানে নুযুল ও ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, “ এ আয়াতটি ইয়ামানের অধিবাসীদের প্রতি নাযিল হয়েছে। তারা হজ্জ করত এমন অবস্থায় যে, প্রয়োজনীয় খাদ্য-সামগ্রী কিছুই তারা সঙ্গে নিয়ে যেত না এবং বলত, আমরা আল্লাহর নির্ভরশীল। ফলে তারা স্থানীয় জনগণের ওপর বোঝা হয়ে থাকত।[54]

কাজেই সর্বপ্রকার পরাধীনতা তথা জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থ-সামর্থ, শক্তি-সাহস, কৃষ্টি-কালচার,সংস্কতি-সভ্যতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতার অভিশাপ থেকে মুক্তি অর্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা করা মুত্তাকী হওয়ার জন্য একান্ত প্রয়োজন।

মুত্তাকী ব্যক্তিকে কতগুলো বিষয় বর্জন করে চলতে হয়। মানুষের মধ্যে দুটি পরস্পর বিরোধী প্রবনতা বা শক্তি পাশাপাশি সাংঘর্ষিক অবস্থানে বিদ্যমান। তা হল, ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ, আলো-অন্ধকার ইত্যাদি। এ পরস্পর বিরোধী দুই প্রবণতার মধ্য থেকে ভাল ও কল্যাণময় প্রবণতা বেছে নিয়ে সেটাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা এবং এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার ফলে যত কঠিন পরীক্ষা ও অবস্থারই মুকাবিলার সম্মুখীন হোক না কেন, তা ধৈর্য ও সাহসের সাথে উত্তীর্ণ হওয়া এটাই প্রকৃত তাকওয়া। অর্থাৎ মানবীয় সহাজাত সুকুমার বৃত্তি বা আকাঙ্খা যা মানুষকে কুপ্রবৃত্তি তথা মন্দ কথা, খারাপ কাজ ও দুষ্ট চিন্তা থেকে বিরত রাখে, তাকেও তাকওয়া বলা হয়। যারা তাকওয়া অবলম্বনে জীবন যাপন করেন এবং মুত্তাকীদের নেতা বা আদর্শ যারা হতে চান, তারা যেসব বিষয় বর্জন করে জীবন যাপন করেন, এমন কিছু বিষয়ের উল্লেখ করে মহান আল্লাহ বলেন,

“ আর যখন তারা (সম্পদ) ব্যয় করে তখন অনর্থক ব্যয় করে না, আবার কার্পণ্যও করে না; বরং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করে (ব্যয় করে)। [55]

 


[2]. আল কুরআন ২:২৪।

[3]. আল কুরআন, ১৩:৩৪।

[4]. আবুল কাশিম জারুল্লাহ মাহমূদ ইব্‌ন উমার আল যামাখশারী, আল-কাশ্‌শাফ ‘আন হাক্বায়িক্বি আল তানযীল ওয়া ‘উয়ূনি আল আক্বাবীল ফী ওযূহি আল তাবীল, মিশর, মাকতাবা মিশর, তা.বি, খণ্ড ১, পৃ. ৩৭।

[5]. fear is of many kinds : (1) the abject fear of the coward; (2) the fear of a child or an inexperienced person in the face of an unknoun danger; (3) the fear of a resonable man who wishes to protect. (4) the reverence which is akin to love. For it fears to doanything which is no pleasing to the object of love. The first is third is a many precaution against ebil as long as it is unconquered; and the fourth is the seed-bed of ighteousness. Those mature in faith cultivate the fourth : at earlier stages, the third or the second may be necessary; rhey are fear. But not the fear of Allah. The first is a feeling of which anyone should be ashamed. (the holy Quran-English tronslation of the meanings and commentary. Saudi Arabia : King Fahd Holy Quran printing complex- 1411 H.), p. 170-171, Footnote No. 247.

[6]. ড. ইবরাহীম মাদকূর, আল-মুজাম আল ওয়াসীত, দেওবন্দ, কুতুবখানা হুসাইনিয়াহ, তা.বি.,পৃ. ১০৫২।

[7] . আল-কুরআন. ২২:০১।

[8]. আল-কুরআন. ২৬: ১০৬,১২৪, ১৪২, ১৬১, ১৭৭।

[9] . আল-কুরআন. ২৬: ১০৬,১২৪, ১৪২, ১৬১, ১৭৭।

[10]. Taqwa, and the verbs and nouns connected with the root, signify : (1) the fear of Allah, which, according of wisdom: (2) rwstraingt, or guarding on’s tongue, hand and heart from evil: (3) hence righteousness, piety, good conduct. All these ideas are imtlied : in the translation, only one or other of these ideas can be indicated, according to the context. (the holy Quran-English tronslation of the meanings and commentary. Saudi Arabia : King Fahd Holy Quran printing complex- 1411 H.), p. 170-171, Footnote No. 26.

[11]. সম্পাদনা পরিষদ, ইসলমী বিশ্বকোষ, ঢাকা, ইফাবা, ১৯৯২, ১২শ খণ্ড, পৃ. ১০৭।

[12]. কাযী নাসির উদ্দীন আবদুল্লাহ্ ইবন ওমর ইবন মুহাম্মদ আল-বায়যাবী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৬।

[13]. আবু মুহাম্মদ আল হুসাইন ইবন মাসউদ আল-বগভী (মৃ. ৫১০ হি.), মা’আলিমুত তানযীল ফিত তাফসীর ওয়াত তাবীল, বৈরুত, দার আল ফিক্‌র, ১৯৮৫, খণ্ড ১, পৃ. ৩৫।

[14]. আবুল কাশিম জারুল্লাহ মাহমূদ ইবন উমার আল যামাখশারী, আল-কাশশাফ ‘আন হাক্বায়িক্বি আল তানযীল ওয়া ‘উয়ূনি আল আক্বাবীল ফী ওযূহি আল তাবীল, প্রাগুক্ত, খণ্ড ১, পৃ. ৩৭।

[15]. যেমন, আল-কুরআন, ২:১৯৭, ২৩৭, ৫: ২.৮, ৭: ২৬. ৯: ১০৮, ২০: ১৩২, ২২: ৩২, ৩৭, ৪৮:২৬, ৪৯: ৩, ৫৮: ৯, ৭৪: ৫৬, ৯৬: ১২; মুহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী, আল-মুজাম আল-মুফাহরাস লি আলফায্‌ আল কুরআন আল কারীম, বৈরুত, দার আল মারিফাহ্ ১ম মুদ্রণ ১৪২৩ হি./২০০২, পৃ. ৩৭৯।

[16]. মুহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী, আল-মুজাম আল-মুফাহরাস লি আলফায্‌ আল কুরআন আল কারীম, প্রাগুক্ত,পৃ.৮৪৫-৮৪৬।

[17]. আল কুরআন, ২:২; আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা)সহ অন্যান্য অনেক সাহাবা (রা) বেলন, তারা হলেন ঈমানদার ব্যক্তিগণ। আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবন জারীর আল তাবারী (মৃ. ৩১০ হি.) জামিউল বায়ান ‘আন তাবীলি আয়িল কুরআন, বৈরুত দার আল ফিক্‌র, তা.বি. খণ্ড ১. পৃ.১৪৭।

[18] আল-কুরআন. ৪৮: ২৬।

[19]. আল-কুরআন. ৪৯:০৩।

[20]. আল-কুরআন. ২৬:১১।

[21]. আল-কুরআন. ৭:৯৬।

[22].. আল-কুরআন. ১৬:০২।

[23]. আল-কুরআন. ১৬:২৬।

[24]. আল-কুরআন. ২৩:৫২।

[25]. আল-কুরআন. ২২:৩২।

[26]. আল-কুরআন. ৭ : ২০১-২০২।

[27]. আল-কুরআন. ৮ : ২৯।

[28]. আল-কুরআন. ৫৭ : ২৮।

[29]. আল-কুরআন. ২ : ২-৪।

[30]. আল-কুরআন. ৩১ : ১-৫।

[31]. আল-কুরআন. ২ : ১৭৭।

[32].. শায়খ আবদুর রহমান ইবন হাসান, ফাতহুল মাজীদ, রিয়াদ, আল রিয়াসাহ আল ‘আম্মাহ, ১৯৮৩, পৃ. ৩৩৩।

[33]. মুহাম্মদ ইব্‌ন ইউসুফ ওরফে আবু হাইয়্যান আল-আন্দালুসী (৬৫৪-৭৫৪ হি,). তাফসীর আল রাহরুল মুহীত, কায়রো, দারুল কিতাব আল-ইসলামী, ৩য় মুদ্রণ, ১৪১৩ হি, /১৯৯২, খণ্ড ২ , পৃ. ৮।

[34]. আল-কুরআন. ৩৯: ৩৩।

[35]. আল-কুরআন. ৭ : ২২১।

[36]. আল-কুরআন. ২ : ১৮৯।

[37]. কাযী নাসির উদ্দীন আবদুল্লাহ্ ইবন ওমর ইবন মুহাম্মদ আল-বায়যাবী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩৩।

[38]. আল-কুরআন. ৩ : ১২০।

[39]. আল-কুরআন. ৩: ১০২।

[40]. মুহাম্মদ ইব্নু ইউসুফ ওরফে আবু হাইয়্যান আল-আন্দালুসী (৬৫৪-৭৫৪ হি,). তাফসীর আল রাহরুল মুহীত, ৩য় খণ্ড, পৃ.১৭।

[41]. কাযী নাসির উদ্দীন আবদুল্লাহ্ ইবন ওমর ইবন মুহাম্মদ আল-বায়যাবী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১২৫।

[42]. আল কুরআন, ৩ : ১৩৩-১৩৫।

[43]. আল কুরআন, ৩ : ১১৩-১১৫।

[44]. আল কুরআন, ১০ : ৬।

[45]. আল কুরআন, ১০ :৬।

[46]. আল কুরআন, ১০ : ৩১।

[47]. আল কুরআন, ২ : ২৩৭।

[48]. আল কুরআন, ২ : ২৪১।

[49]. আল কুরআন, ২২ : ৭৮।

[50]. আল কুরআন, ৩ : ৭৬।

[51]. আল কুরআন, ৩ : ২৮।

[52]. আল কুরআন, ২ : ১৯৭।

[53]. জালালুদ্দীন আল সুয়ূতী, তাফসীর জালালাইন, সিঙ্গাপুর : এদারা নশর ওয়া ইশা’আতে ইসলামিয়্যাহ্, তা.বি., পৃ . ২৯।

[54]. কাযী নাসির উদ্দীন আবদুল্লাহ্ ইবন ওমর ইবন মুহাম্মদ আল-বায়যাবী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩৭।

[55]. আল কুরআন, ২৫ : ৬৭-৬৮, ৭২-৭৪।

 

 


আত্মগঠন

$
0
0

লিখেছেন:  খালিদ বিন আব্দুল আজিজ আবাল খায়ল | অনুবাদ : ইকবাল হোছাইন মাছুম

4520579086_a3c31c72d9

 

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন,

বরং মানুষ তার নিজের উপর দৃষ্টিমান। যদিও সে নানা অজুহাত পেশ করে থাকে। [সূরা কিয়ামাহ:১৪-১৫]

আল্লামা ইবনু কাছির রহ. আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, প্রতিটি মানুষই নিজের ব্যাপারে সাক্ষী, নিজ কর্ম সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত, অস্বীকার করুক কিংবা অজুহাত পেশ করুক। [তাফসির ইবনু কাছির, ৪/৪৪৯]

আয়াতের মাধ্যমে একটি বিষয় প্রমাণিত হল যে, ব্যক্তির অন্তরের গোপন বিষয়াদি সম্বন্ধে আল্লাহর পর তার চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না। সেসব বিষয়ে আল্লাহর পর সর্বাধিক পরিজ্ঞাত, ব্যক্তি নিজে।

তাইতো মানুষের কাছে শরিয়তের চাহিদা হচ্ছে, মানবাত্মা একান্ত অনুগত হওয়া অবধি মানুষ তার পরিচর্যা ও শাসন করে যাবে, তার বিরুদ্ধে লাগাতার সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। বিষয়টি নিতান্ত সহজ ব্যাপার নয় যে, সকলের পক্ষে তাতে সফল হওয়া সম্ভব। বরং খুবই কঠিন। অবাঞ্চিত সব যাতনা ও কষ্টে ভরা দীর্ঘ রাস্তা। যার সত্যতা মিলে আল্লাহ তাআলার নিম্নোক্ত বাণীতে,

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ﴿69﴾

আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। [সূরা আনকাবুত:৬৯]

আল্লাহ তাআলা হেদায়াত দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আর শর্ত আরোপ করেছেন দুটি ।

এক. আল্লাহর আনুগত্যের উপর সর্বাত্মক পরিশ্রম করা, আত্মাকে কঠোর সাধনা-সংগ্রামে নিয়োজিত রাখা এবং শাসনের মাধ্যমে তাকে সুগঠিত ও নিয়ন্ত্রিত করা।

দুই. এই সব কিছুই হবে কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে, সুখ-ঐশ্বর্য্য অর্জন কিংবা পার্থিব কোনো উদ্দেশ্যে নয়।

এর রহস্য বোধ করি এটিই, (আল্লাহ ভাল জানেন) সঠিক পথের হেদায়াত এবং অভীষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর রাস্তা প্রাপ্তি এমন এক বিশাল অর্জন যা আল্লাহ তাআলা কেবল তাদেরই দান করেন যারা এর প্রত্যাশা করে, এবং চেষ্টা-সাধনার মাধ্যমে প্রত্যাশার সত্যতার প্রমাণ উপস্থাপন করে।

এ প্রবন্ধে আমরা কিছু কার্যকর পন্থা ও উপাদান অনুসন্ধানের চেষ্টা করব, আল্লাহর তাওফিকের পর যার মাধ্যমে বান্দা নিজ আত্মাকে একটি ঈমানি ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে সক্ষম হবে আর এতেই তার ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের শান্তি নিশ্চিত হবে।

সেসব উপাদানের কিছু আছে যা অর্জন করতে হবে, আর কিছু আছে যা বর্জন করতে হবে। চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গের কর্মপদ্ধতি পর্যালোচনা করে আমরা দেখতে পেয়েছি, বরণীয় বিষয়গুলো আলোচনা করার আগে বর্জনীয় বিষয়াদির আলোচনা অধিক কার্যকর। তাই সেই পদ্ধতিরই আমরা অনুসরণ করেছি।

আত্ম গঠন ক্ষেত্রে যেসব বিষয় পরিহার করতে হবে, তার কিছু হচ্ছে,

১- আত্মম্ভরিতা পরিহার ও আত্মার অদৃশ্যমান দোষত্রুটি ত্যাগ করা।

আর এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, মহান আল্লাহ আত্মম্ভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা দোষগুলোকে লোকচক্ষু থেকে আড়াল করে রেখেছেন, এটি বান্দার প্রতি তাঁর অপার করুণা। মানুষের মুখে প্রশাংসা শোনে মানবাত্মা যখন দম্ভ-অহঙ্কারে উদ্বেলিত হয় তখন এ ত্যাগের প্রয়োজনীয়তা আরো তীব্র  হয়।

আল্লামা ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন,

এসব ক্ষেত্রে আমি শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. থেকে অভূতপূর্ব আচরণ প্রত্যক্ষ করেছি, যা আর কারো মধ্যে দেখিনি। তিনি বেশি বেশি বলতেন,

ما لي شيئ ، ولا مني شيء ، ولا فيّ شيء.

আমার কিছু নেই, আমার পক্ষ থেকেও কিছু হয়নি, এবং আমার মাঝেও কিছু নেই।

তাঁর সম্মুখে প্রশংসা করা হলে বলতেন,

والله إني إلى الآن أجدد إسلامي كل وقت ، وما أسلمت بعدُ إسلاما جيدا.

আল্লাহর শপথ আমি এখনো প্রতি মুহূর্তে আমার ইসলামকে সংস্কার ও নবায়ন করি। এখনো পর্যন্ত আমি ভাল মানের ইসলাম গ্রহণ করতে পারিনি। [মাদারেজুস সালেকিন:১/৫২৪]

শ্রদ্ধেয় পাঠকবৃন্দ, শাইখুল ইসলামের ব্যক্তিত্বের বিশালতাটি কল্পনা করুন। স্মরণে আনুন তাঁর সংগ্রামময় সোনালী ইতিহাসকে। জীবনে শত শত বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি এবং প্রতিবারই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকারীদের হতাশ করে বিজয় মালা ছিনিয়ে এনেছেন। জীবদ্দশায় সূধী ও সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে কত প্রশংসা ও অভিবাদন পেয়েছেন তিনি। তাঁর শত্রুরা পর্যন্ত তাঁর ব্যক্তিত্ব, প্রতিভা ও জ্ঞানের বিশালতার কথা অকপটে স্বীকার করেছে বার বার। এবার নিজ সম্বন্ধে তাঁর উপরিউক্ত মন্তব্য সম্পর্কে বিচার করুন। চিন্তা করে দেখুন,  অহংকার ও আত্মম্ভরিতা ত্যাগ করে নিজকে কত সুন্দর ভাবে গঠন করতে পারলে এমন মন্তব্য করা যায়। জ্ঞান ও কর্মে উচ্চাসনে আরোহনের এটি একটি অন্যতম উপাদান।

হে মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ! যখন প্রমাণিত হল যে, আপনার সম্বন্ধে আপনিই সর্বাধিক জ্ঞাত। আপনার ভেতরে কি আছে সেটি আপনার চেয়ে অন্য কেউ বেশি জানে না। তাই আপনাকে সতর্ক হতে হবে যে, এমনও দিন আসবে যে লোকেরা আপনার প্রশংসা করবে বরং এমনও হতে পারে জনসমুদ্রের সামনে বাড়াবড়ি পর্যায়ের প্রশংসা হবে। পক্ষান্তরে এমন দিনও আসতে পারে যে, লোকেরা আপনার নিন্দা জ্ঞাপন করবে। দুর্নাম ছড়াবে। আপনার মর্যাদা হানি করবে। তবে আপনার বিশ্বাস থাকা উচিত, প্রশংসা বা নিন্দা কোনটাই কেয়ামতের দিন আপনার পাল্লা ভারি করবে না। বরং আপনার আভ্যন্তরীণ অবস্থা, মানসিক পঙ্কিলতা, অন্তরের সুপ্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি সম্বন্ধে কিয়ামতে আল্লাহ আপনার হিসান নেবেন। সুতরং মানুষ আপনাকে কেমন জ্ঞান করল সেটি বিবেচ্য নয়। আপনি কেমন, কেমন আপনার অন্তর সেটিই বিবেচ্য। তাই লোকেরা আপনাকে সম্মান করে, এর উপর ভিত্তি করে আপনিও নিজেকে সম্মাণিত জ্ঞান করা শুরু করবেন না। মানুষ যতই আপনার প্রশংসা করুক, বাস্তবতা কখনো বি:স্মৃত হবেন না। মানুষের প্রশংসার উপর আপনার বিচার হবে এমন আত্মপ্রবঞ্চনায় পতিত হবেন না।

এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবন হাজম রহ.-এর একটি কথা বড়ই চমৎকার, নিজ দোষ-ত্রুটি গণনা করে তার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়ে তিনি মন্তব্যটি করেছিলেন।

বলেছেন, আমার দোষের মাঝে একটি ছিল ‘তীব্র আত্মম্ভরিতা’। আমার বিবেক আত্মার সেসব দোষ সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত হয়ে তার সাথে বিতর্কে জয়ী হয়। আর তাকে চরমভাবে পরাভূত করে ধরাশায়ী করেফেলে। ফলশ্রুতিতে আত্মম্ভরিতা সমূলে বিদায় নেয়। আল্লাহর শুকরিয়া, এমনভাবেই বিদায় নেয় যে, সামান্যতম চিহ্ন পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকেনি। এরপর থেকে আত্মা নিজেকে ছোট জ্ঞান করে বিনয়ী আচরণ করতে শুরু করে। [মুদাওয়াতুন নুফূস:১/৩৫৪]

সালাফে সালিহীন রহ. দীন সম্বন্ধে চূড়ান্ত পর্যায়ের জ্ঞান ও পূর্নাঙ্গ ধর্মানুরাগের কারণে খ্যাতি ও প্রশংসা কুড়ানোর মজলিসকে সতর্কতার সাথে এড়িয়ে চলতেন।

আল্লামা ইবনুল মোবারক রহ. বলেন, আমাকে সুফিয়ান (রহ.) বলেছেন, খ্যাতির অনুরাগ থেকে সতর্ক থাক। যাদের কাছেই আমি গিয়েছি প্রত্যেকেই খ্যাতির লোভ সম্বন্ধে আমাকে সতর্ক করেছেন।

আল্লামা বিশর আল হাফি রহ. বলেন, যার ভেতর খ্যাতির লোভ আছে তার মাঝে আল্লাহভীতি ও তাকওয়া নেই।

তাইতো দাওয়াত কর্মীদের জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই পিচ্ছিল জায়গার ভয়াবহতা হতে সতর্ক থাকা। এবং দাওয়াত কর্মে সৎ উদ্দেশ্য লালন করা। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের জন্য এই বিধান প্রজোয্য।

এই উদ্দেশ্য পতনের সবচে বড় নিদর্শন হচ্ছে, দায়ীর অন্তরে ভক্ত ও অনুরাগী বানানো এবং সম্মান ও সমাদর প্রাপ্তির স্পৃহা জাগ্রত হওয়া।

২- অতিরিক্ত মেলা-মেশা ত্যাগ করে নির্জনতা ও একাকীত্ব অবলম্বন করা।

আল্লামা ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন, চারটি কাজ প্রয়োজনের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে এর মাধ্যমে অন্তর কঠোর ও শক্ত হয়ে যায়: আহার, নিদ্রা, কথাবার্তা ও মেলামেশা। [আল-ফাওয়ায়েদ:পৃ ৯৭]

এসব কাজ বিনা প্রয়োজনে কিংবা অধিকহারে করতে থাকলে অন্তর শক্ত হয়ে মরে যায়।

তিনি সত্যই বলেছেন, অন্তরের শুদ্ধতা ও আত্মার কল্যাণের জন্য নির্জনতার চেয়ে অধিক ফলদায়ক আর কিছু নেই। তবে এই নির্জনতা ও একাকীত্ব হবে ন্যায়সঙ্গত ও পরিমিত। কর্তব্য সম্পাদনের কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কিংবা দায়িত্ব এড়ানোর উদ্দেশ্যে নয়।

একজন দায়ী ও মুরুব্বির জন্য -আলোচিত বৈশিষ্ট্য মন্ডিত- নির্জনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্জনতা দায়ীকে নিজের হাকিকত সম্বন্ধে অনুধাবন করার ফুরসত দেয়। মানুষের শোরগোল ও তার বিরূপ প্রভাব-প্রতিক্রিয়া হতে মুক্ত থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

قُلْ إِنَّمَا أَعِظُكُمْ بِوَاحِدَةٍ أَنْ تَقُومُوا لِلَّهِ مَثْنَى وَفُرَادَى ثُمَّ تَتَفَكَّرُوا مَا بِصَاحِبِكُمْ مِنْ جِنَّةٍ ﴿46﴾

বল, ‘আমি তো তোমাদেরকে একটি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছি, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু’জন অথবা এক একজন করে দাঁড়িয়ে যাও, অতঃপর চিন্তা করে দেখ, তোমাদের সাথীর মধ্যে কোন পাগলামী নেই। {সূরা সাবা:৪৬}

এ আয়াতে মহান আল্লাহ কোরাইশ কাফের ও যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে তাদেরকে মানুষের ভীড় ও শোরগোল থেকে পৃথক হয়ে একাকী কিংবা দুয়েকজন সাথির সাথে নির্জনে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন। এতে তাদের নিকট সত্য প্রকাশিত হবে। এর কারণ হচ্ছে, যে ব্যক্তি সার্বক্ষণিক মানুষের সাথে মেলামেশায় মত্ত থাকে আস্তে আস্তে তার চিন্তাশক্তি লোপ পেতে থাকে। এবং পানি যেমন পঁচে যায় তেমনি তার বোধ-বুদ্ধিতেও পঁচন ধরে। এভাবে চলতে চলতে এক সময় চিন্তা শূণ্য হয়ে যায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অস্থির এবং জটিল মুহূর্তের কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

ফায়েদা:

নুয়াইম বিন হাম্মাদ রহ. বলেছেন, আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারক রহ. তাঁর অধিকাংশ সময় ঘরে বসেই কাটাতেন। তাঁকে বলা হল, এতে আপনি একাকীত্ববোধ করেন না? উত্তরে তিনি বলেছেন, একাকীত্ববোধ করব কেন, আমিতো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবিদের সাথে সময় অতিবাহিত করি।

আল্লামা ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন, শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ.-এর একজন নিকটাত্মীয় আমাকে বলেছেন, শায়খ তাঁর [বিপদ সঙ্কুল, সংগ্রামী] জীবনের প্রথম দিকে আপতিত বিপদের তীব্রতার কারণে কিছু সময় একাকীত্বে কাটানোর জন্য মাঝে মাঝে নির্জন প্রান্তরে বেরিয়ে পড়তেন। একদিন আমি তাঁর পিছু নিয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করেছি, প্রান্তরে গিয়ে তিনি দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন। এবং লায়লার মজনুকে নিয়ে লেখা বিখ্যাত এক কবির নিম্নোক্ত পংক্তি নিজেকে উদ্দেশ করে আবৃত্তি করলেন,

وأخرج من بين البيوت  لعلني                                  أحدث عنك النفس بالسر خاليا.

জনপদ থেকে বের হয়ে আসি, তোমায় নিয়ে নির্জনে নিজের সাথে কিছু বলার আশায়।

নিশ্চয় এইটি বড়ই চমৎকার একটি দৃশ্য। আপন স্রষ্টার তরে বান্দার অনুরাগ-ভালবাসা এমন স্তরে পৌঁছলে নির্জনে তাঁর সম্মুকে নিজ অন্যায়-অপরাধ স্বীকার করে তাঁর সান্নিধ্য অন্বেষণ করে। জিকির-স্মরণের মাধ্যমে তাঁর ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করে। আপন বৈশিষ্ট্যে সম্মুজ্জ্বল এই নির্জনতাগুলো যুগে যুগে উম্মতকে রব্বানি ও হক্কানি বহু নেতা উপহার দিয়েছে। যারা উম্মতকে তাদের কর্তব্য পালন ও রবের প্রভূত্ব প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়ে তাদের শান বুলন্দ করণে নিজেদেরকে শতভাগ উজাড় করে নিরত রেখেছেন আমৃত্যু। আর নিজ স্বার্থ ও আত্মচাহিদা পূরণ করা থেকে মুক্ত থেকেছেন পূর্ণ সফলতার সাথে।

এখান থেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অতিভারি বাণী ধারণ এবং তার জন্য ত্যাগ ও কোরবানি করার প্রস্তুতি গ্রহণ কল্পে হেরা গুহায় আপন রবের সান্নিধ্যে নির্জনতা অবলম্বনের তাৎপর্য বুঝে আসে।

আল্লামা ইবনুল কাইয়িম রহ. মেলামেশাকে চমৎকার দুইটি ভাগে ভাগ করেছেন। বলেছেন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সম্মেলন দুই প্রকার।

এক. সময় কাটানো ও অন্তরের বিনোদনের জন্য সম্মেলন। এ জাতীয় সম্মেলনে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি। সর্ব নিম্নস্তরের ক্ষতি হচ্ছে, এতে সময় নষ্ট হয় ও অন্তর বিনষ্ট হয়ে যায়।

দুই. নেক কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা, আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকারের উদ্দেশে সম্মেলন। এ জাতীয় সম্মেলন জীবনের একটি লাভ জনক ও বিশাল প্রাপ্তি। তবে এতে তিনটি আশংকা রয়েছে।

(ক) একে অপরকে দেখানোর জন্য নিজেকে শোভিত করা।

(খ) প্রয়োজনের অতিরিক্ত মেলামেলা ও গল্প করা।

(গ) সম্মেলন ও আড্ডা অভ্যাসে পরিণত হওয়া, যা উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করবে।

বরণীয় বিষয়াদি

আত্মগঠন ঈমানি অবকাঠামোয় সুসম্পন্ন হবার নিমিত্তে আমরা এখানি চারটি বিষয় উল্লেখ করব। বস্তুচতুষ্টয়ের অনুবর্তনের মাধ্যমে আত্মগঠন ঈমানি চেতনায় সমৃদ্ধ হবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। বিষয়গুলো হলো,

১. গোপনীয়তা রক্ষা করে অধিক পরিমাণে আমল করে যাওয়া। আর লোক চক্ষুর অন্তরালে সম্পাদিত আমলই আল্লাহর মুহব্বতের সত্যতা প্রমাণ করে। একজন মুসলমানের যে গুণটি অবধারিতভাবে থাকতে হয় অর্থাৎ ইখলাস। গোপনীয়তার সাথে সম্পাদিত আমল সেই ইখলাসের বিদ্যমানতার পরিচায়ক। জনৈক মনীষী বলেন, গোপন আমলের চেয়ে নফসের উপর অধিক ভারি ও কষ্টকর আর কিছু নেই। কারণ এতে তার কোনো অংশ থাকে না।

গোপন আমলের অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন,

ক. সকল নেক আমলের ক্ষেত্রে যে ব্যক্তির অবস্থা উপরে বর্ণিত ইখলাস ও আল্লাহর মুহব্বতের প্রমাণের মানদন্ডে উত্তীর্ণ। তার ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলা যায়, দৃঢ়তা ও অবিচলতার বিরাট এক পুঁজি সঞ্চয় করে নিয়েছে সে। যা বিশেষ করে বিপদ ও মুসিবতের দিনগুলোতে বিশাল কাজ দেবে।

খ. গোপন আমলকে মানদন্ড ও পাল্লা বিবেচনা করা হয়, যে পাল্লার মাধ্যমে বান্দা তার আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার রাস্তার বিশুদ্ধতাকে পরিমাপ করতে পারে। সুতরাং একজন মুসলিম যখন বাহ্যিক আমলের ক্ষেত্রে নিজের মাঝে উদ্যম ও শক্তির উপস্থিতি দেখতে পায়। আর এর বিপরীতে গোপন আমলের ক্ষেত্রে অলসতা ও দুর্বলতা অনূভব করে, তাহলে তাকে সতর্ক হয়ে যেতে হবে এবং নিজ নফসকে অভিযুক্ত করে শুধরানোর রাস্তা বের করতে হবে। এবং তাকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে, যেই রাস্তায় সে চলমান তা বিচ্ছুতি ও বিপদ হতে পরিপূর্ণ নিরাপদ নয়।

গ. অন্তরে ইখলাসের বৃক্ষকে জীবন্ত করা। আর ঐ বৃক্ষকে উন্নত, বৃদ্ধি, শক্তিশালী ও সজীব করার ক্ষেত্রে গোপন আমলের বরাবর আর কোনো কিছু নেই।

২. ইহলৌকিক ও পারলৌকিক যাবতীয় প্রয়োজনের ক্ষেত্রে আল্লাহর আশ্রয়ের দ্বারস্থ হওয়া ও তাঁর সম্মুখে নিজেকে নিক্ষিপ্ত করার ব্যাপারে নিজ আত্মাকে অভ্যস্ত করে তোলা। বান্দার এ ছাড়া কোনো বিকল্প ব্যবস্থা যে নেই , এটি দিবালোকের মত সত্য। তবে অত্যন্ত পরিতাপের সাথে বলতে হয়, সাধারণ মানুষ বরং বিশেষ ব্যক্তিবর্গরাও এ বিষয়ে খুবই গাফেল ও অমনযোগী। বিপদে পতিত হলে তাদের দেখতে পাবেন আল্লাহর দরজা ব্যতীত সকল দরজায় কড়া নাড়তে। সকল জায়গায় ধর্ণা দিবে কেবল আল্লাহর নিকট আসবে না। আর তাঁর দ্বারস্থ যদি হয়ও তবে মনে অনেক সংশয় নিয়ে, বিপদ দূর হবে এমন বিশ্বাস মনে আনতে পারে না।

অথচ মানুষের উচিত, বেশি বেশি আল্লাহর দ্বারস্থ হওয়া। তাঁর কাছে নিজেকে বার বার সমর্পণ করা। এবং এই ব্যাপারে নিজেকে ছোট মনে না করা, হীনমন্যতায় না ভোগা। কারণ আল্লাহ তাআলা পরম দাতা, অতীশয় দয়ালু। প্রার্থনাকারীর কোনো প্রার্থনাই তাঁর নিকট ভারী নয়। বান্দা যদি প্রার্থনাতে আন্তরিক সততার পরিচয় দেয়। একেবারে উপায়হীন অবস্থায় পৌঁছে যায়। এবং এই বিশ্বাস পোষণ করে যে, কেবল আল্লাহ তাআলাই বিপদ দূর করতে পারেন, তিনি ব্যতীত আর কারো ক্ষমতা নেই। তখনই কেবল সেই মহা ক্ষমতাধর আল্লাহর কাছ থেকে স্বস্তি ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে যার হাতে সব কিছু নিয়ন্ত্রিত হয়। যার নিমিত্তে সব কিছু সম্পাদিত হয়।

আল্লামা ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন, বিতাড়িত হলেও দরজায় অবস্থান করাকে লজ্জার মনে করবে না। প্রতাখ্যাত হলেও ওজর-আপত্তি করাকে বাদ দিবে না। দরজা যদি গৃহীতদের তরে উন্মুক্ত করা হয় তাহলে তুমি মিথ্যুকদের ন্যায় ভীড় করবে এবং অযাচিত-অবাঞ্চিতদের ন্যায় প্রবেশ করবে। [আল-ফাওয়ায়েদ, পৃ: ৫১]

সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে বান্দার বন্ধন যেসব জিনিসের মাধ্যমে দৃঢ় হয় তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে, আল্লাহর আসমা ও সিফাত সম্বন্ধে ধারণা লাভ করা। সেসব আসমা ও সিফাতের অর্থ সম্বন্ধে গভীর চিন্তা করা। তার প্রভাব ও আনুষঙ্গিকতার প্রতি দৃষ্টিপাত করা। এর মাঝে বান্দার সাথে সৃষ্টিকুলের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে মহান সৃষ্টাকর্তা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপিত হবার ক্ষেত্রে দারুন প্রভাব রয়েছে।

ফায়েদা:

আল্লামা ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন, চিন্তাশীল ও সত্যনিষ্ট সালিকিনদের একটি বিশুদ্ধ অভিজ্ঞতা হচ্ছে, যে ব্যক্তি সব সময় অধিক পরিমাণে يا حيّ يا قيوم لا إله إلا أنت  পাঠ করবে, এটি তার অন্তর ও বিবেককে জীবন্ত করে তুলবে। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রহ. এ কালিমাটির প্রতি তীব্রভাবে আকর্ষণ বোধ করতেন। সব সময় পড়ার মাঝে থাকতেন। তিনি আমাকে একদিন বললেন, অন্তর জীবন্ত করণে এ কালিমা দুইটির বিরাট প্রভাব রয়েছে। [আল-ওয়াবিলুস সায়ব, পৃ. ৬২]

৩. সার্বক্ষণিক ও সর্বাবস্থায় জিকিরের উপর থাকা। জিকিরকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলা যে, একটি মুহূর্তও যেন জিকির বিহীন অতিবাহিত না হয়। জিকির অন্তরের প্রশান্তি আনয়ন করে। অন্তরে দৃঢ়তা ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ ﴿28﴾

জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির  দ্বারাই অন্তরসমূহ  প্রশান্ত হয়। (সূরা রা’দ:২৮)

বরং জিকিরকে বিপদ-মুসিবতে দৃঢ় থাকার সবচে বড় মাধ্যম হিসাবে গণ্য করা হয়। আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿45﴾

হে মুমিনগণ, যখন তোমরা কোন দলের মুখোমুখি হও, তখন অবিচল থাক, আর অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির কর, যাতে তোমরা সফল হও। (সূরা আনফাল:৪৫)

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যম রহ. বলেন, জিকির উপকারিতার মাঝে একটি হচ্ছে, জিকির অন্তর ও আত্মার শক্তি। বান্দা যদি জিকির শূন্য হয়ে যায় তাহলে সে প্রাণহীন শরীর সদৃশ হয়ে যাবে। (তিনি বলেন) একবার আমি শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার নিকট গেলাম, তিনি ফজরের সালাম আদায় করে জিকিরে বসেছেন। প্রায় অর্ধদিন আল্লাহর জিকিরে অতিবাহিত করার পর আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বললেন। এটি আমার দিনের খাবার। যদি খাবার গ্রহণ না করি তাহলে আমার শক্তি পড়ে যাবে। [ অথবা এর কাছাকাছি কোনো কথা বলেছিলেন]

একদিন আমাকে বললেন, আমি কেবল আত্মাকে বিশ্রাম দেয়ার জন্যই জিকির থেকে সামান্য সময় বিরত থাকি এবং এর মাধ্যমে নতুন আরেকটি জিকিরের প্রস্তুতি গ্রহণ করি। [ অথবা এর কাছাকাছি কোনো কথা বলেছিলেন]

৪. সারা জীবনের লক্ষ্য স্থির করে তার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। এবং খুব সুক্ষ্মতার সাথে তা সম্পন্ন করা। এর মাধ্যমে আমরা নেতিবাচক ও অহেতুক কর্মকান্ড থেকে বেঁচে থাকতে পারব আর সুশৃংখল ও ইতিবাচক কাজের প্রতি অধিক মনোযোগী হতে পারব। পাশাপাশি সময়ের মূল্য অনুধাবন করতে পারব।

আত্মা যদি পরিকল্পিত লক্ষ্য ভিন্ন অন্য কোনো দিকে ধাবিত না হয়। গৃহীত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েই সার্বক্ষণিক ব্যস্ত থাকতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। আর তা সাধন করাই একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান হয় তাহলে সময়ের মূল্য সম্বন্ধে মনে এক অনুভূতির সৃষ্টি হবে। উদ্দেশ্যহীন কাজে দীর্ঘ সময় নষ্ট হওয়ার কারণে একটি অস্থিরতার সৃষ্টি হবে। অহেতুক মজলিসের প্রতি সৃষ্টি হবে তীব্র ঘৃণা আর ভাল ও কল্যাণ মূলক মজলিসের প্রতি প্রচন্ড আকর্ষণ। এটি বাস্তবিক পক্ষেই অতি উচ্চ মানের একটি স্তর, যা অর্জন করার প্রতি আমাদের সকলেরই সচেষ্ট হওয়া উচিত।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে আত্মা গঠনে সচেষ্ট হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন

 

সমাপ্ত

জীবনে সাফল্য লাভের উপায়

$
0
0

 লেখক : শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ্‌ আল-মুনাজ্‌জিদ   ।   ভাষান্তর ও সম্পাদনা : আব্‌দ আল-আহাদ

179

মানসিক প্রশান্তি, হৃদয়ের পরিতৃপ্তি, অগাধ সুখ, সকল প্রকার দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তি—এগুলো ছাড়া আর কী খুঁজি আমরা? মানুষ তো এগুলোই খোঁজে। প্রকৃতপক্ষে সুখী আর পরম আনন্দঘন সুন্দর একটা মানব জীবনের কথা ভাবলে এসবের বাইরে আর চাওয়ার কিছু থাকেনা। এসব অর্জনের জন্য কেউবা ধর্মীয় উপায় অবলম্বন করেন। আবার কেউ ধর্মের তোয়াক্কা না করেই কিছু বাস্তবিক পন্থা অবলম্বন করে তা অর্জন করতে চান। তবে কেবলমাত্র একজন মু’মিন ব্যক্তিই এ’দুয়ের সফল সমন্বয় ঘটাতে পারেন যিনি নিজেকে তাঁর স্রষ্টার কাছে সমর্পণ করে দিয়েছেন। অন্য কোন উপায়ে এসবের আংশিক অর্জন সম্ভব হলেও হতে পারে। তবে পরিপূর্ণ মানসিক প্রশান্তি, হৃদয়য়ের পরিতৃপ্তি, অকৃত্রিম সুখ, সব রকম দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব কেবলমাত্র নিজেকে স্রষ্টার কাছে সমর্পণ করার মাধ্যমেই। এতোদ্ভিন্ন অন্য কোন পথ আর নেই। অনেকেই আছেন যারা সেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেয়ে সুখে শান্তিতে বেঁচে আছেন। অনেকেই আবার ব্যর্থ হয়ে দুঃখকষ্টে দিন পার করছেন। অনেকেই আছেন এ দু’দলের মাঝামাঝি পর্যায়ে; এরা নিজ প্রচেষ্টা অনুযায়ী ফল পেয়েছেন। প্রশ্ন হল, কীভাবে সেই সাফল্য অর্জন সম্ভব? চলুন দেখে নিই, কীভাবে আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেই সাফল্য অর্জিত হতে পারে—

{১} ঈমান এবং সৎ কর্ম, আলোচ্য সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে মৌলিক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ঈমান এবং সৎ কর্ম। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন (অর্থের ব্যাখ্যা):

“মু’মিন হয়ে পুরুষ ও নারীর যে কেউ সৎ কর্ম করবে, তাকে আমি নিশ্চয়ই আনন্দময় জীবন দান করবো এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করবো।” [সূরা নাহল; ১৬:৯৭]

আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন আমাদেরকে জানিয়ে দিলেন যে, যদি কেউ (হউক সে পুরুষ অথবা নারী) ঈমান আনার সাথে সাথে সৎ কর্ম করে তাহলে তিনি তাকে ইহকাল এবং পরকাল উভয় জগতেই আনন্দময় জীবন আর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করবেন। উভয় জগতেই আনন্দময় জীবন আর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দানের উদ্দেশ্যটি খুবই স্পষ্ট এখানে। আর তা হল আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন এর প্রতি আন্তরিক, অকপট, অকৃত্রিম বিশ্বাস। এমন বিশ্বাস যা বিশ্বাস স্থাপনকারীকে সৎ কর্মশীল হতে উদ্বুদ্ধ করে, তাকে ইহকালে সরল সঠিক পথ দেখায় আর জান্নাতের পথে পরিচালিত করে। তিনি সকল কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে তাঁর স্রষ্টা প্রদত্ত বিধান ও দিকনির্দেশনা মেনে চলেন। জীবনে বিপদ-আপদ, সুখ-দুঃখ যা-ই আসুক না কেন, স্রষ্টা প্রদত্ত দিকনির্দেশনার অনুসরণ থেকে তিনি কখনই বিরত হন না। জীবনে যা-ই ঘটুক, সবকিছুকেই সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিয়ে আল্লাহ্‌কে ধন্যবাদ দেন তিনি। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন কর্তৃক নির্ধারিত সিদ্ধান্তের প্রতি তাঁর অকুণ্ঠ সমর্থন তাঁর মাধ্যে এমন এক চেতনার উন্মেষ ঘটায় যা তাকে আরো সৎকর্মশীল করে তোলে। তাঁর কৃতজ্ঞতা বোধ প্রতিদান প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। তিনি যতদূর সম্ভব চেষ্টা করেন বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট থেকে বেচে থাকার। তবে বিপদ যদি চলেই আসে, তিনি সহিষ্ণু হন। বিপদে ধৈর্য ধারন করে পরিস্থিতি সামাল দেন তিনি। বিপদ আসে তাঁর কাছে আশীর্বাদ হয়ে। তাকে বিপদে ধৈর্যশীল হতে শেখায়। এভাবেই ধৈর্যশীলতা ছোটখাটো বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্টের আড়ালে একজন মু’মিনের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে। ফলে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ আর তাঁর পক্ষ থেকে প্রতিদান পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সহীহ্‌ মুসলিমে প্রিয় নবীর (সা) একটি হাদীসে এমনটি বলা হয়েছে—

“মু’মিনের অবস্থা কতইনা চমৎকার! তার সব অবস্থাতেই কল্যাণ থাকে। এটি শুধু মু’মিনেরই বৈশিষ্ট্য যে, যখন সে আনন্দে থাকে, তখন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এবং যখন সে কষ্টে থাকে, তখন সবর করে। আর এ উভয় অবস্থাই তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। [সহীহ্‌ মুসলিম; হাদীস নং-২৯৯৯]

প্রিয় নবী (সা) বলেছেন, একজন মু’মিনের জীবনে ভালমন্দ যাই ঘটুক না কেন, সর্বাবস্থায় সে তাঁর প্রতিটি কর্মের জন্য প্রতিদান পেয়ে থাকে যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

{২} দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ইত্যাদি থেকে মুক্তির আরেকটি উপায় হল মানুষের প্রতি সদয় আচরণ করা। ব্যক্তি জীবনে অনৈতিক হয়েও কেউ মানুষের সাথে সদয় আচরণ করতে পারে। একজন ধর্মহীন নাস্তিক হয়েও মানুষের সাথে কথা ও কর্মে সদয় এবং ন্যায় নিষ্ঠ হতে পারে। কিন্তু একজন ঈমানদারের বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। তিনি অন্যের প্রতি সদয় আচরণ করেন আল্লাহ্‌র রাব্বুল ‘আলামীনের পক্ষ থেকে প্রতিদান পাওয়ার আশায়। আল্লাহ্‌র প্রতি তাঁর আন্তরিক বিশ্বাস তাকে মানুষের প্রতি সদয় হওয়ার শিক্ষা দেয়। আল্লাহ্‌র প্রতি তাঁর অকপট বিশ্বাস, আর প্রতিদান পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তাকে আরো বেশি সৎকর্মশীল করে তোলে। ফলে আল্লাহ্‌ তাঁর চলার পথকে সহজ করে দেন। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন (অর্থের ব্যাখ্যা): 

তাদের অধিকাংশ গুপ্ত পরামর্শে কোন মঙ্গল নিহিত থাকে না, হ্যাঁ, তবে যে ব্যক্তি এরূপ যে দান অথবা কোন সৎ কাজ কিংবা লোকের মধ্যে পরস্পর সন্ধি করে দেবার উৎসাহ প্রদান করে এবং যে আল্লাহ্‌র প্রসন্নতা সন্ধানের জন্যে ঐরূপ করে, আমি তাকে মহান বিনিময় প্রদান করবো।” [সূরা আন-নিসা; ৪:১১৪]

উক্ত আয়াতে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন যে মহান বিনিময়ের কথা বলেছেন তারই একটা অংশ হল দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ইত্যাদি থেকে মুক্তি।

{৩} দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ইত্যাদির আরেকটি কারন হল স্নায়বিক উত্তেজনা এবং বিভিন্ন বিশৃঙ্খল ভাবনা যা সবসময় মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। এর থেকে মুক্তির উপায় হল নিজেকে সবসময় ভাল কাজে ব্যস্ত রাখা বা কল্যাণকর জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়োগ করা। এতে করে মনের ভেতর কুচিন্তা আর ঠাঁই পাবেনা। ফলে ভাবনার জগতেও পরিবর্তন আসবে। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা সৃষ্টিকারী ভাবনাগুলো মন থেকে বিদায় নেবে। মনে সুখ ফিরে আসবে। মনোবল দৃঢ় হবে। নিজেকে এমন কাজেই ব্যস্ত রাখা উচিৎ যে কাজ নিজের কাছে উপভোগ্য মনে হয়, যে কাজ করে আনন্দ পাওয়া যায়। তাহলেই কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আশা করা যায়। তবে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনই সবচেয়ে ভাল জানেন।

{৪} উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি থেকে রেহাই পাওয়ার আরো একটি পথ আছে। আর তা হল অতীতে কি হয়েছে বা কি হয়নি, ভবিষ্যতে কি হবে, এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে শুধু বর্তমান মুহূর্তগুলোকে কি করে অর্থপূর্ণ এবং সার্থক করে তোলা যায় তার প্রতি অধিক মনোযোগ দেয়া। আর এ কারণেই প্রিয় নবী (সা) আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের কাছে দোয়া করতেন যেন “অতীতে কি হয়েছে বা ভবিষ্যতে কি হবে” এধরনের ভাবনা বা দুশ্চিন্তা তাঁর মধ্যে সৃষ্টি না হয়। কারন অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ, দুইয়ের কোনটিই মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন বিষয় নয়। তাই এই মুহূর্তে কি করছি, ঠিক করছি না ভুল করছি, এটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এভাবে যদি বর্তমানকে নিয়ে ভাবা যায় তাহলে বর্তমানসহ ভবিষ্যতও সুন্দর হয়ে উঠবে। মনে দুশ্চিন্তাও আর ঠাঁই পাবেনা। প্রিয় নবী (সা) যখনই নিজে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের কাছে কোন বিষয়ে দোয়া করতেন কিংবা তাঁর সাহাবীদের (রা) কোন দোয়া শিক্ষা দিতেন তখন আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের অনুগ্রহ লাভের আশা করার পাশাপাশি তা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জোর তাগিদ দিতেন। দোয়া করার পাশাপাশি অবশ্যই সাফল্য অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে।  প্রত্যেকের উচিৎ এমন কিছু অর্জনের চেষ্টা করা যা ইহকাল এবং পরকাল, উভয় জগতের জন্যই কল্যাণ বয়ে আনে। আর এজন্য চেষ্টা করার পাশাপাশি আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের কাছে সাহায্য চেয়ে দোয়া করতে হবে। প্রিয় নবী (সা) বলেছেন—

যা কল্যাণকর তাই অর্জনের চেষ্টা কর, এজন্য আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য চাও এবং নিরাশ হইয়োনা। যদি খারাপ কিছু ঘটে তাহলে এমনটি বোলোনা যে, যদি এমন এমন করতাম তো এমন এমন হতো। বরং তুমি বল যে, আল্লাহ্ যা নির্ধারণ করেছেন ও চেয়েছেন তাই করেছেন, কারণ যদি কথাটি শায়তানের কর্ম খুলে দেয়” [সহীহ্‌ মুসলিম]

প্রিয় নবী (সা) দেখিয়েছেন যে ভাল কিছু অর্জন করতে হলে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের  সাহায্য এবং প্রচেষ্টা দুটিই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর সাহায্য ছাড়া শুধু প্রচেষ্টা দিয়ে কোন কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। আবার ব্যর্থতার ক্ষেত্রে নিরাশারও কোন অবকাশ নেই। অতীতে যা হওয়ার হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে যা হবে তাও আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের অলঙ্ঘনীয় ইচ্ছা অনুযায়ী হবে। প্রিয় নবী (সা) যে কোন বিষয় সংঘটনের ক্ষেত্রে দুটি অবস্থার কথা তুলে ধরেছেন—

  • (ক) প্রথম অবস্থাটি এরকম যে, হয়ত কেউ একটা কিছু অর্জনের জন্য চেষ্টা করছে অথবা কোন কিছু থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে হয়ত সে সফলও হচ্ছে। এক্ষেত্রে বুঝতে হবে যে প্রাপ্ত সাফল্য আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের সাহায্য ছাড়া সম্ভব হয়নি। এই ধরনের সম্ভাব্য সাফল্যের জন্য আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের কাছে অবশ্যই সাহায্য চাইতে হবে। 
  • (খ) আবার কিছু বিষয় আছে যেগুলোর ক্ষেত্রে হাজার চেষ্টা চালিয়েও সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। সে সব ক্ষেত্রে মনের শান্তি বিনষ্ট না করে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের ইচ্ছার কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে।

উক্ত বিষয়টিকে মনে রেখে জীবন যাপন করলে জীবনে কখনও অতৃপ্তি বা অপ্রাপ্তিবোধ আর পীড়া দেবে না। দুশ্চিন্তা কিংবা মানসিক অতৃপ্তিও আর থাকবে না।

{৫} মানসিক পরিতৃপ্তি এবং হৃদয়ের প্রশান্তি লাভের অন্যতম উপায় হল আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনকে স্মরণ করা। মহান প্রতিপালক আল্লাহ্‌  রাব্বুল ‘আলামীন কে স্মরণের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি এবং আন্তরিক পরিতৃপ্তি অর্জিত হয়। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন—

“নিশ্চয় আল্লাহ্‌র যিক্‌র-এ অন্তর প্রশান্ত হয়” [সূরা আল রা’দ; ১৩:২৮]

আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন এর স্মরণ (যিক্‌র করা) আমদের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলে। তাঁকে স্মরণ করার মাধ্যমেও  আমরা  প্রতিদানের আশা করি যা আমাদেরকে আরো বেশী প্রতিদান লাভের বাসনাকে বাড়িয়ে দেয়।

{৬} উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি থেকে রেহাই পাওয়া এবং সুখি হওয়ার আরেকটি উপায় হলো দুশ্চিন্তার কারণগুলোকে দূর করার চেষ্টা করা এবং যা কিছু সুখ বয়ে আনে তা অর্জনের চেষ্টা করা। এক্ষেত্রে অতীতের পীড়াদায়ক ঘটনাগুলোকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে অতীতকে ভেবে দুঃখ পাওয়া সময়ের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। তাই এসব বিষয়ে ভাবনা চিন্তা বাদ দেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে কি হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। ভবিষ্যৎ ভেবে উদ্বিগ্ন হওয়া একেবারেই অমূলক। কারন ভবিষ্যৎ হল অজ্ঞাত একটি বিষয়। ভবিষ্যতে ভাল হবে,  না মন্দ হবে তা কেউই আগাম বলতে পারেনা। বিষয়টি সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের হাতেই ন্যাস্ত। আমরা তাঁর বান্দা হিসেবে যা করতে পারি তা হল ভাল কিছুর জন্য চেষ্টা করা আর মন্দকে দূরে সরিয়ে রাখা। অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে, ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে যদি নিজ প্রতিপালকের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস এবং আস্থা রেখে অবস্থার উন্নয়নে চেষ্টা করা হয় তাহলে মনে প্রশান্তি বিরাজ করবে এবং উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি থেকেও পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার অন্যতম কার্যকর উপায় হল প্রিয় নবী (সা) এর নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করা। রাসূল (সা) ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা থেকে নিম্নোক্ত দোয়াটির মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তা’আলার কাছে সাহায্য চাইতেন—

“আল্লাহুম্মা আস্‌লিহ্‌লী দ্বীনী আল্লাযী হুয়া ‘ইস্‌মাতু আমরি, ওয়া আস্‌লিহ্‌লী দুন্‌ইয়া-ইয়া আল্লাতী ফীহা মা’আশি, ওয়া আস্‌লিহ্‌লী আ-খিরাতি আল্লাতী ইলাইহা মা’আদি, ওয়াজ’আল আল হায়াতা জিয়াদাতাল্লি ফী কুল্লি খাইর, ওয়াল মাউতা রাহাতাল্লি মিন কুল্লী শার্‌রি।”

অর্থঃ হে আল্লাহ্‌! তুমি আমার দ্বীনকে সংশোধন করে দাও যা আমার জীবনের ভিত্তি এবং আমার পার্থিব কাজকর্মকেও সংশোধন করে দাও যার মধ্যে রয়েছে আমার জীবিকা এবং আমাকে দাও সর্বোত্তম সমৃদ্ধি আখিরাতে যেখানে আমার প্রত্যাবর্তন। আমার জীবনকে পুণ্য অর্জনের মাধ্যম বানিয়ে দাও এবং আমার মৃত্যুকে কর সমস্ত মন্দ থেকে বেঁচে যাওয়ার অবকাশ। [সহীহ্‌ মুসলিম; হাদিস নং-২৭২০]

  তিনি (সা) আরও বলতেন—

“আল্লাহুম্মা রাহ্‌মাতাকা আরজু ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি তারফাতা ‘আইনিন ওয়া আসলিহ্‌লি শা’নি কুল্লাহু, লা ইলাহা ইল্লা আনতা।”

 

অর্থঃ হে আল্লাহ্‌! আমি তোমার করুণা কামনা করি। তাই এক মুহূর্তের জন্যেও তুমি আমাকে আমার নিজের উপর ছেড়ে দিওনা। এবং তুমি আমার সকল কাজকর্মকে সংশোধন করে দাও। তুমি ছাড়া সত্য এবং ইবাদাতের যোগ্য কোন ইলাহ্‌ নেই। [আবু দাউদ; হাদিস নং- ৫০৯০, ইসনাদ সহীহ্‌; আল আলবানী তাঁর সহীহ্‌ আল কালিম আল তইয়্যেব (পৃষ্ঠা- ৪৯) গ্রন্থে হাদিসটিকে হাসান বলে উল্লেখ করেছেন]

ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ অর্জনের জন্য যদি কোন ব্যক্তি উক্ত দোয়াগুলো খালেস নিয়্যতে ও আন্তরিকতার সাথে পাঠ করে এবং সাথে সাথে কল্যাণ অর্জনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন তাকে সফলতা দান করবেন, তার চাওয়া পাওয়া এবং আশা আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করে দেবেন, তার দুশ্চিন্তাকে হৃদয়ের প্রশান্তি দিয়ে বদলে দেবেন।

 

{৭} বিপদে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হলে তা থেকে উত্তরণে উপায় হল পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হলে কি হত, তা একবার কল্পনা করা এবং বর্তমান পরিস্থিতিকে মেনে নেয়ার চেষ্টা করা। এরপর যতদূর সম্ভব দুশ্চিন্তা দূর করার চেষ্টা করা। প্রথমত, বিপদকে মেনে নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর করার চেষ্টা করলে দুশ্চিন্তা অনেকখানি কমে যাবে। এরপর বেশি দুশ্চিন্তা না করে কিভাবে পরিস্থিতি সামালে নিয়ে ভাল কিছু করা যায় তার চেষ্টা করতে হবে। যদি কেউ ভয়, ক্ষুধা কিংবা দারিদ্রের মুখোমুখি হয় তাহলে সে ক্ষেত্রেও তা মেনে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে এই ভেবে যে, পরিস্থিতি এর চেয়েও ভয়াবহ হতে পারত। এভাবে মেনে নেয়ার ফলে দুশ্চিন্তা অনেকখানি কমে যাবে। ভাল কিছু অর্জনের চেষ্টা করতে থাকলে মনের উদ্বেগ দূর হওয়ার পাশাপাশি বিপদে ধৈর্য ধারনের ক্ষমতা বাড়বে এবং আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা আরো দৃঢ় হয়ে উঠবে। মনের প্রশান্তি এবং সুখ লাভের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা ইহকাল এবং পরকালে প্রতিদান প্রাপ্তির আশাকে বাঁচিয়ে রাখে। বহু মানুষ উক্ত বিষয়গুলো অনুসরণের মাধ্যমে সফলতা লাভ করেছে।

{৮} মনের অবিচলতা, মানসিক দৃঢ়তা এবং খারাপ চিন্তার দ্বারা বিচলিত না হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। কঠিন কোন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা, জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ইত্যাদি বিভিন্ন অমূলক চিন্তা মাথায় আসতে পারে। কিন্তু ওসব চিন্তার কাছে হার মানলে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় জীবন ভরে যাবে যা মানসিক ও শারীরিক উভয় স্বাস্থ্যকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করবে। মানসিক বিপর্যয় ঘটবে। এমন অনেক লোকই দেখা যায় যারা এধরনের সমস্যায় আক্রান্ত। কিন্তু যখন একজন মানুষ আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের উপর নির্ভর করে, তাঁর উপর বিশ্বাস রাখে, অমূলক ভাবানায় পড়ে বিচলিত না হয়, আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের উপরই আস্থা রাখে এবং তাঁর অনুগ্রহ লাভের আশায় আশান্বিত থাকে তখন তার মনে কোন দুঃশিন্তা বা উদ্বেগ থাকেনা। ফলে সে শারীরিক এবং মানসিক উভয় প্রকার অসুস্থতা থেকে রক্ষা পাই। ফলে হৃদয় খুঁজে পাই এক অকৃত্রিম সুখ আর ভাল লাগা। বেশিরভাগ হাসপাতালগুলোই আজ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মানসিক রোগীদের দ্বারা ভরে আছে। কত সহজেই দুশ্চিন্তা অনেক শক্ত মনের মানুষদেরকেও কাবু করে ফেলে। দুর্বল মনের যারা তাদের কথা তো আলাদাই। কত সহজেই উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর দুশ্চিন্তা মানুষকে পাগল বানিয়ে ছাড়ে!!

লক্ষ্যনীয় যে, আপনার জীবনের গতিপথ আপনার চিন্তাভাবনাকে অনুসরণ করেই এগিয়ে যাই। যদি এমন কিছু নিয়ে ভাবেন যা আপনার ইহকালীন এবং পরকালীন উভয় জগতেই আপনার জন্য কল্যাণকর,  তাহলে আপনার জীবন সুখী সুন্দর হবে। তা না হলে ফলাফল হবে উল্টো। যে ব্যক্তি উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি থেকে নিরাপদে আছেন তিনি আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের দয়ায় সুরক্ষা লাভ করেছেন এবং আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন অনুগ্রহ করে তার হৃদয়কে শক্তিশালী করেছেন যাতে দুশ্চিন্তা তার হৃদয়কে গ্রাস করতে না পারে। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন (অর্থের ব্যাখ্যা):

“যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র উপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট” [সূরা আল তালাক; ৫৬:৩]

অর্থাৎ, সেইব্যক্তির পার্থিব এবং আধ্যাত্মিক সকল বিষয়ে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন যথেষ্ট। যে আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের প্রতি পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস স্থাপন করবে তার মনোবল বেড়ে যাবে। ফলে অমূলক ভাবনা চিন্তা তাকে বিচলিত করতে পারবেনা। মনে বিভিন্ন দুশ্চিন্তা আসাটা মানুষের প্রকৃতিগত একটি ব্যাপার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যা ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। তবে যারা আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের উপর নির্ভর করবে তিনি তাদের জন্য যথেষ্ট হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই বিশ্বাসী ব্যক্তি সবসময় আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের উপর আস্থা রাখেন, তাঁর পক্ষ থেকে প্রতিদান পাওয়ার আশা করেন। ফলে হৃদয় প্রশান্ত হয়; উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি দূরীভূত হয়; কঠিন সহজ হয়ে যায়; নিরানন্দ হয়ে ওঠে আনন্দময়; অশান্তি পরিণত হয় প্রশান্তিতে। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন যেন আমাদেরকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখেন; তিনি যেন আমাদেরকে অন্তরের দৃঢ়তা এবং মনের অবিচলতা দান করেন;  আমরা যেন পরিপূর্ণভাবে তাকে বিশ্বাস করতে পারি; কারন, আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন তাদের জন্যই উত্তম বিনিময় এবং দুশ্চিন্তাহীন জীবনের ঘোষণা দিয়েছেন যারা তাঁকে পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস করবে এবং তাঁর উপরই ভরসা করবে।

যদি খারাপ কিছু ঘটেই যাই কিংবা তেমন কিছু ঘটবার প্রবল আশ্ংকা দেখা দেয়, তাহলে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের যে অসংখ্য নেয়ামাত আপনি ভোগ করছেন সেগুলোর কথা একবার ভাবুন। তাঁর অসংখ্য নেয়ামতের কথা ভাবলে বর্তমানের বিপদকে আর বিপদই মনে হবেনা।

দেখুন শাইখ আব্দুর রাহমান ইবনু সাদী এর আল ওয়াসাইল মুফীদালিল হায়াত আসসাইদাহ্‌।

ইব্‌নু আল কাইয়্যুম (র.) দুশ্চিন্তা এবং মানসিক অশান্তি দূর করার জন্য সংক্ষেপে ১৫টি উপায় তুলে ধরেছেন। উপায়গুলো হলো—

[১] তাওহীদ আর-রবূবিয়্যাহ্‌ অর্থাৎ, কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও প্রতিপালেনের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন এক ও একক সত্ত্বা—বলে বিশ্বাস করা।

[২] তাওহীদ আল-উলূহিয়্যাহ অর্থাৎ, যাবতীয় ‘ইবাদাহ্‌ ও আনুগত্য পাওয়ার যোগ্য একমাত্র আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন—বলে বিশ্বাস করা।

[৩] তাওহীদ আল-আসমা ওয়াস-সিফাত অর্থাৎ, আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন তাঁর নামসমূহ এবং তাঁর গুণাবলীতে একক ও অদ্বিতীয়—বলে বিশ্বাস করা।

[৪] এই বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীণ তাঁর কোন বান্দার প্রতি কখনই জুলুম করেন না। তিনি বিনা কারনে কখনই কাউকে শাস্তি দেন না।

[৫] এটা স্বীকার করে নেয়া যে, দোষী আপনিই, আপনিই ভুল করেছেন, অপরাধ আপনারই।

[৬] আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের গুণবাচক নামসমূহের মাধ্যমে তাঁর কাছে চাওয়া। তাঁর গুণবাচক নামসমূহের মধ্যে থেকে দুইটি নাম হল “আল-হাই (চিরঞ্জীব)” এবং “আল ক্বইয়্যূম (চিরস্থায়ী)”। এই নাম দুটি তাঁর অন্যান্য গুণবাচক নামসমূহের গুণগুলোকে ধারন করে আছে।

[৭] কেবলমাত্র আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের কাছেই সাহায্য চাওয়া।

[৮] তার সাহায্য লাভের ব্যপারে সুনিশ্চিতভাবে আশা করা।

[৯] পরিপূর্ণভাবে তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং একথা মেনে  নিয়ে সবকিছুকেই তাঁর প্রতি সমর্পণ করা যে, আমাদের জীবন মৃত্যু তাঁরই হাতে, তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই হয়, তাঁর প্রতিটি ইচ্ছাই অনিবার্যভাবে পূরণীয় এবং কোন কিছুই তাঁর ইচ্ছা  ছাড়া সংঘটিত হয়না।

[১০] কোরাআনের আলোই উদ্ভাসিত হওয়া। বিপদের সময় কোরআন থেকে সান্তনা খোঁজা। অন্তরের রোগব্যাধি দূর করতে কোরআনকেই নিরাময় (শিফা) হিসেবে গ্রহন করা। যাতে করে কোরআন মনের দুঃখ-কষ্ট, আবেগ-উৎকণ্ঠা দূর করে প্রশান্তি বয়ে আনে।

[১১]  ক্ষমা প্রার্থনা করা।

[১২] কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া।

[১৩] আল্লাহ্‌র দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার জন্য সকল প্রকার সংগ্রাম ও প্রচেষ্টা চালানো। প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত থাকা।

[১৪] সালাত প্রতিষ্ঠা করা।

[১৫] এই ঘোষণা দেয়া যে, আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন ছাড়া অন্য কারোর কোন শক্তি বা ক্ষমতা নেই। এবং সমস্ত বিষয়কেই তাঁর হাতেই ন্যাস্ত করা।

  আমরা আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে সবরকম উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, বালা-মুসিবত থেকে হেফাজাত করেন। তিনি সর্বশ্রোতা, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। তিনি সর্বদা আমাদের ডাকে সাড়া দেন। তিনি সর্বজ্ঞানী। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী মুহাম্মাদের (সা) উপর এবং তাঁর সঙ্গী-সাথী ও পরিবার বর্গের উপর।   English Version   ওয়েব সম্পাদনা : মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার

ইস্তিকামাহ্‌ (দৃঢ়চিত্ততা/মানসিক অবিচলতা) অর্জনের উপায়

$
0
0

লিখেছেনঃ ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. | অনুবাদঃ জহিরুল কাইয়ুম

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ্‌, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের জন্য। দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের উপর। ইবনুল কাইয়্যিমের মতে, কোন কাজ ইস্তিকামাহ্‌ তথা দৃঢ়চিত্ততা বা মানসিক অবিচলতার সাথে সম্পন্ন করতে চাইলে নিম্নোক্ত পাঁচটি শর্ত পূরণ করা জরুরীঃ [১] কাজটি হতে হবে কেবলমাত্র এবং শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। আর এই বিষয়টি নিয়্যতের পরিশুদ্ধতার সাথে সম্পৃক্ত। এটিই হল “ইখ্‌লাস” বা নিয়্যতের পরিশুদ্ধতা। [২] অর্জিত জ্ঞান (‘ইল্‌ম) হবে কাজটির ভিত্তি। অর্থাৎ, জেনে ও বুঝে কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। কারণ জ্ঞানের ভিত্তিতে সম্পাদিত কর্ম মানুষের মানসিক নিশ্চয়তা বিধান করে। [৩] নির্ধারিত পদ্ধতি মেনেই ইবাদত করতে হবে। শব্দগত অর্থেই “ইবাদত” মানে হল “মেনে চলা”, “আনুগত্য করা” ইত্যাদি। আর তাই ইবাদত বা আনুগত্য করতে হবে ইবাদতের নির্ধারিত পদ্ধতির আনুগত্য করার মাধ্যমেই। [৪] কাজটি করতে হবে যথাসম্ভব সর্বোত্তমভাবে এবং আন্তরিকতার সহিত। ইবাদতে অনাগ্রহ বা অনীহা দুর্বল ঈমানের অন্যতম প্রধান লক্ষন। [৫] কোন কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে কাজটির আইনী বৈধতা আছে কিনা তাও বিবেচ্য বিষয়। আইনী বৈধতা নেই এমন কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।   সুলুক (আচরন বা শিষ্টাচার) বিষয়ক অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণ ইস্তিকামাহ্‌ (দৃঢ়চিত্ততা বা মানসিক অবিচলতা) অর্জনের ক্ষেত্রে আরো কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করার উপদেশ দিয়েছেনঃ [১] চূড়ান্ত পরিণতি তথা আখিরাতে বিচার দিবসের কথা ভেবে সদায় সতর্ক থাকাপরকাল ভিত্তিক এই মানসিক সচেতনতার সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে যাতে করে তা মানুষকে বেশী বেশী সৎকর্মের ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলে। প্রতি মুহূর্তেই নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে একজন মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় তার আখিরাতের জীবন। একজন সালাফ [রাসূল (সা) এর পরবর্তী যুগে ইসলামের প্রথম দিকের তিনটি প্রজন্ম-সাহাবীগণ,তাবীঈগণ এবং তাবে-তাবেঈগণই হলেন সালাফ] বলেনঃ

“আপনি যদি জানেন যে আপনি সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন তাহলে বিকালের অপেক্ষা করবেন না আর যদি জানেন যে বিকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন তাহলে পরবর্তী সকালের অপেক্ষা করবেন না।”

 [২] অঙ্গীকার বা মুশারাতাহঃ একজন মানুষকে অঙ্গীকার করতে হবে যে তিনি দৃঢ় বা অবিচল হবেন এবং ইসলামের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে যথাসম্ভব সঠিক ও উত্তমভাবে কাজ করবেন। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আজকের দিনে অনেক মুসলমান এ ধরনের অঙ্গীকার করার ব্যাপারে বড়ই উদাসীন।   [৩] উক্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া বা মুজাহাদাহঃ কিছু সংখ্যক মুসলমান আছে যারা অঙ্গীকার করে কিন্তু সেই অঙ্গীকারকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে সচেষ্ট হয় না।   [৪] নিয়মিতভাবে নিজের কাজকর্মে পর্যালোচনা তথা মুরাকাবাহঃ অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়ে কখনই কোন মিথ্যা অজুহাত দাঁড় করিয়ে আত্মপ্রসাদে ভোগা চলবে না। এক্ষেত্রে নিজের প্রতি সৎ হতে হবে।   [৫] নিজের কাছেই জবাবদিহি করা বা মুহাসাবাহঃ এ ধাপটি দু’বার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথমত,কোন কিছু শুরু করার আগে নিশ্চিত করতে হবে এ কাজে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন খুশি হবেন কিনা অর্থাৎ কাজটা আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে করা হচ্ছে কিনা। এক্ষেত্রে এটা উপলব্ধি করা খুবই জরুরী যে কাজটি আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন তথা ইসলামের নির্ধারিত নিয়ম মেনেই করতে হবে। দ্বিতীয়তকাজটি শেষ হওয়ার পর ভুল-ত্রুটি যাচাই করে দেখা,যে উদ্দেশ্য করা হয়েছে সেটা অর্জিত হয়েছে কিনা তা বিচার করা। যেটুকু সাফল্য পাওয়া গেছে তাতে সন্তুষ্ট না থেকে আরো ভাল করা যেত কিনা সেটা খতিয়ে দেখা।   [৬] কাজটি সম্পন্ন হলে নিখুঁতভাবে করতে না পারার জন্য নিজেকে দোষারোপ করাঃ ভবিষ্যতে আরো ভালো করার প্রত্যয়ে আত্ম-নিন্দাকে একটি ইতিবাচক গুণ হিসেবে নেয়া যায়। এমনটি করতে পারলে তা আমাদের কর্ম সম্পাদনের দক্ষতা উন্নতির জন্য পরবর্তীতে নিয়মিতভাবে আরও অঙ্গীকার করার সুযোগ করে দেবে।   [৭] উন্নতির জন্য ঐকান্তিক প্রচেষ্টা বা তাহসিনঃ আমরা প্রত্যহ যে কাজগুলো করি যেমনঃ দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড,মহৎ কাজ,ইবাদত ইত্যাদি প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই আমাদেরকে উন্নতি সাধনের জন্য চেষ্টা করতে হবে।   [৮] আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি বিনয়ী হওয়াঃ আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের ক্ষমা, নির্দেশনা ও সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে; বুঝতে হবে তিনি ব্যতীত উৎকৃষ্ট, নিখুঁত এবং মহান আর কেউ নেই।   উপরোক্ত শর্ত/ধাপগুলো দুনিয়াবী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ইবাদত এবং অন্যান্য ধর্মীয় ভাল কাজে প্রয়োগযোগ্য মনে করতে হবে। সূত্রঃ ইমাম নাওয়াবি (রাহিমাহুল্লাহ্‌) এর ৪০ টি হাদিসের এর একটি ব্যাখ্যা

অন্তর কঠিন হয়ে যায় কেন?

$
0
0

Heart of stone

লেখকঃ আবুল কাসেম মুহাম্মাদ মাসুম বিল্লাহ | সম্পাদনাঃ ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

মুসলিম উম্মাহ আজ যে সব মহাপরীক্ষা ও মহা মুছিবতে পতিত এবং কঠিন ও ভয়াবহ রোগে আক্রান্তহয়েছে, তন্মধ্যে এমনই একটি রোগ হলো: অন্তর (ক্বালব) কঠিন হয়ে যাওয়া।

 নিম্নলিখিত কারণে ক্বালব বা অন্তর কঠিন হয়ে যায়:-

১- নামাযের জামা‘আতে হাযির হওয়ার ব্যাপারে অবহেলা ও গাফলতি করা এবং মসজিদে সকাল সকাল না যাওয়া বরং দেরী করা।

২- কুরআনকে পরিত্যাগ করা অর্থাৎ বিনয়-নম্রতা আর মনোযোগ এবং চিন্তা গবেষণাসহকারে কুরআন তেলাওয়াত না করা।

৩- হারাম রুজি যেমন:সুদ, ঘুষ, মাল্টিপারপাস, ইন্স্যুরেন্স এবং বেচাকেনাসহ বিভিন্ন লেনদেনে প্রতারণা ও জালিয়াতি সহ অন্যান্য হারাম পদ্ধতিতে রুজি-রোজগার করার কারণে।

৪- অহংকার, বড়াই, প্রতিশোধপরায়ণতা, মানুষের দোষ-ত্রুটি বা অপরাধকে মাফ না করা, মানুষকে অবহেলা করে নিকৃষ্ট মনে করা, মানুষকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা।

৫- দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে ঝুঁকে পড়া, দুনিয়া দ্বারা প্রতারিত হওয়া এবং মৃত্যুকে, কবরকে এমনকি আখেরাতকে ভুলে যাওয়া।

৬- যে কোনো বেগানা নারীর দিকে তাকানো হারাম; যা অন্তরকে কঠোর করে দেয়।

৭- দাঁড়ি গজায়নি এখনো এমন সুন্দর ছেলের দিকে অযথা তাকানো হারাম; তাই সেটাও অন্তর কঠোর করে দেওয়ার অন্যতম কারণ।

৮- আমি নিজে প্রতিদিন কি কি খারাপ কাজ করলাম? নিজের সমালোচনা নিজে না করা, বরং মানুষের সমালোচনা করা।

৯- অনেক দিন দুনিয়ায় থাকবো,অনেক কিছুর মালিক হবো এমন ভুল ধারণা মনের ভিতর থাকা।

১০- আল্লার যিকির বেশী বেশী না করে বরং বেশী বেশী কথা বলা, বেশী বেশী হাসাহাসি-তামাশা এবং মশকারী বা মজাক করা।

১১- বেশী খাওয়া-দাওয়া করা।

১২- বেশী ঘুম যাওয়া।

১৩- মানুষের উপর জুলুম করা।

১৪- শরীয়তের কোনো আদেশ-নিষেধ লংঘন হওয়ার কারণ ব্যতীত অন্য কোনো কারণে রাগ করা।

১৫- ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার উদ্দেশ্য ব্যতীত কাফেরের দেশ ভ্রমণে বের হওয়া।

১৬- মিথ্যা, গীবত (পরচর্চা) এবং একজনের কথা অন্যের নিকট গিয়ে বলার মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করা।

১৭- খারাপ মানুষের সাথে উঠাবসাও চলাফেরা করা।

১৮- অন্য মুসলিমকে মনে মনে অথবা প্রকাশ্য হিংসা করা।

১৯- একজন মুসলিমের উন্নতি সহ্য করতে না পারা, বরং তার ধ্বংস কামনা করা।

২০- অন্য মুসলিম ভাইয়ের সাথে শত্রুতা করা, ঘৃণা করা এবং তাকে অপছন্দ করা।

২১- আপনার নিজের বা মুসলিম ভাইয়ের কোনো লাভ বা ফায়েদা ব্যতীত নিজের ও অপরের সময় নষ্ট করা।

২২- ইসলামী জ্ঞান শিক্ষা না করা এবং ইসলামী শিক্ষা হতে নিজকে দূরে সরিয়ে রাখা।

২৩- জাদুকর, গণক, জোতিষী, তন্ত্রমন্ত্রকারীর নিকট যাওয়া।

২৪- মাদক, নেশাজাতীয় দ্রব্য, বিড়ি-সিগারেট, হুক্কা, লতা ওয়ালা হুক্কা সহ যাবতীয় তামাক ও তামাকজাত এবং ক্ষতিকর দ্রব্য পান করা।

২৫- সকাল-সন্ধ্যার যিকরসমুহ পাঠ না করা।

২৬- গান শুনা, হিন্দী সহ যাবতীয় লেংটা, চরিত্রহীন হারাম ফিল্ম দেখা, পতিত (খারাপ) চটি পত্রিকা ম্যাগাজিন পাঠ করা।

২৭- আল্লাহর নিকট সর্বদা গুরুত্বসহকারে দো‘আ না করা।

 

ইসলামের আলোকে টাইম ম্যানেজমেন্ট – Time Management

$
0
0

লেখকঃ কবির আনোয়ার

makes_eat_time

“সময় পাই না” কিংবা “সময় পাচ্ছি না” কথাটা আমরা এখন খুব বেশী বলে এবং শুনে থাকি। সন্দেহ নাই, বিবিধ পাপ ও আলসেমির কারণে আমাদের সময়ের বারাকাহ অনেক কম। কিন্তু তারপরও একটা কথা মাথায় রাখা উচিত- সময় কখনই পাওয়া যায় না, সময় বের করে নিতে হয়। অনেক দ্বীনি ভাইও প্রায়ই বলে থাকেন-কীভাবে যে সময় চলে যাচ্ছে টেরই পাচ্ছেন না অথচ তারা অনেক ভাল ভাল কাজের নিয়্যাত করে থাকেন। তাই দৈনন্দিন জীবনের শত ব্যস্ততা ও কাজের মাঝে থেকেও কীভাবে আমরা সময় বের করে নিতে পারি তার জন্যই এই লিখা। তবে Time Management এর উপর হাজারখানেক বই পড়লেও আর কোর্স করলেও কিছুতেই সফলতা হতে আসবে না যদি আল্লাহর সাহায্য ও সন্তুষ্টি না থাকে। সবসময় মাথায় রাখতে হবে সময় ও কাজের বারাকাহ একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে।ত তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের দিকে সবার আগে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। আরেকটি শর্ত হল-তীব্র ইচ্ছাশক্তি নিয়ে শুরু করতে হবে। রুটিন মেনে চলে সময়কে কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর জন্য ইচ্ছাশক্তির কোন বিকল্প নাই।

আর কথা না বাড়িয়ে আমরা মূল আলোচনায় চলে আসি-

# ফযরের পর ঘুমানোর অভ্যাস বন্ধ করুনঃ

শুনে বেশ কঠিন মনে হলেও এটি Time Management এর এক নম্বর শর্ত। নিঃসন্দেহে ফযরের পরের সময়টুকু খুবই বরকতপূর্ণ। এই সময়ে নানাবিধ দূয়া ও যিকর হাদীসে পাওয়া যায় যেগুলোর ফযীলত ও প্রভাব অপরিসীম। দিনের শুরুই যদি হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং অন্তরের প্রশান্তি নিয়ে তবে সারা দিনের সমস্ত কাজ সময়মত গুছিয়ে নেওয়ার মানসিকতা তৈরী হয়ে যায়। গ্রীষ্মকালে ফযরের পর অফিস/স্কুল/কলেজ/ভার্সিটি টাইমের আগ পর্যন্ত প্রায় ২.৫-৩ ঘণ্টা এবং শীতকালে ১.৫-২ ঘণ্টা সময় পাওয়া যায়। এই বিপুল পরিমাণ সময়কে কাজে না লাগানোর কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারে না, বিশেষত যখন এই সময়ে আল্লাহর অতিরিক্ত রহমত ও বরকত নেমে আসে। কুরআন-হাদীস পাঠ ছাড়াও দিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজের কিছু অংশ এই সময়ে করে রাখা গেলে সারাদিনের চাপ কমে যাবে ইনশাআল্লাহ।

# নির্দিষ্ট একটি Time Frame এর মধ্যে কী কী করতে চান তা সুস্পষ্টভাবে লিখে ফেলুনঃ

ধরুন, নভেম্বরে আপনার সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষা। আপনি এখন প্রস্তুতি শুরু করতে চান। প্রথমেই একটি কাগজে লিখে ফেলুন কোন কোন সাবজেক্টের কতটুকু সিলেবাসের পরীক্ষা। আপনি এই ১.৫ মাস প্রতিটি সপ্তাহে কোন সাবজেক্টের কী কী টপিক পড়তে চান তা সুস্পষ্টভাবে লিখে ফেলুন। আমি শুধু উদাহরণ দিচ্ছি। অন্য যেকোন কাজেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। যদি আপনি চান পরবর্তী ২ মাসে কুরআনের ১ পারা মুখস্থ করবেন তবে লিখে ফেলুন প্রতিদিন কতক্ষণ সময় দিয়ে কয়টি আয়াত মুখস্থ করবেন। তবে এই কাজে দুটি জিনিষ মাথায় রাখবেন-

নিজের উপর সাধ্যের অতিরিক্ত চাপ নিয়ে প্ল্যান করবেন না, তাহলে শেষমেষ সবই গোল্লায় যাবে
অস্পষ্টভাবে লিখবেন না। যেমন- এই কাজের ৬০% শেষ করতে চাই বা (পড়াশোনার ক্ষেত্রে) অমুক অমুক সাবজেক্ট এগিয়ে রাখতে চাই

Related App for Windows, Android and Iphone: https://calendar.sunrise.am/https://any.do

# আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে লক্ষ্য রাখুনঃ

Time Frame এর মধ্যে যা যা করতে চান এবং যে কারণে করতে চান তার কোনটিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি আছে কিনা তা যাচাই করে নিন। থাকলে এক্ষুণি এবং এক্ষুণি সেটা বাদ দিন। আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হল, সালাতের জন্য প্রয়োজনীয় যথেষ্ট সময় আলাদা রেখেই Daily Schedule তৈরী করুন। এটি এমন হতে পারে- সালাত শুরুর আগে ও পরে ১০ মিনিট করে সময় অতিরিক্ত রেখে দিতে পারেন সুন্নাহ ও আযকারের জন্য। কখনই কাজের জন্য সালাত ছেড়ে দিবেন না।

# প্রতিদিন দূয়া করুন, জানা না থাকলে শিখে নিনঃ

যেহেতু সফলতা আসবে একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছায়, তাই প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সময়ের যথার্থ ব্যবহার ও আলসেমি পরিত্যাগের জন্য সাহায্য চেয়ে দূয়া করুন। এই ধরণের অনেক সুন্দর দূয়া হাদীসে রয়েছে। অন্যান্য ইবাদাহ ছাড়াও যে Proper Time Management এর জন্য আল্লাহর কাছে আলাদাভাবে দূয়া করতে হবে সেটা আমরা অনেকে মাথায়ই রাখিনা। নির্ভরযোগ্য দূয়ার বইগুলি থেকে প্রয়োজনীয় দূয়া মুখস্থ করে নিন।

# Self Discipline is The Key

কথাটা শুনে খুব বেশি তাত্ত্বিক মনে হল, তাই না? স্বাভাবিক। কিন্তু বিষয়টা একটু অন্যরকমভাবে দেখা যাক-

আপনার Time Frame কে ভেঙ্গে Daily এবং Weekly schedule এ ভাগ করে নিন। এতে ধীরে ধীরে অলসতা চলে আসার সুযোগ কমে যাবে। প্রতিটা দিন এবং সপ্তাহই নতুন নতুন কাজের চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হবে। যে কোন মূল্যে schedule ঠিক রাখার চেষ্টা করুন। আজ একটু কম করে কাল পুষিয়ে দিব এমন চিন্তা ঘুণাক্ষরেও করবেন না।

Urgent, Important, Necessary এগুলোর মধ্যে পার্থক্য করুন এবং সময়মত ঠিক কাজটি করুন। যেমন- ধরুন কাল আপনার ফিজিক্স পরীক্ষা। কিন্তু এই মুহুর্তে আপনার একদম পড়তে ভাল লাগছে না বরং কোন লেকচার শুনতে বা বই পড়তে বা ডকুমেন্টারি দেখতে ইচ্ছা করছে। এগুলোর সবগুলি Necessary হলেও কোনটিই আপনার জন্য এই মুহুর্তে Necessary না বরং Urgent এবং Important হচ্ছে জোরপূর্বক ফিজিক্স পড়া। প্রচলিত খুব ফালতু একটা কথা হল- “যা করতে ভাল লাগে সেটাই কর”। আসলে বলা উচিত-“যা করা দরকার ঠিক সেটাই কর”। ক্ষেত্রবিশেষে Urgent এবং Important এর মধ্যে পার্থক্য করুন এবং অধিক প্রয়োজনীয়টি গ্রহণ করুন। যখন যেটা করবেন বলে ঠিক করেছেন তখন দাঁতে দাঁত চিপে সেটাই করুন, যদিও বা সেটা করতে ভাল না লাগে। দরকার হলে রুটিন চেঞ্জ করে সুবিধামত করে নিন কিন্তু “শুধু আজই একটু অন্যথা করি, কাল ঠিক করে নিব”-এভাবে ভাববেন না।

মেইল-ফেসবুক ইত্যাদি চেক করার জন্য প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে নিন। পড়তে পড়তে বা অন্য কোন কাজের মাঝে এগুলোতে উঁকিঝুঁকি মারবেন না।

প্রতিদিন ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা সময় আলাদা করে রাখুন Personal/Spiritual Development নিয়ে পড়াশোনা এবং নিজেকে যাচাই করার জন্য। কতটুকু এগোতে পারলেন, কী কী পারছেন না, কেন পারছেন না এগুলো সুস্পষ্টভাবে লিখুন।

# খুব বেশি কাজ একসাথে করার চেষ্টা করবেন নাঃ

আপনার কাজগুলিকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিন। প্রতিদিন যে প্রতিটি কাজ করতে হবে-এমনটা না। একইদিনে খুব বেশি কাজ করবেন না। বরং যেদিন যেটা বেশি দরকার সেদিন সেটাতেই ফোকাস করুন। যেমন- ধরুন আপনার রুটিনের ৪ টি কাজ- ভাল একটি ডকুমেন্টারী দেখা, আরবী ভাষা শেখা, একাডেমিক পড়া(বা অফিসিয়াল কাজ) এবং ইসলামিক হালাকা করা। আপনার হাতে এই ৪ টি কাজের জন্য সময় মোট ৩ ঘণ্টা। প্রতিদিন সবকিছু করতে গেলে প্রতিটি কাজে আপনি দিতে পারবেন ৪৫ মিনিট। অথচ প্রতিদিন কিন্তু সবকিছু করার দরকার নেই। ডকুমেন্টারী দেখা, আরবী পড়া কিংবা হালাকা ছুটির দিনের জন্য রেখে দিন। ক্লাশ/অফিসের দিনগুলিতে একাডেমিক পড়া বা অফিসিয়াল কাজে ১.৫ ঘণ্টা করে সময় দিন। আর তাতে ছুটির দিনেও ডকুমেন্টারী, আরবী কিংবা হালাকার প্রতিটিতে ১ ঘণ্টা করে সময় দিতে পারবেন। এতে আপনি Quality Job করতে পারবেন। সবকিছু একইদিনে রেখে রুটিনকে অনাকাঙ্খিত ভারী করে তুলবেন না।

# ­ক্রমাগত আত্মশুদ্ধি

যথার্থ Time Management এর অন্যতম একটি শর্ত হল আত্মশুদ্ধির পেছনে ক্রমাগত লেগে থাকা। নিজেকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারলেই আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞান ও সময়ের বারাকাহ আসবে। এজন্য আত্মশুদ্ধিমূলক বিভিন্ন বই পড়ে ও লেকচার শুনে নিজের কর্মপদ্ধতি ঠিক করে নিতে হবে। সবার জন্যই যে একই পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে তা নয়। এখানে আমি কিছু বই এর নাম উল্লেখ করছি যেগুলো এই কাজে ইনশাআল্লাহ সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস-

(1)          In the Early Hours- Khurram Murad

(2)          The Purification of the Soul- Ibn Rajab, Ibn al Qayyim, Al-Ghazali

(3)          Purification of the Soul: Concept, Process & Means- Jamaal Zarabozo

(4)          The Journey to Allah- Ibn Rajab al Hanbali

(5)          Salvation Through Repentance- Dr. Bilal Philips

এছাড়াও ইউটিউবে সহজলভ্য ইংরেজীভাষী ‘আলিমদের মধ্যে Md. Ali Hazratji এর আত্মশুদ্ধির আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ হতে পারে। বাংলা ভাষায় উস্তাদ নাসিল শাহরুখ এর “আত্মশুদ্ধি” শিরোনামে ধারাবাহিক আলোচনা ইউটিউবে OIEP এর চ্যানেলে পাওয়া যাবে। আত্মশুদ্ধির জন্য প্রচুর দুয়া, তাওবাহ ও ইস্তিগফারের কোন বিকল্প নাই। তাই প্রয়োজনীয় মাসনূন দুয়াগুলো ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর রাহে বেলায়েত থেকে শিখে নেওয়া হতে পারে একটা ভাল বুদ্ধি।

আত্মশুদ্ধির পথে নিজেকে যাচাই করার জন্য “প্রাত্যহিক কর্মতালিকা” তৈরী করে নেওয়া যেতে পারে। এই তালিকা হতে হবে নিজের ‘লেভেল’ অনুযায়ী। সকল ফরয-ওয়াজিব ইবাদাহ আগে পালন করার চেষ্টা করুন। এরপর সেগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে বেশী বেশী নফল ইবাদাহ পালন করুন। নিজের প্রয়োজনমত ফরয/ওয়াজিব/নফল কাজগুলি তালিকায় স্থান দিন। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে তালিকা পূরণ করুন এবং আগের দিনের সাথে মিলিয়ে দেখুন কোনটা কম হয়েছে, কেন হয়েছে, কীভাবে সেটার উন্নতি করা যায়।

# হালাল বিনোদনের ব্যবস্থা রাখুন

রুটিনের একঘেয়েমি কাটাতে হালাল বিনোদনের ব্যবস্থা রাখুন। সাপ্তাহিক বা মাসিক বিনোদনের জন্য কিছু সময় নির্দিষ্ট করে নিন। এই সময়টায় বন্ধু-আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে ঘুরতে পারেন কিংবা হালাল ডকুমেন্টারি, মুভি, নাশীদ ইত্যাদি দেখতে ও শুনতে পারেন। যদি ঠিকমত রুটিন মেইনটেইন করতে পারেন তবে নিজেই নিজেকে ‘ট্রিট’ দিন! অর্থাৎ পছন্দের কোন জায়গায় পছন্দের খাবার খেতে যান-ভাববেন, রুটিন মেইনটেইন করার পুরষ্কার এটি। আবার রুটিন ভংগ হলে নিজেই নিজেকে শাস্তি দিন। তবে এই শাস্তিও হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। এটি হতে পারে সিয়াম রাখা কিংবা নিজের উপার্জিত টাকা থেকে কিছু দান করে দেওয়া। তবে অবশ্যই এই দানের পরিমাণ এমন হতে হবে যে সেই পরিমাণ দান করতে আপনার কিছুটা হলেও অস্বস্তি লাগে, সিয়াম রাখলে অনেকগুলি সিয়াম (আপনার কষ্ট হয় এমন) রাখার ‘শাস্তি’ নির্ধারণ করবেন যেন কিছুতেই রুটিন ভাংতে মন না চায়। প্রথম কাজটি শরীরের জন্য কষ্টকর আর দ্বিতীয়টি নাফসের জন্য। কিন্তু উভয়টিই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করলে ইবাদাহ-র পাশাপাশি নিজের উপর একটু কষ্টও চাপিয়ে নেওয়া হল-রুটিন ভংগ করার শাস্তি হিসেবে এটা মেনে নিন!

# সব কাজ নিজে না করে অন্যকে কাজ ভাগ করে দিন

সবকাজ নিজে করতে যাবেন না। যে কাজ অন্যকে দিয়ে মনমত করিয়ে নিতে পারবেন তা উপযুক্ত কাউকে দিয়ে করিয়ে নিন। এতে নিজের উপর থেকে কাজের চাপ কমে যাবে ও সময়ের পরিমাণ বাড়বে। ধরুন, আপনি নিজের জন্য একটি ওয়েবসাইট বানাতে চান। এখন আপনি ওয়েবসাইটের কাজ না জানলেতো বটেই, এমনকি জানলেও নিজে না করে ওয়েবসাইটের কাজ ভাল পারে এমন কাউকে করে দিতে বলুন, দরকার হলে তাকে পারিশ্রমিক দিয়ে করিয়ে নিন। আবার ধরুন, আপনার একটি নোটখাতা টাইপ করতে হবে। কোন দরকার নাই নিজে থেকে টাইপ করার, কম্পোজের দোকান থেকে টাইপ করিয়ে নিন। একইভাবে, যে কাজ অন্যকে দিয়ে মান বজায় রেখেও করতে পারবেন তা নিজে করতে যেয়ে অতিরিক্ত চাপ নিবেন না।

#১০ সব ধরণের Time Waster থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন

হারামতো বটেই, সবধরণের হালাল Time Waster থেকেও দূরে থাকুন। ফালতু আড্ডা পুরোপুরি ছেড়ে দিন, অপ্রয়োজনীয় কথা, কাজ, মুভি-নাটক-কার্টুন (অভ্যাস থাকলে) ইত্যাদি দেখার অভ্যাস বাদ দিন। রুটিন ভংগ করে “শুধু আজই একটু আড্ডা দিই” এমনটা করবেন না। প্রয়োজন না থাকলেও ঘনঘন বাইরে খেতে/ঘুরতে যাওয়া, খাওয়া নিয়ে রসিক আড্ডা ইত্যাদি বাদ দিন। একজন ইসলামী জ্ঞানের ছাত্র হিসেবে বন্ধুদের সাথে খাদ্য ও নারী সংক্রান্ত আলোচনা পুরোপুরি বাদ দিতেই হবেই-এগুলো ফালতু Time Waster ছাড়া কিছুই না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘুম আরেকটি হালাল Time Waster. এটা থেকেও সাবধান থাকুন।

#১১ শর্টকার্ট শিখুন

অনেক কাজ আছে যেগুলো শর্টকার্ট পদ্ধতিতে করতে পারবেন-এই শর্টকার্টগুলো শিখে নিন। কোন ইসলামিক/অন্যান্য লেকচার শুনতে হলে VLC player এ 2X speed এ শুনুন। এতে অর্ধেক সময় বেঁচে যাবে। প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও পরে অভ্যাস হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। রুটিনে কিছু flexible সময় রাখুন। এতে কোন একটি কাজ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে হলেও রুটিনের অন্য কাজগুলি ঠিক সময়ে করতে পারবেন। বই পড়ার জন্য internet থেকে speed reading শিখে নিতে পারেন। লিখার জন্য করে নিতে পারেন শর্টকার্টে লিখার কোর্স। তবে শর্টকার্ট করতে যেয়ে আবার কাজের মান যেন কমে না যায় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।

# এগুলোর বাইরেও Effective Time management এর জন্য কিছু Extra Tips:

      •  একসাথে একাধিক কাজ কেবলমাত্র তখনই করবেন যখন সেটা beneficial হবে। যেমন- প্র্যাক্টিকাল খাতা লিখতে লিখতে কিংবা অফিসের ফাইল সাইন করতে করতে ইয়ারফোনে কোন লেকচার শুনতে পারেন। কিন্তু একাডেমিক স্টাডি করার সময় কখনই এমনটা করবেন না।
      • সর্বদা সৎসঙ্গে থাকুন।
      •  অন্যের উপদেশ ও সংশোধনী খোলা মনে গ্রহণ করুন।
      •  ভদ্রভাবে ও বিনয়ের সাথে “না” বলতে শিখুন।
      • সর্বদা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার চেষ্টা করুন।
      • প্রতিটি কাজে সর্বোচ্চ পরিশ্রম দিন এবং সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে ভালভাবে করার চেষ্টা করুন।

Allah knows the best.

Courtesy: http://idrf-bd.com

(এ ওয়েব সাইটের সাথে সম্পৃক্ত অন্য ওয়েব সাইট অথবা অন্য ওয়েব সাইটে প্রদত্ত বিষয়-বস্তুর সাথে এ ওয়েব সাইটে প্রদত্ত বিষয়-বস্তুর সম্পৃক্ততা এবং এর সাথে সম্পৃক্ত অন্য ওয়েব সাইটে প্রবেশ করার ব্যাপারে কোনো দায়-দায়িত্ব কুরআনের আলো বহন করে না। তাতে প্রবেশ করবেন নিজ দায়িত্বেই। কারণ, সে সকল ওয়েব সাইট আমাদের দখলে নেই এবং তার বিষয়-বস্তু কিংবা ওয়েব সংক্রান্ত অন্যান্য প্রযুক্তিও আমাদের আয়ত্বে নেই। এবং এটাও মনে করা যাবে না যে, কুরআনের আলোর সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য ওয়েব সাইটে উপস্থাপিত জ্ঞান ও তথ্যের ব্যাপারে কুরআনের আলো একমত। কুরআনের আলো সে সব ওয়েবের লিংক দিয়ে শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চায়। তাছাড়া সে সব ওয়েব সাইটে প্রদত্ত তথ্যের কোনো দায়-দায়িত্ব কুরআনের আলো কখনও বহন করে না।)

 

সংগ্রহ করুন একটি আকর্ষণীয় ইসলামিক বোর্ড গেম – 5Pillars

$
0
0

ফাইভ পিলার বোর্ড গেম পরিবারের সাথে আনন্দ করার জন্য একটি হালাল ইসলামিক বোর্ড গেম। 5Pillars বোর্ড গেম ও ফান বক্সে আপনি পাচ্ছেন ইসলামের পাঁচটি রুকন সম্পর্কিত ১৩০০ এর মত কুইজ, এক্টিভিটি, বাজ ওয়ার্ডস, ট্রিভিয়া এবং আরো অনেক কিছু, যা আপনাকে দিচ্ছে খেলার ছলে ইসলাম শিখার সুবর্ন সুযোগ। ধাঁধার প্রশ্নের উত্তরের জন্য আপনাকে হয়তো মাঝেমাঝে আল-কুর’আন বা হাদিসের গ্রন্থ  খুলে উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। (ধাঁধার উদাহরণ: আল-কুর’আনের ২৯ পারার সূরাগুলোকে আয়াতের ক্রমানুসারে সাজাতে হবে। এগুলো একটা কাগজে এক মিনিটের মধ্যে লিখে শেষ করতে হবে)।

ইমান, সলাত, সিয়াম, যাকাত ও হাজ্জ ইসলামের পাঁচটি রুকন, এবং এই বিষয় সম্পর্কিত সঠিক জ্ঞানার্জন প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরয। নিঃসন্দেহে ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষালাভের মূল সোর্স হওয়া উচিৎ ইসলামিক স্কলার এবং কুর’আন ও সুন্নাহ এর আলোকে দেয়া লেকচারসমুহ ও লিখিত কিতাবাদি। এসবের পাশাপাশি ইসলাম সম্পর্কে আপনার ও আপনার পরিবার পরিজনের জ্ঞান বাড়াতে 5Pillars Game অসাধারন ভুমিকা রাখতে পারে।

 

কিভাবে খেলতে হবে?

ফাইভ পিলার বোর্ড গেম খেলা শিখতে এইখানে ক্লিক করুন

ফাইভ পিলার ফান বক্স খেলা শিখতে এইখানে ক্লিক করুন

 

5Pillars Board Game –  ফাইভ পিলার বোর্ড গেম

5Pillars-2_Fotor_Collage

পণ্যের বর্ণনা: বাড়িয়ে তুলুন ইসলামের পাঁচ খুঁটির উপর আপনার জ্ঞান, সেই সাথে পরিবার ও বন্ধুদের সাথে মেতে উঠুনে হালাল বিনোদনে। ঈমান, সালাহ, যাকাহ, সাওম ও হাজ্জের পিলারগুলো গড়ে তোলার জন্য কৌশল খাটান এবং পিলার টোকেনগুলো পালাক্রমে বদলাতে থাকুন। অন্যদলের আগে কঠিনতার পাঁচটি পর্যায়ের সব পিলারগুলো অধিকার করে জিতে নিন খেলা! খেলতে খেলতে আল-কুর’আন ও হাদীস থেকে সঠিক তথ্যসূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে অর্জন করুন বিশেষ কৃতিত্বের পয়েন্ট। প্রতিটি কার্ড ওল্টালেই বাড়বে আপনার ইসলামিক জ্ঞান। অল্প সময় ধরেই খেলুন আর সারারাত ধরেই খেলুন, কিন্তু সেরা শিক্ষা অভিজ্ঞতার জন্য যতক্ষণ না ইসলামের সবগুলো পিলার অধিকার করতে পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত থামবেন না।

খেলোয়াড় সংখ্যা: ২-১০ (২ দল)
বয়স সীমা: ১০+
খেলার ব্যাপ্তি: ৬০ মিনিট
বক্সে যা যা থাকছে: গেম বক্স ১টি, গেম বোর্ড ১টি, পাঞ্চ কার্ড দুটি সাথে প্রতিটির জন্য পিলার টাইল ২৫টি, ৫টি পিলার টোকেনসহ একটি পাঞ্চ কার্ড, ভ্যাকুয়াম ট্রে ১টি, ৭৫০টি কার্ড, নির্দেশনাবই ১টি

Price: 3200  2450Taka / 1950Indian Rupee |  Click Here to Order now!

5Pillars Fun Box – ফাইভ পিলার ফান বক্স!

5PBG-ENG Card Spread_Fotor_Collage

পণ্যের বর্ণনা: আপনি কি ট্রিভিয়া পছন্দ করেন যাতে রয়েছে ইসলামিক টুইস্ট? আপনি কি আকারে-ইঙ্গিতে বোঝাতে পারেন? পারেন কি চোখ বন্ধ করে ছবি আঁকতে? না তুতলিয়ে কতক্ষণ একনাগাড়ে বলে যেতে পারেন? কত ধাঁধার সুরাহা করতে পারে আপনার মস্তিষ্ক? সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই কি আপনি এগুলো সব করতে পারেন? যদি তা-ই হয়, তাহলে এই মজার পারিবারিক গেমটি শুধু আপনারই জন্য! ইসলামিক ট্রিভিয়া ও চ্যালেঞ্জমূলক কাজ সম্বলিত ৫০০ কার্ড রয়েছে এই খেলাটিতে। দলগতভাবে আপনাকে জুড়ে রাখার সাথে সাথে চলবে হাসিতে গড়াগড়ি!

খেলোয়াড় সংখ্যা: ৪-১২ (২ দল)
বয়স সীমা: ১০+
খেলার ব্যাপ্তি: ৩০ মিনিট
বক্সে যা যা থাকছে: গেম বক্স ১টি, বালুঘড়ি ১টি, অ্যাক্টিভিটি কয়েন ১টি, ভ্যাকুয়াম ট্রে ১টি, ৭৫০টি কার্ড, নির্দেশনাবই ১টি

Price: 2500  1950Taka / 1600Indian Rupee | Click Here to Order now!

A product of Saudi Arabia.

Free Cash On Delivery Service in Bangladesh and India – কল করে অথবা  ফরম পূরণ করে অর্ডার করুন, প্রোডাক্ট হাতে পেয়ে টাকা পরিশোধ করুন। এটা ঝামেলাহীন!

Hotline: 01611122275-6 (Sunday to Thursday, 10am to 9pm)

 

 

Untitled-42



কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে দানশীলতা ও কৃপণতা

$
0
0

180

মহান আল্লাহ বলেন,     

“তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার বিনিময় দেবেন।”(সূরা সাবা ৩৯)

তিনি আরো বলেন,

 “তোমরা যা কিছু ধন-সম্পদ দান কর, তা নিজেদের উপকারের জন্যই। আল্লাহর সন্তোষটি ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে তোমরা দান করো না। আর তোমরা যা দান কর, তার পুরস্কার পূর্ণভাবে প্রদান করা হবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না।” (সূরা বাক্বারাহ ২৭২)

তিনি অন্যএ বলেন,

 “তোমরা যা কিছু ধন-সম্পদ দান কর, আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত।”(সূরা বাক্বারাহ ২৭৩)

 এ বিষয়ে অনেক হাদীস উল্লেখ করা হল।

১) ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন, “কেবলমাত্র দুটি বিষয়ে ঈর্ষা করা যায় (১) ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন,অতঃপর তাকে হক পথে অকাতরে দান করার ক্ষমতা দান করেছেন এবং (২) ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ হিকমত দান করেছেন, অতঃপর সে তার দ্বারা ফায়সালা করে ও তা শিক্ষা দেয়”।(সহীহুল বুখারী ৭৩, ১৪০৯, ৭১৪১, মুসলিম ৮১৬)

*হাদীসের অর্থ হল, উক্ত দুই প্রকার মানুষ ছাড়া অন্য কারো প্রতি ঈর্ষা করা বৈধ নয়।

২) উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) লোকদেরকে প্রশ্ন করলেন, “তোমাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি কে আছে, যে নিজের সম্পদের চেয়ে তার  ওয়ারেসের সম্পদকে বেশি প্রিয় মনে করে?” তাঁরা জবাব দিলেন, ‘হে আল্লাহর রসুল! আমাদের মাঝে এমন কোন ব্যক্তি কেউ নেই, যে তার নিজের সম্পদকে বেশি প্রিয় মনে করে না।’ তখন তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই মানুষের নিজের সম্পদ তাই, যা সে আগে পাঠিয়েছে। আর এ ছাড়া যে মাল বাকী থাকবে, তা হল ওয়ারেসের মাল”। (সহীহুল বুখারী ৬৪৪২, নাসায়ী ৩৬১২,আহমাদ ৩৬১৯)

৩) আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, “তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়।”(সহীহুল বুখারী ১৪১৩,১৪১৭,৩৫৯৫,৬০২৩, নাসায়ী ২৫৫২,২৫৫৩,আহমাদ ১৭৭৮২)

৪) জাবের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাঃ)-এর নিকট এমন কোন জিনিসই চাওয়া হয়নি, যা জবাব দিয়ে তিনি ‘না’ বলেছেন।(সহীহুল বুখারী ৬০৩৪,আহমাদ ১৩৭৭২)

৫) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, “প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের বিনিময় দিন।’ আর অপরজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস দিন।”(সহীহুল বুখারী ১৪৪২, মুসলিম ১০১০)

৬) উক্ত রাবী কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি (অভাবীকে) দান কর, আল্লাহ তোমাকে দান করবেন।’(সহীহুল বুখারী ৪৬৮৪, ৫৩৫২, ৭৪১১, তিরমিযী ৩০৪৫)

৭) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করল, ‘ইসলামের কোন কাজটি উওম?’ তিনি জবাব দিলেন, “তুমি অন্নদান করবে এবং পরিচিত ও অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে।”(সহীহুল বুখারী ১২, ২৮, ৬২৩৬, তিরমিযী ১৮৫৫, নাসায়ী ৫০০০)

৮) উক্ত রাবী কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “চল্লিশটি সৎকর্ম আছে, তার মধ্যে উচ্চতম হল, দুধ পানের জন্য (কোন দরিদ্রকে) ছাগল সাময়িকভাবে দান করা। যে কোন আমলকারী এর মধ্যে হতে যে কোন একটি সৎকর্মের উপর প্রতিদানের আশা করে ও তার প্রতিশ্রত পুরস্কারকে সত্য জেনে আমল করবে, তাকে আল্লাহ তার বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।”(সহীহুল বুখারী ২৬৩১, আহমাদ ৬৪৫২,৬৭৯২,৬৮১৪)

৯) আবূ উমামাহ সুদাই বিন আজলান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “হে আদম সন্তান! প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাল (আল্লাহর পথে) খরচ করা তোমার জন্য মঙ্গল এবং তা আটকে রাখা তোমার জন্য অমঙ্গল। আর প্রয়োজন মত মালে তুমি নিন্দিত হবে না। প্রথমে তাদেরকে দাও, যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে। আর উপরের (উপুর) হাত নিচের (চিৎ) হাত অপেক্ষায় উওম।”(মুসলিম ১০৩৬, তিরযিমী ২৩৪৩)

১০) আনাস (রাঃ) বলেন, ইসলামের স্বার্থে (অর্থাৎ নও মুসলিমের পক্ষ থেকে) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট যা চাওয়া হত, তিনি তা-ই দিতেন। (একবার) তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এল। তিনি তাকে দুই পাহাড়ের মধ্যস্থলের সমস্ত বকরীগুলো দিয়ে দিলেন। তারপর সে তার সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম গ্রহন কর। কেননা, মুহাম্মাদ (সাঃ) ঐ ব্যক্তির মত দান করেন, যার দারিদ্রতার ভয় নেই।’ যদিও কোন ব্যক্তি কেবলমাত্র দুনিয়া অর্জন করার জন্য ইসলাম গ্রহণ করত। কিন্ত কিছুদিন পরেই ইসলাম তার নিকট দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছু থেকে প্রিয় হয়ে যেত।(মুসলিম ২৩১২, আহমাদ ১১৬৩৯, ১২৩৭৯)

১১) উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কিছু মাল বণ্টন করলেন। তারপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! অন্য লোকেরা এদের চেয়ে এ মালের বেশি হকদার ছিল।’ তিনি বললেন, “এরা আমাকে দু’টি কথার মধ্যে একটা না একটা গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে। হয় তারা আমার নিকট অভদ্রতার সাথে চাইবে (আর আমাকে তা সহ্য করে তাদেরকে দিতে হবে) অথবা তারা আমাকে কৃপণ আখ্যায়িত করবে। অথচ, আমি কৃপণ নই।” (মুসলিম ১০৫৬, আহমাদ ১২৮, ২৩৬)

১২) জুবাইর ইবনে মুত্বইম (রাঃ) বলেন, তিনি হুনাইনের যুদ্ধ থেকে ফিরার সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সঙ্গে আসছিলেন। (পথিমধ্যে) কতিপয় বেদুঈন তাঁর নিকট অনুনয়-বিনয় করে চাইতে আরম্ভ করল, এমন কি শেষ পর্যন্ত তারা তাঁকে বাধ্য করে একটি বাবলা গাছের কাছে নিয়ে গেল। যার ফলে তাঁর চাদর (গাছের কাঁটায়) আটকে গেল। নবী (সাঃ) থেমে গেলেন এবং বললেন, “তোমরা আমাকে আমার চাদরখানি দাও। যদি আমার নিকট এসব (অসংখ্য) কাঁটা গাছের সমান উঁট থাকত, তাহলে আমি তা তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতাম। তারপর তোমরা আমাকে কৃপণ, মিথ্যুক বা কাপুরুষ পেতে না।”(সহীহুল বুখারী ২৮২১, ৩১৪৮)

১৩) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “সাদকাহ করলে মাল কমে যায় না এবং ক্ষমা করার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা (ক্ষমাকারীর) সম্মান বৃদ্ধি করেন। আর কেও আল্লাহর (সন্তোষটির) জন্য বিনয়ী হলে, আল্লাহ আযযা অজাল্ল তাঁকে উচ্চ করেন।”(মুসলিম   ২৫৮৮, তিরমিযী ২০২৯)

১৪) আবূ কাবশাহ আমর ইবনে সা’দ আনসারী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, “আমি তিনটি জিনিসের ব্যাপারে শপথ করছি এবং তোমাদেরকে একটি হাদীস বলছি তা স্মরন রাখোঃ (এক) কোন বান্দার মাল সাদকাহ করলে কমে যায় না। (দুই) কোন বান্দার উপর কোন প্রকার অত্যাচার করা হলে এবং সে তার উপর ধৈর্য-ধারন করলে আল্লাহ নিশ্চয় তাঁর সম্মান বাড়িয়ে দেন, আর (তিন) কোন বান্দা যাচ্ঞার দুয়ার উদঘাটন করলে আল্লাহ তার জন্য দারিদ্রতার দরজা উদঘাটন করে দেন।” অথবা এই রকম অন্য শব্দ তিনি ব্যবহার করলেন।

“আর তোমাদেরকে একটি হাদীস বলছি তা স্মরন রাখো”। তিনি বললেন, “দুনিয়ায় চার প্রকার লোক আছে; (১) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ ধন ও (ইসলামী) জ্ঞান দান করেছেন। অতঃপর সে তাতে আল্লাহকে ভয় করে এবং তার মাধ্যমে নিজ আত্মীয়তা বজায় রাখে। আর তাতে যে আল্লাহর হক রয়েছে তা সে জানে। অতএব সে (আল্লাহর কাছে) সবচেয়ে উৎকৃষ্ট স্তরে অবস্থান করবে। (২) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ (ইসলামী) জ্ঞান দান করেছেন; কিন্তু মাল দান করেননি। সে নিয়তে সত্যনিষ্ট, সে বলে যদি আমার মাল থাকত, তাহলে আমি (পূর্বাক্ত) অমুকের মত কাজ করতাম। সুতরাং সে নিয়ত অনুসারে বিনিময়ে পাবে; এদের উভয়ের প্রতিদান সমান। (৩) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ মাল দান করেছেন; কিন্তু (ইসলামী) জ্ঞান দান করেননি। সুতরাং সে না জেনে অবৈধরূপে নির্বিচারে মাল খরচ করে; সে তাতে আল্লাহকে ভয় করে না, তার মাধ্যমে নিজ আত্মীয়তা বজায় রাখে না এবং তাতে যে আল্লাহর হক রয়েছে তাও সে জানে না। অতএব সে (আল্লাহর কাছে) সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্তরে অবস্থান করবে। আর (৪) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ ধন ও (ইসলামী) জ্ঞান কিছুই দান করেননি। কিন্তু সে বলে, যদি আমার নিকট মাল থাকত, তাহলে আমিও আমি (পূর্বাক্ত) অমুকের মত কাজ করতাম। সুতরাং সে নিয়ত অনুসারে বিনিময়ে পাবে; এদের উভয়ের পাপ সমান।” (তিরমিযী ২৩২৫, ইবনে মাজাহ ৪২২৮)

১৫) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদিন তাঁরা একটি ছাগল জবাই করলেন। তারপর নবী (সাঃ) বললেন, “ছাগলটির কতটা (মাংস) অবশিষ্ট আছে? আয়েশা (রাঃ) বললেন, ‘কেবলমাত্র কাঁধের মাংস ছাড়া তার কিছুই বাকী নেই।’ তিনি বললেন, “(বরং) কাঁধের মাংস ছাড়া সবটাই বাকী আছে।”(তিরমিযী ২৪৭০, আহমাদ ২৩)

*অর্থাৎ, আয়েশা (রাঃ) বললেন, ‘তার সবটুকু মাংসই সাদকা করে দেওয়া হয়েছে এবং কেবলমাত্র কাঁধের মাংস বাকী রয়ে গেছে।’ উওরে তিনি বললেন, “কাঁধের মাংস ছাড়া সবই আখেরাতে আমাদের জন্য বাকী আছে।” (আসলে যা দান করা হয়, তাই বাকী থাকে।)

১৬) আসমা বিন্তে আবূ বাকর (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) আমাকে বললেন, “তুমি সম্পদ বেঁধে (জমা করে) রেখো না, এরূপ করলে তোমার নিকট (আসা থেকে) তা বেঁধে রাখা হবে।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, “খরচ কর, গুনে গুনে রেখো না, এরূপ করলে আল্লাহও তোমাকে গুনে গুনে দেবেন।আর তুমি জমা করে রেখো না, এরূপ করলে আল্লাহও তোমার প্রতি (খরচ না করে) জমা করে রাখবেন।(সহীহুল বুখারী ১৪৩৩,১৪৩৪,২৫৯০,২৫৯১ মুসলিম ১০২৯)

১৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, “কৃপণ ও দানশীলের দৃষ্টান্ত এমন দুই ব্যক্তির মত, যাদের পরিধানে দু’টি লোহার বর্ম রয়েছে। যা তাদের বুক থেকে টুঁটি পর্যন্ত বিস্তৃত। সুতরাং দানশীল যখন দান করে, তখনই সেই বর্ম তার সারা দেহে বিস্তৃত হয়ে যায়, এমনকি (তার ফলে) তা তার আঙ্গুলগুলোকেও ঢেকে ফেলে এবং তার পদচিহ্ন (পাপ বা ত্রুটি) মুছে দেয়। পক্ষান্তরে কৃপণ যখনই কিছু দান করার ইচ্ছা করে, তখনই বর্মের প্রতিটা আংটা যথাস্থানে এঁটে যায়। সে তা প্রশস্ত করতে চাইলেও তা প্রশস্ত হয় না।”(সহীহুল বুখারী ১৪৪৪,২৯১৭,৫৭৯৭ মুসলিম ১০২১)

১৮) উক্ত রাবী (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি (তার) বৈধ অর্থ ছাড়া অন্য কিছুই গ্রহণই করেন না— সে ব্যক্তির ঐ দানকে আল্লাহ ডান হাতে গ্রহন করেন। তারপর তা ঐ ব্যক্তির জন্য লালন-পালন করেন, যেমন তোমাদের কেউ তার অশ্ব-শাবককে লালন-পালন করে থাকে। পরিশেষে তা পাহাড়ের মত হয়ে যায়।”(সহীহুল বুখারী ১৪১০, মুসলিম ১০১৪)

১৯) উক্ত রাবী (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “এক ব্যক্তি বৃক্ষহীন প্রান্তরে মেঘ থেকে শব্দ শুনতে পেল, ‘অমুকের বাগানে বৃষ্টি বর্ষন কর।’ তারপর সেই মেঘ সরে গিয়ে কালো পাথুরে এক ভূমিতে বর্ষন করল। তারপর (সেখানকার) নালাসমূহের মধ্যে একটি নালা সম্পূর্ণ পানি নিজের মধ্যে জমা করে নিল। লোকটির সেই পানির অনুসরণ করে কিছু দূর গিয়ে দেখল, একটি লোক কোদাল দ্বারা নিজ বাগানের দিকে পানি ঘুরাচ্ছে। সে তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার নাম কি ভাই?’ বলল, ‘অমুক’। এটি ছিল সেই নাম, যে নাম মেঘের আড়ালে সে শুনেছিল। বাগান-ওয়ালা বলল, ‘ওহে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার নাম কেন জিজ্ঞাসা করলে?’ লোকটি বলল, আমি মেঘের আড়াল থেকে তোমার নাম ধরে তোমার বাগানে বৃষ্টি বর্ষন করতে আদেশ শুনলাম।

তুমি কি এমন কাজ কর? বাগান-ভাগলা বলল, ‘এ যখন বললে, তখন বলতে হয়; আমি এই বাগানের উৎপন্ন ফল-ফসলকে ভেবে-চিন্তে তিন ভাগে ভাগ করি। তারপর তার এক ভাগ দান করি, এক ভাগ আমি আমার পরিজনসহ খেয়ে থাকি এবং বাকী এক ভাগ বাগানের চাষ-খাতে ব্যয় করি।”(মুসলিম ২৯৮৪, আহমাদ ৭৮৮১)

কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতা 

আল্লাহ তাআলা বলেন,

“পক্ষান্তরে যে কার্পণ্য করে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করে। আর সদ্বিষয়কে মিথ্যাজ্ঞান করে অচিরেই তার জন্য আমি সুগম করে দেব (জাহান্নামের) কঠোর পরিণামের পথ। যখন সে ধ্বংস হবে, তখন তার সম্পদ তার কোন কাজেই আসবে না।” (সূরা লাইল ৮-১১)

তিনি আরো বলেন,

وَمَن يوقَ شُحَّ نَفسِهِ فَأُولٰئِكَ هُمُ المُفلِحونَ

অর্থাৎ, যারা অন্তরে কার্পণ্য হতে মুক্ত, তারাই সফলকাম।(সূরা তাগাবূন ১৬)

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “অত্যাচার করা থেকে বাঁচ। কেননা, অত্যাচার কিয়ামতের দিনের অন্ধকার। আর কৃপণতা থেকে দূরে থাকো । কেননা, কৃপণতা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে।(এই কৃপণতাই) তাদেরকে প্ররোচিত করেছিল, ফলে তারা নিজদের রক্তপাত ঘটিয়েছিল এবং তাদের উপর হারামকৃত বস্তুস্মূহকে হালাল করে নিয়েছিল।”(মুসলিম ২৫৭৮, আহমাদ ১৪০৫২)

 


বই –নেতৃত্ব প্রদান ও প্রভাবিত করার গুপ্ত রহস্যাবলি- ফ্রী ডাউনলোড

$
0
0

leadership

 

বইঃ নেতৃত্ব প্রদান ও প্রভাবিত করার গুপ্ত রহস্যাবলি (Secrets of Leadership and Influence )

লেখকঃ সূলাইমান বিন আওয়াদ  ক্বিয়ান

প্রকাশনায়ঃ পিস পাবলিকেশন্স

এডিটিং ও ইন্টার‌্যাক্টিভ লিংকঃ QuranerAlo.com

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ উচ্চ পদ হতে মাঠ পর্যায়সহ সর্বস্থরে যারা নেতৃত্ব প্রদান, ও দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করেন বা করবেন তাদের জন্য পুস্তিকাটি অমেয় সূধা হিসাবে গৃহীত হবে বলে আশা করি। সকল মানুষই নিজ নিজ অবস্থানে এক একজন নেতা বা পরিচালক। এ জন্য সকলকেই দায়িত্ব কর্তব্য সুচারুরূপে পালনের নেপথ্য যে গুণাবলির গুপ্ত রহস্য স্বভাবে থাকা একান্ত প্রয়োজন তা জেনে জীবনে বাস্তবায়িত করার জন্য এ পুস্তকটি সকলের পথের দিশা হবে।

এই বইটিতে নবী (সাঁঃ) এর নৈতিক উৎকর্ষ সম্বলিত দূরদর্শিতার বর্ণনা আছে। যা নেতৃত্বে মানসম্পন্ন শিক্ষা, উপদেশ, পরামর্শ দিবে ও প্রভাবিত করবে।

এই বইটিতে নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঁ:) এর জীবনের সরাসরি ধারা বিবরণী বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁর অনুরাগ-অনুভূতি, তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহনের ধরন, তাঁর নেতৃত্বের ধারা, তাঁর প্রেরণা ও অনুপ্রেরনা প্রদানের পন্থা, মানুষ ও জনসাধারণকে আকর্ষিত ও অনুপ্রাণিত করার কৌশল বর্ণনা করা হয়েছে।

 

ডাউনলোড করুন 

ডাউনলোড করুন MediaFire থেকে

 

 

অন্তর (ক্বালব) কঠিন হয়ে যায় কেন?

$
0
0

3572867869_f2bbf90f76

লেখক:আবুল কাসেম মুহাম্মাদ মাসুম বিল্লাহ| সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

 অন্তর (ক্বালব) কঠিন হয়ে যায় কেন?

মুসলিম উম্মাহ আজ যে সব মহাপরীক্ষা ও মহা মুছিবতে পতিত এবং কঠিন ও ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত  হয়েছে, তন্মধ্যে এমনই একটি রোগ হলো: অন্তর (ক্বালব) কঠিন হয়ে যাওয়া।

 

নিম্নলিখিত কারণে ক্বালব বা অন্তর কঠিন হয়ে যায়:-

- নামাযের জামা‘আতে হাযির হওয়ার ব্যাপারে অবহেলা ও গাফলতি করা এবং মসজিদে সকাল সকাল না যাওয়া বরং দেরী করা।

- কুরআনকে পরিত্যাগ করা অর্থাৎ বিনয়-নম্রতা আর মনোযোগ এবং চিন্তা গবেষণাসহকারে কুরআন তেলাওয়াত না করা।

- হারাম রুজি যেমন: সুদ, ঘুষ, মাল্টিপারপাস, ইন্স্যুরেন্স এবং বেচাকেনাসহ বিভিন্ন লেনদেনে প্রতারণা ও জালিয়াতি সহ অন্যান্য হারাম পদ্ধতিতে রুজি-রোজগার করার কারণে।

- অহংকার, বড়াই, প্রতিশোধপরায়ণতা, মানুষের দোষ-ত্রুটি বা অপরাধকে মাফ না করা, মানুষকে অবহেলা করে নিকৃষ্ট মনে করা, মানুষকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা।

- দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে ঝুঁকে পড়া, দুনিয়া দ্বারা প্রতারিত হওয়া এবং মৃত্যুকে, কবরকে এমনকি আখেরাতকে ভুলে যাওয়া।

- যে কোনো বেগানা নারীর দিকে তাকানো হারাম; যা অন্তরকে কঠোর করে দেয়।

- দাঁড়ি গজায়নি এখনো এমন সুন্দর ছেলের দিকে অযথা তাকানো হারাম; তাই সেটাও অন্তর কঠোর করে দেওয়ার অন্যতম কারণ।

- আমি নিজে প্রতিদিন কি কি খারাপ কাজ করলাম? নিজের সমালোচনা নিজে না করা, বরং মানুষের সমালোচনা করা।

- অনেক দিন দুনিয়ায় থাকবো, অনেক কিছুর মালিক হবো এমন ভুল ধারণা মনের ভিতর থাকা।

১০- আল্লার যিকির বেশী বেশী না করে বরং বেশী বেশী কথা বলা, বেশী বেশী হাসাহাসি-তামাশা এবং মশকারী বা মজাক করা।

১১- বেশী খাওয়া-দাওয়া করা।

১২- বেশী ঘুম যাওয়া।

১৩- মানুষের উপর জুলুম করা।

১৪- শরীয়তের কোনো আদেশ-নিষেধ লংঘন হওয়ার কারণ ব্যতীত অন্য কোনো কারণে রাগ করা।

১৫- ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার উদ্দেশ্য ব্যতীত কাফেরের দেশ ভ্রমণে বের হওয়া।

১৬- মিথ্যা, গীবত (পরচর্চা) এবং একজনের কথা অন্যের নিকট গিয়ে বলার মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করা।

১৭- খারাপ মানুষের সাথে উঠাবসাও চলাফেরা করা।

১৮- অন্য মুসলিমকে মনে মনে অথবা প্রকাশ্য হিংসা করা।

১৯- একজন মুসলিমের উন্নতি সহ্য করতে না পারা, বরং তার ধ্বংস কামনা করা।

২০- অন্য মুসলিম ভাইয়ের সাথে শত্রুতা করা, ঘৃণা করা এবং তাকে অপছন্দ করা।

২১- আপনার নিজের বা মুসলিম ভাইয়ের কোনো লাভ বা ফায়েদা ব্যতীত নিজের ও অপরের সময় নষ্ট করা।

২২- ইসলামী জ্ঞান শিক্ষা না করা এবং ইসলামী শিক্ষা হতে নিজকে দূরে সরিয়ে রাখা।

২৩- জাদুকর, গণক, জোতিষী, তন্ত্রমন্ত্রকারীর নিকট যাওয়া।

২৪- মাদক, নেশাজাতীয় দ্রব্য, বিড়ি-সিগারেট, হুক্কা, লতা ওয়ালা হুক্কা সহ যাবতীয় তামাক ও তামাকজাত এবং ক্ষতিকর দ্রব্য পান করা।

২৫- সকাল-সন্ধ্যার যিকরসমুহ পাঠ না করা।

২৬-  গান শোনা, যাবতীয় স্বল্পবসনা, চরিত্রহীন হারাম ফিল্ম দেখা, পতিত/ চটি পত্রিকা ম্যাগাজিন পাঠ করা।

২৭- আল্লাহর নিকট সর্বদা গুরুত্বসহকারে দো‘আ না করা।

মানুষ কষ্ট দিলে মনের ক্ষত সারাবেন যেভাবে

$
0
0

colorful-flowers-wallpaper_422_84115

মূল প্রবন্ধ : ইয়াসমিন মোজাহেদ | ভাষান্তর : মোঃ মুনিমুল হক |  সম্পাদনা : আব্‌দ আল-আহাদ

যখন ছোট ছিলাম, পৃথিবীটাকে মনে হতো একেবারেই নির্ঝঞ্ঝাট এবং খুব পরিপাটি একটা জায়গা। কিন্তু বড় হয়ে দেখলাম ব্যাপারটা মোটেও সেরকম নয়। ভাবতাম সবকিছুই ন্যায়নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ আমার মনে হতো, কারও প্রতি কখনো কোনোরূপ অন্যায় করা যাবে না। কোনো অন্যায় যদি হয়েই যায়, তাহলে সকল ক্ষেত্রেই সুবিচারের জয় হবে। নিজের এই নীতিবোধ অনুযায়ী, সবকিছু যেমনটি হওয়া উচিত তেমনটি ঠিক রাখার জন্য অনেক সংগ্রাম করেছি জীবনে। কিন্তু এই সংগ্রাম করতে গিয়ে জীবনের একটি মৌলিক সত্যকে উপেক্ষা করছিলাম আমি। আমার শিশুসুলভ আদর্শবাদের কারণে আমি বুঝতেই পারিনি, সৃষ্টিগতভাবেই এই পার্থিব জগতটা ত্রুটিযুক্ত। ঠিক যেভাবে আমরা মানুষরা সৃষ্টিগতভাবে অপূর্ণ, ত্রুটিযুক্ত। সবসময় অঘটন আর ঝামেলা লেগেই থাকে আমাদের জীবনে। এসব ঝামেলাই জড়িয়ে, জেনেই হোক, না-জেনেই হোক, ইচ্ছা কি অনিচ্ছায় হোক, অনিবার্যভাবেই আমরা মানুষের মনে কষ্ট দিয়ে ফেলি। বাস্তব হলো, পৃথিবীটা সবসময় ন্যায়নীতি দিয়ে চলে না।

তার মানে কি এই যে, আমরা অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই থামিয়ে দেবো, সত্যের পক্ষে হাল ছেড়ে দেবো? অবশ্যই না। এর মানে হলো, আমরা অবশ্যই এই পৃথিবী এবং আর সবকিছুকে কোনো কাল্পনিক বা অবাস্তব মানদণ্ডে বিচার করতে যাবো না। তবে এমনটি না-করাও সহজ না। কীভাবে আমরা এতো ত্রুটিময় এই পৃথিবীতে টিকে থাকবো, যেখানে মানুষ প্রতিনিয়ত পরস্পরকে হতাশায় ডুবাচ্ছে, এমনকি নিজ পরিবারের লোকেরাই মনে আঘাত দিয়ে মনটা ভেঙ্গে দিচ্ছে? সবচেয়ে কঠিন বিষয়টি হলো, আমাদের প্রতি কেউ অন্যায় করলে কীভাবে আমরা সেই অপরাধকে ক্ষমা করতে শিখব? কীভাবে আমরা নিষ্ঠুর না হয়েও দৃঢ় হতে পারি? অথবা কীভাবে দুর্বল না হয়েও মনের কোমলতাকে বজায় রাখতে পারি? কখন আমরা কোনো কিছুকে আঁকড়ে ধরে রাখবো? আর কখন সেটিকে বন্ধন থেকে মুক্ত করে দেবো? কখন বেশি বেশি যত্ন দেখালে তা বাড়াবাড়ি হয়ে যায়? কারও প্রতি মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা বলে কি কোনো জিনিস আছে?

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদেরকে প্রথমে নিজেরদের জীবনের গণ্ডি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমাদের খুঁজে দেখতে হবে, আমরাই প্রথম বা শেষ কিনা, যারা কষ্ট এবং অন্যায়ের শিকার। যে মানুষগুলো আমাদের আগে পৃথিবীতে ছিল তাদের জীবনের দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। তাদের সংগ্রাম এবং তাদের বিজয় নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে, কষ্ট ছাড়া কখনোই কোনো অগ্রগতি আসেনি এবং সাফল্যের একমাত্র পথ হলো সংগ্রাম। উপলব্ধি করতে হবে, জীবন সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো কষ্টভোগ করা এবং অন্যদের দেওয়া দুঃখকষ্ট এবং ক্ষতিকে জয় করা।

আমাদের নবীদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তসমূহ স্মরণ করলে আমরা দেখতে পাই যে, দুঃখকষ্ট ভোগ করা শুধু আমাদের জন্য কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মনে রাখবেন, নূহ (আ) তাঁর জাতির লোকদের দ্বারা ৯৫০ বছর ধরে অত্যাচারীত হয়েছিলেন। কুরআন আমাদের বলে :

“তাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়ও অস্বীকার করেছিল। তারা আমার বান্দাকে অস্বীকার করেছিল এবং এবং বলেছিল, ‘পাগল।’ আর তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।”
[সূরা আল-কামার; ৫৪ : ৯]

নূহের (আ) উপর এত বেশী অত্যাচার করা হয়েছিল যে:

“তিনি তার পালনকর্তাকে ডেকে বললেনঃ আমি পরাভূত, অতএব, তুমি সাহায্য করো।” [আল-কামার; ৫৪ : ১০]

নবীর (সা) কথাই মনে করে দেখুন, কীভাবে তাঁকে পাথর মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছিল। কীভাবে তাঁর সাহাবীদের প্রহার করা হয়েছিল। কীভাবে তারা অনাহারে দিন পার করেছিলেন। অন্য মানুষরাই তাদেরকে এভাবে কষ্ট দিয়েছিল। এমনকি আমরা অস্তিত্বে আসার পূর্বেই ফেরেশতারা মানুষের এই ধরণের চারিত্রিক দিকটি বুঝতে পেরেছিল। আল্লাহ্‌ যখন বললেন যে, তিনি মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন, তখন ফেরেশতারা প্রথম যে প্রশ্নটি করেছিল তা ছিল মানুষের ক্ষতিকর সম্ভাবনা সম্পর্কে। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন :

“আর স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফেরেশতাদের বললেন : ‘নিশ্চয়ই আমি যমিনে একজন খলিফা সৃষ্টি করছি’, তারা বলল, আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে তাতে ফাসাদ করবে এবং রক্ত প্রবাহিত করবে? আর আমরা তো আপনার প্রশংসায় তাসবীহ্‌ পাঠ করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই আমি জানি যা তোমরা জানো না।’ ” [আল-বাকারাহ্‌; ২ : ৩০]

মানুষ জাতির একে অপরের বিরুদ্ধে ঘৃণিত অপরাধ সংঘটনের এই প্রবণতা একটি দুঃখজনক বাস্তবতা। তবে আমাদের অনেকেই অনেক সৌভাগ্যবান। আমাদের অধিকাংশকেই কখনো এমন কোনো দুঃখকষ্টের শিকার হতে হয়নি অন্যরা প্রতিনিয়তই যার শিকার হচ্ছে। আমাদেরকে অনেককেই কোনোদিন নিজের চোখে দেখতে হবে না যে, আমাদের পরিবার পরিজনের কাউকে নির্যাতন করে খুন করা হচ্ছে। তারপরও এমন মানুষ খুব কমই আছে, যারা বলতে পারে, তারা কোনোদিনও কোনোভাবে অন্য কারও দ্বারা কষ্ট পায়নি। সুতরাং, যদিও আমাদের অনেকেই কোনোদিন জানবে না অনাহারে ক্ষুধার যন্ত্রণায় মরার কষ্টটা কী; নিজের চোখের সামনে নিজের বাড়িঘর ধ্বংস করতে দেখার অনুভূতিটা কেমন, তথাপি আমার অনেকেই জানি আহত হৃদয়ের কান্নার অনুভূতিটা কেমন।

আচ্ছা, এসব কি এড়ানো সম্ভব? আমার মনে হয়, কিছুটা হলেও সম্ভব। আমরা কখনোই সকল দুঃখকষ্টকে এড়াতে পারব না। তবে আমদের প্রত্যাশা, আমাদের প্রতিক্রিয়া এবং আমাদের মনোযোগকে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে অনেক ধ্বংসযজ্ঞই এড়ানো সম্ভব।

উদাহারনস্বরূপ বলা যায়, আমদের আশা, ভরসা, বিশ্বাস — সবকিছুকে অন্য একজন মানুষের উপর সমর্পণ করাটা একেবারেই অবস্তবিক এবং ডাহা বোকামি। আমদের মনে রাখতে হবে, ভুল করা মানুষের সৃষ্টিগত স্বভাব। তাই আমাদের চূড়ান্ত বিশ্বাস, আস্থা, এবং প্রত্যাশা শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র প্রতি সমর্পণ করা উচিত। আল্লাহ্‌ বলেন :

“যে ব্যক্তি তাগূতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। আর আল্লাহ্‌ সর্বশ্রোতা এবং সর্বজ্ঞ।” [আল-বাকারাহ্‌; ২ : ২৫৬]

“আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান এমন মজবুত এক রশি যা ছিন্ন হবার নয়।” — শুধু এই কথাটি যদি আমরা স্মরণে রাখি, তাহলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

একথা বলার অর্থ কিন্তু এই নয় যে, আমরা ভালোবাসবো না বা ভালোবাসলেও কম করে বাসবো। তবে কীভাবে ভালোবাসবো সেটাই হলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কাউকেই বা কোনো কিছুকেই সর্বোচ্চ ভালোবাসা যাবে না। অন্তরে আল্লাহ্‌ ব্যতীত আর কোনো কিছুকেই অগ্রাধিকার দেওয়া যাবে না। আর আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোনো কিছুকেই এত বেশী ভালোবাসা যাবে না যাতে করে ওই বস্তু ছাড়া জীবন চলা আমাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই ধরনের “ভালোবাসা” ভালোবাসাই নয়। এটা এক ধরনের পূজা করা। এই ভালোবাসায় কষ্ট ছাড়া আর কিছু নেই।

তারপরও যদি কেউ এমন করে ভালোবাসে এবং অন্যের দ্বারা আঘাত বা কষ্ট পায়, তাহলে অনিবার্য পরিণতিটা কী দাঁড়ায়? সবচেয়ে কঠিন কাজটা আমরা কীভাবে করতে পারি? কীভাবে আমরা অন্যকে ক্ষমা করতে শিখব? কীভাবে মনের ক্ষতগুলোকে সারিয়ে তুলে, তাদের সাথে সদাচরণ বজায় রাখব যারা নিজেরাই আমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে না?

আবূ বাক্‌র (রা) এর ঘটনাটি ঠিক এমন পরিস্থিতির একটি চমৎকার উদাহরণ। যখন তাঁর মেয়ে, ‘আয়েশা (রা) সম্পর্কে জঘন্যতম অপবাদ রটানো হলো, তিনি জানতে পারলেন, এই অপবাদটা রটিয়েছিল মিস্‌তাহ্‌ নামে তারই এক চাচাতো ভাই যাকে তিনি বহুদিন ধরে আর্থিকভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছিলেন। সঙ্গত কারণেই আবূ বাক্‌র অপবাদ আরোপকারীর সাহায্য বন্ধ করে দিলেন। সামান্য সময় পরেই আল্লাহ্‌ নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ করলেন :

“আর তোমাদের মধ্যে যারা মর্যাদা ও প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন এমন কসম না করে যে, তারা নিকটাত্মীয়দের, মিসকীনদের ও আল্লাহ্‌র পথে হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না। আর তারা যেন তাদের ক্ষমা করে এবং তাদের দোষক্রটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি কামনা করো না যে, আল্লাহ্‌ তোমাদের ক্ষমা করে দেন? আর আল্লাহ্‌ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [আন-নূর; ২৪:২২]

এই আয়াত শুনেই আবূ বাক্‌র (রা) বুঝতে পারলেন যে, তিনি নিজেই আল্লাহ্‌র ক্ষমা চান। তাই তিনি শুধু সেই লোককে সাহায্য দেওয়া চালুই করলেন না, এখন আগের চেয়ে বেশি করে দিতে লাগলেন।

মু’মিন হওয়ার মূলেই হলো এইভাবে ক্ষমা করে দেওয়া। এই ধরণের মু’মিনদের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ্‌ বলেন :

“আর যারা গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে বেঁচে থাকে এবং যখন রাগান্বিত হয় তখন তারা ক্ষমা করে দেয়।” [আশ-শূরা; ৪২:৩৭]

‘আমি নিজেও  ভুল করি, অন্যদের কষ্ট দেয়’ — নিজের সম্পর্কে এই ধরণের সচেতনতা বোধ দ্বারা অন্যকে তাৎক্ষনিকভাবে ক্ষমা করে দেওয়ার ক্ষমতাটা উদ্বুদ্ধ হওয়া উচিত। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই বিষয়টির মাধ্যমেই আমাদের বিনম্রতা উজ্জীবিত হওয়া উচিত যে, আমারা প্রতিদিন পাপ করার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র প্রতি অন্যায় করছি। আল্লাহ্‌র সাথে তুলনা করলে মানুষ তো কিছুই না। তারপরও বিশ্বজগতের প্রতিপালক, আল্লাহ্‌ আমাদের প্রতিনিয়ত ক্ষমা করে দিচ্ছেন। তাহলে ক্ষমা না করে মানুষকে বেঁধে রাখার আমরা কে? নিজেরা যদি আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা পাওয়ার আশা করি, তাহলে আমরা অন্যদেরকে ক্ষমা করতে পারি না কেন? আর এ কারণেই নবী (সা) আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন :

“যারা অন্যের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ্‌ও তাদের প্রতি দয়া করবেন না।” [মুসলিম; অধ্যায় ৩০, হাদীস নং ৫৭৩৭]

আল্লাহ্‌র দয়া লাভের আশা যেন আমাদের অন্যদের প্রতি দয়া করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং একদিন সেই দুনিয়ার নিয়ে যায় যা বাস্তবিক অর্থেই নিখুঁত, ত্রুটিহীন, পরিপূর্ণ, অনুপম, অতুলনীয়।

কার্যকর অধ্যনের ৫টি ফলপ্রসূ বৈশিষ্ট্য

$
0
0

লেখক : ইয়াকুব আলী | ভাষান্তর : মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ | সম্পাদনা : আব্‌দ আল-আহাদ

crop380w_istock_000002193842xsmall-books

 

অনেকেই বই পড়েন। কিন্তু যখন জিজ্ঞেস করা হয় কী পড়েছেন, তখন মস্তিকের সাথে যুদ্ধ করতে হয়! আপনিও কি তেমন পাঠক? আপনি কি শেখার অনেক আগ্রহ নিয়ে দীন শিক্ষার ক্লাসে বসছেন কিন্তু মনে হচ্ছে কিছুই শিখতে পারেননি? ক্লাসে বসে কি মণে হয়, “থাক, এটা লিখে রাখার দরকার নেই। এটা আমি কখনোই ভুলবো না,” কিন্তু একসপ্তাহ পরে ওই ক্লসের একটি বাক্যও আপনি স্মরণ করতে পারছেন না?

আপনি যখনই কোনো ক্লাসে যাচ্ছেন, বই পড়া শুরু করছেন কিংবা এমপি-থ্রী প্লেয়ারে ইসলামী বক্তৃতা শুনতে যাচ্ছেন, আপনাকে কয়েকটি কল্যাণমুখী মনোভাব নিয়ে সেগুলো শুরু করতে হবে। নীচে এমনই কয়েকটি প্রয়োজনীয় মনোভাব তুলে ধরা হলো :

. ইখ্‌লাস (আন্তরিকতা বা অন্তরের বিশুদ্ধতা)

নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, “আমি কেন এটা শিখছি বা পড়ছি?” “এটা কি এজন্য যে, লোকে আমাকে জ্ঞানী বলে ডাকবে?” “এটা কি বিতর্কে জয়ী হওয়ার জন্য?” “এটা কি আমার প্রতি মানুষের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য?” যদি এগুলোর কোনো একটি আপনার ক্ষেত্রে সত্য হয়, তাহলে এই পড়াশোনা দিয়ে আপনি সত্যিকার অর্থে মোটেই উপকৃত হবেন না।

ইবনু মাসুদ (রা) বলেন, “জ্ঞান কোনো ধারাবাহিক বর্ণনা নয়; বরং তা অন্তরে স্থাপিত এক আলো।”

“নিশ্চয়ই যারা জ্ঞানী তারাই আল্লাহকে ভয় করে।” [সূরা আল-ফাতির; ৩৫:২৮]

সুফিয়ান আস-সাওরী বলেন, “জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব শুধুমাত্র একারণেই যে, তা ব্যক্তিকে আল্লাহর ভয় ও আনুগত্য শেখায়, নয়তো তা (জ্ঞান নয়) অন্যকিছু।”

. নিয়্যত (মনের উদ্দেশ্য)

প্রথমেই যে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে তা হলো, আপনার জ্ঞানার্জন হলো একটি ইবাদত কর্ম। এটি ব্যক্তিগত তথা গোপন ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) এবং আপনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

সুফিয়ান আস-সাওরী বলেন, “আমার নিয়্যতের (মনের ইচ্ছা) চেয়ে আমার কাছে আর কিছু বেশি কঠিন মনে হয়নি।”

নিজের প্রকাশ্য ও গোপন উভয় ধরণের ‘আমলের দিকে লক্ষ করুন। প্রকাশ্য ‘আমলের চেয়ে গোপন ‘আমলের সংখ্যা কি বেশি? গোপন ‘আমলের চেয়ে প্রকাশ্য ‘আমল করতেই কি আপনার বেশি আগ্রহ জাগে? যদি তা-ই হয়, তবে আপনাকে নিয়্যতের (মনের উদ্দেশ্য) প্রতি গভীরভাবে মনোযোগী হতে হবে। আপনি যে ‘আমল করছেন, তা কার জন্য? মানুষ নাকি আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) জন্য?

. তাকওয়া

যে বক্তি তার প্রতিপালককে স্মরণ করে এবং যিনি তা করেন না, তাদের প্রথম জন জীবিত আর পরের জন মৃতের ন্যায়।

জ্ঞান শিক্ষার্থী আল্লাহর নামে জ্ঞানার্জন করবেন এবং খেয়াল রাখবেন, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) তাকে দেখছেন। যদি আল্লাহ চান তো, এতেই আপনার পড়াশোনায় বরকত নেমে আসবে।

“যিনি জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে সফল হতে চান আবার একই সাথে অতিমাত্রায় পানাহার ও নিদ্রাকে সমান গুরুত্ব দেন, তিনি আসলে অসম্ভব সাধনের চেষ্টা করছেন।” [ ‘The Manners of the Knowledge Seeker’ বই থেকে নেওয়া]

. নীরবতা

অনেক কিছু জানার পর সেগুলো মুখে প্রকাশ করে নিজের জ্ঞান জাহির করার ইচ্ছা জাগবে। অনেক সময় শোনার চেয়ে বলতেই বেশি ভালো লাগবে। এমন মানুষের জন্য সতর্কবাণী:

“যে কিয়ামতে বিশ্বাস করে, সে ভালো কথা বলুক অথবা নিশ্চুপ থাকুক।” [আল-বুখারি; খণ্ড ৮, অধ্যায় ৭৬, হাদীস নং ৪৮২]

ইমাম শাফে‘ঈ বলেন, “আপনি যদি কিছু বলতে চান, তবে  [আগে] চিন্তা করুন। যদি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, এতে কোনো ক্ষতি নেই, তবে বলুন। যদি সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে, আপনার কথায় ক্ষতি হবে, তবে বলবেন না।

লোকমানকে (রা) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “আপনি কীভাবে এত জ্ঞানী হলেন?” তিনি উত্তরে বলেছিলেন: “ আমার যা প্রয়োজন নেই, আমি তা চাই না, আর যা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমি তা বলি না।” [‘The Manners of the Knowledge Seeker’ বই থেকে নেওয়া]

৫. বিনম্রতা

আমাদের থাকতে হবে এমন আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করা এবং মনে রাখা যে, এমন অনেকেই আছেন যিনি আমার থেকে বেশি জ্ঞানের অধিকারী।

ইমাম শাফে‘ঈ বলেছেন: “আমি ইমাম মালিকের (র) উপস্থিতিতে বইয়ের পাতা খুবই আস্তে করে, নিঃশব্দে উল্টাতাম যাতে তিনি শব্দে বিরক্ত না হন; এটা করতাম তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার কারণে।”

ইবনু ‘আব্বাস বলেন: “ছাত্র হিসেবে আমি নিজেকে বিনয়ী রেখেছিলাম। তাই শিক্ষক হিসেবে আমি সম্মানিত হয়েছি।”

শেষ কথা

কেউ জ্ঞানার্জন করলে, তার জ্ঞান তাকে বনয়ী করবে। আপনি যদি এমন কোনো জ্ঞানী ব্যক্তিকে দেখে থাকেন যার আচরণ মন্দ, তাহলে তার ক্ষেত্রে বলা যায়, ওই জ্ঞানী ব্যক্তি মুখ দিয়ে যা বলে অন্তরে তা প্রত্যাখ্যান করে। যে জ্ঞান তার জীবনে এসেছে, তা আসলে আন্তরিক, উপকারী জ্ঞান নয়।

নিজেকে কল্যাণমুখী, চৌকস করে গড়তে হলে শিষ্টাচার শিখতে হবে যা হবে জ্ঞানভিত্তিক শিষ্টাচার।

আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারাক বলেন : “আমি শিষ্টাচার শিখতে ত্রিশ বছর ব্যয় করেছি আর জ্ঞানার্জনে ব্যয় করেছি বিশ বছর।”

 

এখন থেকে আমরা যখন পড়তে বসবো, আমরা যেন উল্লিখিত পাঁচটি মনোভাব সঙ্গে নিয়ে পড়তে বসি। যাতে করে আমরা আমাদের প্রচেষ্টা থেকে সর্বোচ্চ কল্যাণ অর্জন করতে পারি।

 

পর্নোগ্রাফী দেখলে মস্তিষ্ক যেভাবে বদলে যায়

$
0
0

মূল : মোহাম্মাদ গিলান, ইউনিভার্সিটি অব ভিক্টোরিয়া, স্নায়ুবিজ্ঞান | ভাষান্তর ও সম্পাদনা : আব্‌দ আল-আহাদ

indefenseof-bingetv-500

স্নায়ুবিজ্ঞান (Neuroscience) এখন স্বীকার করে যে, মানুষের মস্তিষ্ক অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন। অর্থাৎ, অভিজ্ঞতা লাভের মধ্যদিয়ে মস্তিষ্কে পরিবর্তন ঘটে এবং আমরা যা দেখি, শুনি বা জানি, তার সবকিছুর সাথেই মস্তিষ্কের সংযোগ গড়ে ওঠে। দর্শন ক্লাসের আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে নতুন কোনো শহরের পথঘাট চেনা, এমনকি আপাতদৃষ্টিতে নিষ্ক্রিয়ভাবে বসে থেকে কোনো গান শোনা কিংবা টিভি দেখা — আমাদের প্রতিটি কাজের সাথেই মস্তিষ্কের তাৎক্ষনিক সংযোগ গড়ে ওঠে এবং মানুষ হিসেবে আমরা কে, কেমন, এই সংযোগগুলোই সেটা নির্ধারণ করে দেয়। পর্নোগ্রাফী দেখা একটি নীরব অথচ ভয়ঙ্কর সমস্যা যা মহামারীর আকার ধারণ করেছে। এর মাধ্যমে নারীদের চাইতে পুরুষরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

এই বিষয়টির ক্ষতিকারক দিক সংক্রান্ত অধিকাংশ নিবন্ধগুলোতে বিষয়টি সম্পর্কে সাধারণত মনস্তাত্ত্বিক এবং/অথবা সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করা হয়। তবে বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে স্নায়ুবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে পর্নোগ্রাফী দেখার ক্ষতিকর প্রভাবগুলো সম্পর্কে আলোপাত করা হবে।

প্রচলিত যে মডেলটির (model) মাধ্যমে মানুষের শেখা এবং মনে রাখার প্রক্রিয়াটিকে ব্যাখ্যা করা হয়, সেই মডেলটির ভিত্তি হলো সিন্যাপটিক প্লাসটিসিটি (synaptic plasticity)। সিন্যাপটিক প্লাসটিসিটি হলো মস্তিষ্কের সেই ক্ষমতা যার মাধ্যমে অভিজ্ঞতায় সাড়া দিতে মস্তিষ্ক তার নিউরনসমূহের (মস্তিষ্ক কোষ) মধ্যকার সংযোগগুলোর শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কি পরিমাণ এবং কোন ধরণের স্নায়বিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে এবং সেইসাথে কি পরিমাণ নিউরোট্রান্সমিটারের (neurotransmitter – আনবিক গঠন সম্পন্ন স্নায়বিক সংবাহক) নির্গমন ঘটবে, তা নিয়ন্ত্রণ করাও এই ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত। অধিকাংশ মানুষ ডোপামিন সম্পর্কে যা কিছু জানে তা বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তি যেমন, মুহাম্মাদ আলি বা মাইকেল জে. ফক্সের পারকিন্‌সন্‌ (Parkinson) রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থেকে। শরীরে ডোপামিনের কার্যকারিতায় ত্রুটি দেখা দিলে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়।

মস্তিষ্কের একটি অত্যাবশ্যক নিউরোট্রান্সমিটার হলো ডোপামিন (dopamine)। এর ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি সচেতন অঙ্গসঞ্চালন, অনুপ্রেরণা দান, প্রতিদান দেওয়া, শাস্তি দেওয়া এবং শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। শিশুদের এডিএইচডি (ADHD – Attention Deficit-Hyperactivity Disorder), বার্ধক্যজনিত স্মৃতিশক্তি হ্রাস (cognitive decline) এবং বিষণ্ণতার (depression) ক্ষেত্রেও ডোপামিনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

122366-425x425-crack3আনন্দ অনুভব, প্রতিদান, শিক্ষণ প্রক্রিয়া ইত্যাদিতে ডোপামিনের ভূমিকা অবিচ্ছেদ্য। কোকেইনের মতো ড্রাগগুলোর কার্যকারিতা ডোপামিনারজিক সিস্টেম (Dopaminergic System) কেন্দ্রিক। এই ড্রাগগুলোর কার্যকারিতার ফলে প্রচুর পরিমাণে ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটে। ফলে শরীরে “উচ্চমাত্রার শক্তি বা আনন্দ অনুভূতি” সৃষ্টি হয় যা ক্রমেই আসক্তিতে পরিণত হয়। একাধিক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, ডোপামিন আনন্দের আবহ তৈরি করে, নয়তো প্রত্যক্ষ আনন্দ দানে ভূমিকা রাখে। মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলের উপর ভিত্তি করে, চরম আনন্দ লাভের মুহূর্তে, নয়তো আনন্দ লাভের পরে, ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটে। এই নিঃসরণের সময়, ডোপামিন শারীরিক ক্রিয়ার সাথে মস্তিষ্কের নতুন সংযোগগুলোকে আরও বেশি শক্তিশালী (strengthen) এবং দৃঢ় (reinforce) করে যা ব্যক্তিকে পুরনায় ওই আনন্দ লাভের জন্য একই কাজ করতে উৎসাহ যোগাতে থাকে।

পর্নোগ্রাফীর সাথে এর সম্পর্কটা কোথায়? পর্দায় যৌন ক্রিয়াকলাপের দৃশ্য দেখলে যৌন উত্তেজনা তৈরি হয়, যা ডোপামিনারজিক সিস্টেমকে সক্রিয় করে তোলে। কোকেইনের মতো ড্রাগগুলো ঠিক এই কাজটিই করে থাকে। পর্দায় যৌন ক্রিয়াকলাপের দৃশ্য দেখার ফলে মস্তিকে নতুনভাবে তৈরি হওয়া সংযোগগুলো প্রচুর পরিমাণে নিঃসৃত ডোপামিনের দ্বারা আরও বেশি শক্তিশালী হয়। ফলে পর্দায় দেখা দৃশ্যগুলো ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিপটে না-গিয়ে — যেক্ষেত্রে দৃশ্যগুলো পর্দা বন্ধ হওয়ার পর মন থেকে মুছে যেতো — ডোপামিনের দৃঢ়ীকরণ (reinforcement) প্রক্রিয়ার কারণে স্থায়ী স্মৃতিপটে প্রবেশ করে। এখানে দৃশ্যগুলো দর্শকের মনে রিপ্লেই মোডে (replay mode – বারবার চোখে ভাসতে থাকে) দৃঢ়ভাবে গেঁথে যায়। এক্ষেত্রে সমস্যার কথা হলো, কোনো কিছুকে যতবেশি স্মরণ করা হবে, মস্তিষ্কে তা ততবেশি স্থায়ী রূপ লাভ করতে থাকবে। স্কুলের ওই দিনগুলোর কথা মনে করে দেখুন — পরীক্ষার পড়া মুখস্ত করতে গিয়ে একটা বিষয় বারবার পুনরাবৃত্তির পর তা মাথায় গেঁথে যেতো!

পর্নোগ্রাফী হলো অলীক কল্পনা (fantasy)। প্রতিটি নতুন দৃশ্যে একজন নতুন নারীকে দেখে দর্শকের ভ্রম জাগে যেন প্রতিবার সে নতুন একজন নারীর সাথে সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছে। পর্নোগ্রাফীর “তারকা” অভিনেত্রীরা ছবিতে পুরুষদের কাছে নিজেদেরকে মর্যাদাহীন এবং অবমাননাকর যৌনকর্মের শিকারে পরিণত করে। এসব যৌন আচরণ মানসিকভাবে সুস্থ অধিকাংশ মানুষের কাছে সম্পূর্ণরূপে অশ্লীল, জঘন্য। পর্নোগ্রাফীর চিত্রনাট্যের কাজই হলো দুএকটা পরিচিত এবং স্বাভাবিকভাবে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী আচরণের মাঝে এমন কিছু যৌন আচরণকে ঢুকিয়ে দেওয়া যেগুলো যৌনভাবে সুখকর নয়। আর এভাবেই দর্শক নতুন নতুন যৌন আচরণের সাথে পরিচিত হয়ে থাকে। পর্দা থেকে অবাস্তব কল্পনার পাশাপাশি এক ধরনের তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ (electromagnetic wave) বিচ্ছুরিত হয় যা মস্তিষ্কে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়। ফলে ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটে। পরিণতিতে, এক ধরনের বাস্তব অনুভূতির তৈরি হয় ঠিকই, তবে যে আনন্দ এবং তৃপ্তিবোধ তৈরি হয়, তা নিজেকে ধোকা দেওয়া ছাড়া কিছু নয়। ডোপামিন নতুন করে পাওয়া যৌনতৃপ্তি সাথে সাথে মস্তিষ্কের সংযোগসমূহকে শক্তিশালী করে। ফলে যা ঘটে তা হলো, ব্যক্তি তখন তার স্ত্রীকে নিজের অবচেতন মনে জমে থাকা কল্পিত যৌন আচরণে লিপ্ত হওয়ার আহ্বান করে।

মস্তিষ্কে সংঘটিত ঘটনা প্রবাহ খুবই যৌগিক আবার সরলও। পর্নোগ্রাফী দেখার ফলে সিন্যাপটিক প্লাসটিসিটি মস্তিষ্কে নতুন সংযোগ তৈরি করে। ফলে নতুন করে লাভ করা স্মৃতিগুলো সংরক্ষিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা যেহেতু যৌন উত্তেজনার সাথে সম্পৃক্ত, তাই ডোপামিন নিঃসরণের মাধ্যমে নতুন সৃষ্ট সংযোগগুলো বহুগুণ বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে এবং  পর্দায় দেখা দৃশ্যগুলো স্থায়ী স্মৃতিপটে সংরক্ষিত হওয়ার ফলে দুই ধরণের ঘটনা ঘটে :

১) কোকেইন মস্তিষ্কের যে গঠনতন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করে, পর্নোগ্রাফীও ঠিক সেই গঠনতন্ত্রকেই উদ্দীপ্ত করে। ফলে আসক্তির জন্ম হয়।

২) পুরুষ প্রায়ই তার স্ত্রীর সাথে এসব দৃশ্যের পুনর্মঞ্চায়ন করতে চায় যার অনিবার্য পরিণাম হতাশা। এই পুনর্মঞ্চায়নের প্রত্যাশা পূরণ হবার নয়। কারণ একাধিক নতুন নতুন নারীর পরিবর্তে স্ত্রী শুধু একজন। আরও ভয়ানক বিষয় হলো, এই একজন নারীর যৌন বাচনভঙ্গি, আচরণ, শারীরিক আবেদন ইত্যাদি পুরুষের মনে জমে থাকা ওইসব নতুন নতুন নারীর সাথে কখনোই মিলবে না। হয়তো প্রথম প্রথম দুএকবার পুনর্মঞ্চায়ন বেশ উত্তেজনাকর এবং আনন্দঘন হতে পারে। তবে শীঘ্রই বাস্তবতা এসে হানা দেবে এবং যখন আনন্দ পাওয়া যাবে না, ডোপামিনের নিঃসরণও তখন বন্ধ হয়ে যাবে।

দুঃখজনক হলো, ঘটনার এখানেই শেষ নয়। অবাস্তব এবং কাল্পনা নির্ভর প্রত্যাশার কারণে বাস্তবে যখন হতাশার সৃষ্টি হবে, মস্তিষ্ক তখন ডোপামিনের নিঃসরণ শুধু বন্ধই করবে না; বাস্তবিক অর্থে, এই নিঃসরণ স্তর তখন সর্বনিম্ন স্তরেরও নীচে নেমে গিয়ে বিষণ্ণতার স্তরে গিয়ে পৌঁছবে। ফলে দাম্পত্য জীবনে হতাশা, অতৃপ্তি এবং অশান্তির জন্ম হবে। কারণ স্ত্রীকে সে “যেভাবে প্রত্যাশা করে, সেভাবে পায় না।” অনেক নারী নিজেদেরকে আরও বেশি আবেদনময়ী করার চেষ্টা করা সত্ত্বেও, এমনকি স্বামীদের মনের মতো করে আত্মমর্যাদাহীন, বিকৃতরুচির যৌনকর্মের জন্য নিজেদেরকে স্বামীদের হাতে তুলে দিলেও, পর্নোগ্রাফীতে আসক্ত স্বামীরা খুব সামান্য সময়ের জন্যই আনন্দ লাভ করবে এবং অল্প সময়েই আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ফলে সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও স্ত্রী নিজেকে অনাকর্ষণীয় এবং আবেগিক দিক থেকে পরিত্যক্তা মনে করবে। অথচ সে জানবেও না যে, পর্নোগ্রাফীর ডোপামিনের সাথে সে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।

এই সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, মস্তিষ্ক একটি সামগ্রিক সত্ত্বার মতো কাজ করে; এর কার্যকারিতার পরিধি হলো সর্বব্যাপী। ফলে মস্তিষ্কের কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের পরিবর্তন হলে অন্যান্য অংশও প্রভাবিত হয়। পর্নোগ্রাফী দেখার মাধ্যমে আক্ষরিক অর্থেই পুরো মস্তিষ্কের সকল স্নায়বিক সংযোগগুলোর পুনর্বিন্যাস ঘটে। ফলে মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশ এবং তাদের কর্মদক্ষতার উপর কেমন প্রভাব পড়ে, তা গবেষণার ভিন্ন একটি ক্ষেত্র যা গভীর মনোযোগের দাবি রাখে।

স্নায়ুবিজ্ঞান পর্নোগ্রাফীতে আসক্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে বেশ পীড়াদায়ক চিত্র তুলে ধরলেও, এটি পুরোপুরি দুঃসংবাদ নয়। যদিও পর্নোগ্রাফী এবং কোকেইন মস্তিষ্কের একই গঠনতন্ত্রকে আক্রমণ করে, তথাপি দুটির পরিণতি পুরোপুরি এক নয়। মস্তিষ্কের সংশ্লিষ্ট গঠনতন্ত্রকে বিষমুক্ত করার জন্য, কোকেইনে আসক্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই একটি সুশৃঙ্খল এবং ধারাবাহিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অন্যথায়, তার জীবনই ঝুঁকিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে, অনেক মানুষ যারা পর্নোগ্রাফী দেখার বাস্তব এবং সুস্পষ্ট ক্ষতির দিক সম্পর্কে জেনে গেছে, তারা কোনো রকম নেতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক বিপর্যয়ের শিকার না হয়েই, তাৎক্ষনিকভাবে পর্নোগ্রাফী দেখা বাদ দিতে পারে। এজন্য প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে এবং নিজেকে নানা রকম কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রাখতে হবে। প্রথম প্রথম অতীতের দেখা পর্নোগ্রাফীর মনোযোগ বিনষ্টকারী দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভাসতে থাকবে যা পর্নোগ্রাফী পরিত্যাগের ক্ষেত্রে ব্যক্তির ইচ্ছা এবং উদ্যমের জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা। তবে সুখের কথা হলো, পর্নোগ্রাফী দেখার কারণে মস্তিস্কের স্নায়বিক সংযোগগুলোর যেভাবে পুনর্বিন্যাস ঘটেছিল, সেই পুনর্বিন্যাস ঘটানো আবারও সম্ভব। মস্তিষ্ক খুবই কর্মদক্ষ একটি অঙ্গ যা অব্যবহৃত সংযোগগুলো থেকে মুক্ত হতে পারে। ব্যক্তি যতই পর্নোগ্রাফীর সংযোগগুলোকে পুনরুদ্দীপ্ত না-করে থাকবে, মস্তিষ্কের পক্ষে ওইসব সংযোগগুলো পরিত্যাগ করার সম্ভাবনাও তত বেশি। আবার পূর্বের অভিজ্ঞতায় জড়ালে এবং মস্তিষ্ককে যৌন আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিষয়ে ব্যস্ত রাখলে, অনিবার্যভাবেই তা অন্যান্য সংযোগগুলোকে পুনরুদ্দীপ্ত করবে। কর্ম সম্পাদনের জন্য মস্তিষ্কের শুধু সময় এবং পছন্দ প্রয়োজন। ব্যক্তি তার মস্তিষ্কে যে বিষয়টি বারবার সক্রিয় করবে, মস্তিষ্ক সেটিকেই তার পছন্দ হিসেবে গ্রহণ করবে।

Source: http://www.virtualmosque.com/ummah/community/how-watching-pornography-changes-the-brain/

বইঃ Enjoy Your Life (Bangla Version) – Exclusive

$
0
0

লেখকঃ ড. মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আল আরিফী – Shaikh Dr. Muhammad ibn Abdur Rahman Al-’ArifiEnjoy Your Life Bangla 1

Enjoy Your Life – জীবনকে উপভোগ করুন| ফাইল সাইজঃ ২১ এমবি | পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৫৯২

সারা বিশ্বে এই বইটির প্রায় ২.৫ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ এই বইটি নবীজির (সা) জীবন এবং ইসলামের সমৃদ্ধ সোনালি অতীত থেকে নেওয়া বেশকিছু ঘটনার এক অনবদ্য সংকলন। তাছাড়া বইটিতে লেখক জীবনের এমন কিছু ঘটনা টুকরো স্থান পেয়েছে যেগুলো পাঠকের চিন্তা জগতকে আলোড়িত করবে।

বইটির মৌলিক উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন আত্ম-উন্নয়নমূলক, সামাজিক দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে জীবনকে উপভোগ করা যায় সে সম্পর্কে পাঠককে দিকনির্দেশনা প্রদান করা।

বইটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং মনোমুগ্ধকর দিকটি হলো বইটিতে সামাজিক দক্ষতার সর্বোত্তম ব্যবহার আমাদের জীবনে কী পরিমাণ কল্যাণ বয়ে আনতে পারে তা নবীজি (সা) এবং তাঁর সাহাবা (রাঃ)  জীবন থেকে উদাহরণসহ দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। বইটি যেমন আত্ম-উন্নয়নের পথে একটি বাস্তবিক এবং সুপরিকল্পিত দিকনির্দেশিকা, ঠিক একইভাবে ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর এক অমূল্য রত্নভাণ্ডার। বইখানি পাঠকের আত্ম-সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তার আত্মার পুষ্টি যোগাবে এবং তার মননকে করবে শক্তিশালী।

Enjoy Your Life – Bengali
Enjoy Your Life – MediaFire
Enjoy Your Life – English Version

অনলাইনে অর্ডার করুন, বইটি হাতে পেয়ে টাকা পরিশোধ করুন। এটা ঝামেলাহীন।  বইটির ইংলিশ ভার্সন অর্ডার করতে পারবেন।

Untitled-1

লেখক পরিচিতি

areefi

Shaikh Dr. Muhammad ibn Abdur Rahman Al-’Arifi
(Professor at King Saʿud University – Member of Muslim Scholars Association)

Academic Qualifications:
• Ph.D. in Islāmic Theology: Islāmic Creed and Contemporary Sects.
The title of his thesis: “The Views of Shaykh al-Islām ibn Taymiyyah Regarding Sufism, a Collection and Academic Study.” It was awarded “Excellent with First Class Honors” in 1421 AH (2001), from Imām Muhammad b. Saʿud Islāmic University in Riyadh.
• Master’s Degree in Islāmic Theology: Islāmic Creed and Contemporary Sects.
The title of his thesis: “Ibn al-Qayyim’s al-Kāfiyah al-Shāfiyah fil Intiṣār lil Firqatin Nājiyah, Manuscript Authentication and Academic Study.” It is more famously known as “Nūniyat ibn al-Qayyim.” It was awarded “Excellent with First Class Honors” in 1416 AH (1996), from Imām Muhammad b. Saʿud Islāmic University in Riyadh.
• Bachelor’s Degree in Islāmic Theology, 1411 AH (1991), from Imām Muhammad b. Saʿud Islamic University in Riyadh.

Official Website: http://arefe.ws/en/

খাদ্য অপচয়

$
0
0

লেখক: শরীফ আবু হায়াত অপু

WEBgarbage1400_edited-2

২০০৫ সালের কথা। দীপালিদের বাসায় নিয়ম ছিল যে সে খাবে রাতের ভাত, আর দুপুরে খাবে তারভাই। এই নিয়মের পিছনে জিরো ফিগারের বাসনা না – ছিল তার বাবার চাল কেনারঅক্ষমতা। একদিন সন্ধ্যায় দীপালীর ভাই এমনই ক্ষুধার্ত ছিল যে সে তার বোনেররাতের ভাগটুকু খেয়ে নেয়। প্রায় ২৪ ঘন্টার অভুক্ত দীপালি যখন দেখে তারভাত তার আপন ভাই চুরি করেছে তখন অভিমানে তার কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে। আরকোনদিন যেন বাবা-মার কাছে ভাত না চাইতে হয়, তাই সে কন্ঠে কাপড় জড়িয়েঝুলে পড়ে। জীবনের মত সে তার ভাগের ভাতটা ভাইকে দিয়ে যায়।

আমরা জানি আত্মহত্যা মহাপাপ। তবে আমরা এটা জানিনা যে আজ রাতে আমাদের হাঁড়িধোয়ার সময় যে ভাতগুলো ফেলে দেয়া হবে তাতে দীপালির ভাগ ছিল। যতই জনসংখ্যাবাড়ুক, এই দুনিয়াতে আল্লাহ যত মুখ সৃষ্টি করেছেন তাদের সবার খাবারেরভাগও তিনি রেখেছেন। যখন কেউ কারো মুখের গ্রাস কেড়ে নেয় তখন মানুষঅনাহারে আত্মহত্যা করে। গরীব মানুষের মুখের গ্রাস শুধু মাল্টি ন্যাশনালকোম্পানিগুলো একা কেড়ে নেয়না, আমরাও নেই।

রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন তোমরা বেশী খেওনা। যদি খাও তবে অপর ভাইয়ের ভাগ খেয়ে ফেলতে পার। আমরা শুধুই যে বেশী খাই তা নয়, বেশী খেতে খেতে ক্লান্ত হয়ে উচ্ছিষ্টাংশটি ডাস্টবিনের কুকুরদের সমর্পণ করি। চারপেয়ে এবং দু’পেয়ে কুকুর। বাংলাদেশে বিয়ে বাড়িতে মোচ্ছব চলেপ্লেট ভর্তি করার। পিজা হাট অফার দেয় – এস কত খেতে পার। সিয়াম মানে সংযমকে বলেছে? সিয়াম মানে রাক্ষসের মত খাওয়া, যত বেশী খাওয়া যাবে ততই লাভ। সারা বছরে মাত্র একবার পিজা হাট ইসলামের শিক্ষাকে বুড়ো আঙুল দেখায় – সেটা রমাদান মাসে। সিয়াম মানে সংযম কে বলেছে? যিনি দশ পদের কমে ইফতার করেননা তিনি? আমেরিকায় দেখেছি মসজিদ মসজিদে মুফতে ইফতার দেয়। মানুষ ডিসপোজ্যাবল প্লেট ভরে খাবার নেয়, কিছুটা খায়, কিছুটা ছড়ায় তারপরে প্লেট ভাজ করে ট্র্যাশে ফেলে দেয়। বিরিয়ানি ভর্তি প্লেট। রুটি-মাংশ ভর্তি প্লেট। নাশপাতি-আঙুর-খেজুর ভর্তি প্লেট। বাবা-ছেলে পাশাপাশি বসে একই কাজ করে। ফেলেদেয়ার আগে একটুও হাত কাঁপেনা। মাথায় একটুও আসেনা যে সোমালিয়াতে সেইমূহুর্তে মানুষ ইফতার করছে শুধু বাতাস দিয়ে। সৌদি আলিমদের কাছে ফতোয়াজানতে চাচ্ছে – তাদের সেহরিতে খাবার কিছু নেই, ইফতারেও কিছু জোটেনা; তাদেররোজা হবে তো? সৌদি মুফতি উত্তর দিতে পারেননি, ঝরঝর করে কেঁদেছেন। আমরা কেউ প্রশ্নটা শুনতে পাইনি। আমরা তখন খেতে ব্যস্ত ছিলাম।

পৃথিবী কত বদলে যায়। এইতো বছর পঞ্চাশেক আগেও সোমালিয়াকে বলা হত আফ্রিকার রুটির ঝুড়ি। সেই সবুজ আজ কোথায় হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে গরু-ছাগলের পাল। মানুষের পাল এখন খোঁয়ারে থাকে। আইএমএফ দয়া আর মমতার বাঁধনে বেঁধে রেখেছে ওদের। ভালবেসে ঋণ দিয়েছে। তারপর বাতলে দিয়েছে ঋণ শোধের উপায়। এই বাঁধনকি আর ছেড়া যায়? বিজ্ঞানীরা বলবেন ক্লাইমেট চেঞ্জ – জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেই নাকি এ দুর্ভিক্ষ। পশ্চিমা মিডিয়া বলবে আল-শাবাব মুসলিম চরমপন্থীদের জন্যই আজ এই দশা। খিলাফাতওয়ালারা বলবে তাগুতের তাবেদার সরকারের দোষ। আমি কিছু বলবনা। আমার চোখে ভাসতে থাকবে বিশাল সব ট্র্যাশব্যাগ। কালো কালো ট্র্যাশব্যাগ। একটা ব্যাগে যে পরিমাণ খাবার ফেলে দেয়া হয়েছে তাতে একটা গ্রামের সবগুলো ক্ষুধার্ত মানুষ পেটপুরে খেতে পারত।

শস্য-শ্যামলা-সুজলা বাংলাদেশে এখন জল নেই। আমনের মৌসুমে যেখানে খেত জলে থই থই করে সেখানে এখনপাম্প বসিয়ে সেচ দিতে হয়। ডীপ টিউবওয়েল। পানির স্তর নেমে গেছে বহু দূর, আশি ফুট গভীরতাতেও কাজ চলে না। আমেরিকায় চলছে পঞ্চাশ বছরের সবচে ভয়াবহ খরা। তবু আমাদের বুক কাঁপেনা। ভাবখানা এমন যেন আল্লাহর সাথে পানিচুক্তি করাআছে। অথচ আল্লাহ বলছেন নেই। মহান আল্লাহ হুমকি দিলেন সুরা মুলকের শেষে – তিনি যদি পানির স্তর নামিয়ে নেন তাহলে ভূ-পৃষ্ঠে কে দেবে পানি?

আমরা এই হুমকির থোড়াই কেয়ার করি।

আল্লাহ আল কুরআনের দুই জায়গাতে বলেছেন, তোমরা অপচয় করোনা, আল্লাহ অপচয়কারীকে ভালবাসেননা। আমরা আল্লাহর ভালোবাসার থোড়াই কেয়ার করি। নানান জাতের ভালোবাসাতে ভর্তি হয়ে আছে টিভি। আল্লাহর ভালোবাসা না দেখা যায়, না বেচাযায়। এ ভালোবাসা দিয়ে কি করব?

রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন কারো কাছ থেকে মাটিতে খাবার পড়ে গেলে সে যেন সেটা তুলে, ধুলোটা ঝেড়ে খেয়ে ফেলে; শয়তানের জন্য রেখে না দেয়। তিনি খাবার পরে হাত চেটে খেতে বলেছেন, কারণ খাবারের কোন অংশে বারাকাত আছে সেটা মানুষ জানেনা। আমাদের যে টেবিল ভদ্রতা শেখান হয় তাতে পতিত খাবার অচ্ছুত ময়লা, তুলে খাওয়া তো দূরে থাক সেটা স্পর্শই করা যাবেনা। কাজের মানুষেরা পরে ঝাড়ু দিয়ে সেটা ফেলে দেবে। হাতের আঙুল বা থালা মুছে খাওয়াতো নিতান্ত অসৌজন্যতা। ইহুদিরা জেরুজালেমে মুসলিমদের হারিয়ে দিয়েছে বলেআমরা হায় হায় করি। আর এদিকে আমরা নিজেরা নিজেদের ডাইনিং টেবলে ইসলামকে হারিয়ে দিয়েছি। শয়তান এখন আর আমাদের শত্রু না – বন্ধু। তাকে আসন পেতেদেই খেতে। পেট ভরার পরে বাকি খাবারটা তার জন্য বরাদ্দ করে রাখি। আর বারাকাত দিয়ে আমরা কি করব? বারাকাত কমছে বলেই খাবারে বিষ দেয়া হচ্ছে, লাফিয়ে লাফিয়ে খাবারের দাম বাড়ছে, খাবারের স্বাদ-তৃপ্তি সব উধাও হয়ে যাচ্ছে। আপন হাতে কল্যাণের দরজা বন্ধ করে রেখে অন্যকে দুষে কি লাভ?

ইসলামের কথা বাদ দেই, খাবার নষ্ট মানে তো কৃষককে অপমান করা। তার শ্রম, তারকষ্টটাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। আমরা শহুরে মানুষ; একগোছা ধান ফলাতে কি কষ্টআমরা কি করে বুঝব? আমাদের কাছে পাতে ফেলে রাখা এক মুঠ ভাতের দাম কয়েকপয়সা মাত্র – এর চেয়ে বেশী কিছু তো নয়। রান্না করা খাবার ফেলে দেয়া মানে সেই মানুষটার প্রতি অশ্রদ্ধা যে কষ্ট করে খাবারটা রান্না করল চুলার আঁচ সহ্য করে। সেই মানুষটার প্রতি অসম্মান যে কষ্ট করে খাবারটা বয়ে নিয়ে আসল বাজার থেকে। আমরা বুদ্ধিজীবি মানুষ। কাজের মানুষদের সময় আর শ্রম কিনে নিয়েছি কয়েক টাকায়। টাকা দিয়ে সব কিছু শোধ করা যায়না – এটা আমরা বুঝতে চাইনা।

পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ ছিলেন রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মদিনাতে হিজরত করার পরথেকে তারমৃত্যু অবধি তার পরিবার পরপর তিনদিন পেটপুরে খেতে পারেনি। সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী মানুষদের এমন সময়ের মধ্যে যেতে হয়েছে যখন হাবালা গাছের পাতা ছাড়া তাদের আর কোন খাবার ছিলনা। তাদের মল আর ভেড়ার মলের কোন পার্থক্য ছিলনা।৩ আমাদের আল্লাহ খাবারের যে প্রাচুর্য দিয়েছেন সেটাকে আল্লাহর নিয়ামাত বলে আমরা ভাবতে ভালবাসি; ভুলেও চিন্তা করিনা এটা আল্লাহর পরীক্ষাও বটে। আমরা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে খাবার নষ্টের মাধ্যমে আল্লাহর অকৃতজ্ঞতা করছি। শাস্তি হিসেবে ক্ষুধাকে চেয়ে নিচ্ছি।

ভাই, আপনি যদি কুরআনকে আল্লাহর বাণী বলে বিশ্বাস করে থাকেন তাহলে এরপর যখন আপনি থালায় একটিও ভাত রেখে উঠে যাবেন তখন মনে রেখেন – ইন্নাহু লাইয়ুহিব্বুল মুসরিফিন – নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীকে ভালবাসেননা। বোন, আপনি যখন আপনার সন্তানের উচ্ছিষ্ট খাবারটি ফেলে দিচ্ছেন তখন মনে রেখেন – ইন্নাহুলা ইয়ুহিব্বুল মুসরিফিন। বেগুনের এক কোণে একটু দাগ থাকার কারণে যখনপুরোটা ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন তখন মনে রেখেন – ইন্নাহু লা ইয়ুহিব্বুল মুসরিফিন।

পৃথিবীর মানুষের ভালবাসা না পেলেও জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়; পৃথিবীর রব্ব আল্লাহর ভালবাসা না পেলে ধ্বংস অনিবার্য। আল্লাহ যেন আমাদের মুসরিফিন হবার হাত থেকে রক্ষা করেন। খাবারনষ্ট করা যাবেনা এটা যেন আল্লাহ আমাদের মননে-জীবনে গেঁথে দেন।

২৫শে শাওয়াল, ১৪৩৩ হিজরি।

—————————————————–

১ সহীহ মুসলিম অধ্যায় ২৩ হাদিস ৫০৪৪

২ সহীহ বুখারি অধ্যায় ৬৫ হাদিস ৩২৭

৩ সহীহ বুখারি অধ্যায় ৬৫ হাদিস ৩২৩


সময় ব্যবস্থাপনা –আপনার ফলপ্রসূ ও চৌকস জীবনের চাবিকাঠি

$
0
0

মূল : আবু প্রোডাক্টিভ । ভাষান্তর : মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ । সম্পাদনা : আব্‌দ আল-আহাদ

The_Time_Traveler_by_xetobyte

আমার পুরনো এক বন্ধু আমাকে একবার বলেছিল, “একটা পুরান কথা (myth) ইদানীং খুব চলছে। কথাটা এমন : “সময়কে ঠিকমতো গুছিয়ে নিতে পারলে, তোমার দ্বারা সবই সম্ভব!” আজ থেকে চার বছর আগে শুনেছি এই কথাটা। কিন্তু আজ আর বিশ্বাস করি না যে, কথাটা কোনো পুরান কথা।

সময়-ব্যবস্থাপনা (time management) এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা সবাই অনেক কথা শুনে থাকি। যথাযথ সময় ব্যবস্থাপনার জন্য মাঝে মাঝে মানুষের কাছে অনেক বকুনিও শুনতে হয় আমাদের। কিন্তু সময়-ব্যবস্থাপনার কার্যকর কোনো পদ্ধতি নিয়ে খুব একটা শোনা যায় না!

কীভাবে সময়-ব্যবস্থাপনা করা যায় তা বুঝতে হলে, প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে সময়-ব্যবস্থাপনা বিষয়টা আসলে কী। সময়-ব্যবস্থাপনা আসলে সময়কে নিয়ন্ত্রণ করার মতো কোনো বিষয় নয়। কেননা ব্যবহারিক অর্থে, যার উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ নেই, আপনি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না! (আপনি কি সময়ে ধরে রাখতে কিংবা দ্রুত পার করতে পারেন?!)- সময়-ব্যবস্থাপনা হচ্ছে নিজেকে এমন ভাবে পরিচালনা করা যাতে, আমরা যে সময়ের গণ্ডিতে আবদ্ধ সেই সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। এমনটি আসলে কীভাবে করা যায়?

বিখ্যাত বই “The Effective Executive” (পড়ে দেখার জোরালো আবেদন রইলো) এর লেখক পিটার ড্রাকার, সময়-ব্যবস্থাপনার জন্য তিনটি ধাপ অনুসরণের সুপারিশ করেন। বইটির যে অধ্যায়ে তিনি এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন, তিনি সেই অধ্যায়টার নাম দিয়েছেন: “নিজের সময়কে জানুন” :

১. আপনার সময়ের বিশ্লেষণ করুন।

২. নিষ্ফল বা নিরর্থক চাহিদাগুলো ছাঁটাই করুন।

৩. হাতে সময় নিয়ে আপনার কাজগুলো সম্পন্ন করার লক্ষ্য স্থির করুন।

এবার চলুন, একজন চৌকস মুসলিমের প্রত্যাহিক জীবনরীতির আলোকে উপরোক্ত ধাপ তিনটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

আপনার সময়ের বিশ্লেষণ করুন :

কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় নিয়ে নিজের সময়কে লিপিবদ্ধ করুন। আমি এখানে সত্য কথাটাই বলল, এক সপ্তাহে আপনি কত সময় অপচয় করেন তা উপলব্ধি করার জন্য বুকে সাহস থাকা চাই। তবে নিজের সাথে সত্যবাদীর মতো আচরণ করাটাই হলো প্রতিকারের প্রথম পদক্ষেপ। সময় লিপিবদ্ধ করার দুই ধরণের পদ্ধতি আছে :

১. সাথে একটি ডাইরি রাখুন এবং প্রতি ঘন্টায় কী কী করলেন, তা লিখে রাখুন।

২. যখন আপনার সময় বিশ্লেষণ করবেন, তখন আপনার বন্ধু/প্রতিবেশী/স্বামী বা স্ত্রীকে সাক্ষী রাখুন। (কারণ আমরা যখন সময় লিপিবদ্ধ করি, তখন সততার সাথেই তা করি। কিন্তু শেষে গিয়ে নিজেই নিজেকে ধোঁকা দিয়ে বসি।)

নিষ্ফল বা নিরর্থক চাহিদাগুলো ছাঁটাই করুন।

আশা করছি, সময় বিশ্লেষণের পর একটা দুঃখবোধ আপনাকে পেয়ে বসবে! ভাববেন, আমরা এমন অনেক কিছুই করি যা একেবারেই ঝেড়ে ফেলা যায়। আপনার এখন মনে হবে : সকালবেলা কফি খাওয়ার অজুহাতে ক্যাফেতে বসে একঘণ্টা সময় বৃথা নষ্ট না করে বাড়িতেই কফি বানিয়ে খাওয়া যেতো না? কফি খেতে খেতে ই-মেইলগুলোও কি পড়া যেতো না? টিভির চ্যানেল হাতড়ে বা ইন্টারনেট ঘেঁটে প্রতিদিন দুই ঘন্টা সময় ব্যয় করা কি আমাদের জন্য সত্যিই জরুরি? আমরা কি এসব থেকে সময় বাঁচাতে পারি না? (সাধবান! আল্লাহর জন্য বরাদ্দ সময় বাঁচাতে যাবেন না! “সময় বাঁচানো”-র নামে কিছু লোক মসজিদে সালাত আদায় করতে যায় না। এই রকম সময় বাঁচনো নিষ্ফল কর্ম। মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। অতএব, সময় বাঁচানোর নামে দ্বীনের কাজের সময় কমাতে যাবেন না। দ্বীনের জন্য যথেষ্ট সময় ব্যয় না করার দায়ে আমরা ইতোমধ্যেই অভিযুক্ত। তাই পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে আমরা যেন সময় বাঁচানোর অজুহাতকে ক্ষেত্রে ব্যবহার না করি।)

হাতে সময় নিয়ে আপনার কাজগুলো সম্পন্ন করার লক্ষ্য স্থির করুন

যখন আপনি কঠিন কিছু নিয়ে কাজ করছেন এবং পুরোপুরি কাজের মধ্যে নিমগ্ন হয়ে আছেন, ঠিক তখনই একটা ফোন কল বা ই-মেইল কিংবা মেসেজ এলার্ট কি বিরক্তিকর নয়?! এই তৃতীয় ধাপ বা কৌশলটিতে মূলত যা বলা হচ্ছে তা হলো, আপনাকে সময় ভাগ করে নিতে হবে এবং তা করতে হবে আপনার জন্য সম্ভব্য সর্বোচ্চ সময় খণ্ডে। (অনেকের মতে, এক নাগাড়ে সর্বোচ্চ ৯০ মিনিট মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব। তবে এই ৯০ মিনিট হতে হবে বিরতিহীন)। সামান্য পরিমাণ কাজ করে সর্বোচ্চ পরিমাণ ফলাফল লাভ করতে এই পদ্ধতি সহায়তা করবে। কারণটা খুব সহজ। আর তা হলো, আপনি এভাবে কাজ করলে একটি কাজের প্রতি আপনার সবটুকু মনোযোগ কাজে লাগে নিবিড়ভাবে এবং নির্বিঘ্নে। এক ঘন্টার একটি কাজ করতে আপনার ৪ ঘণ্টা লেগে যাবে যদি প্রতি ১০-১৫ মিনিটে আপনি বিরতি নেন বা বাধা প্রাপ্ত হন।

আজ এ পর্যন্তই। আশা করছি, সময়-ব্যবস্থাপনার পুরান কথাটিকে কীভাবে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়, তা বুঝতে এ লেখা আপনাকে সহায়তা কবে।

English Version

পর্ব ১ –একজন ঈমানদার দা‘ঈর বর্জিত গুণাবলি

$
0
0

লেখক:মুহাম্মদ শাহিদুল ইসলাম

(সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ঢাকা)

DawahMission_Gloucester_FB-01

পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪| পর্ব ৫ | পর্ব ৬ | পর্ব ৭| পর্ব ৮ | পর্ব ৯ | পর্ব ১০

 ভূমিকা

মহান রাব্বুল আলামীন এই সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি করে তাকে সুশোভিত করেছেন, সৃষ্টি করেছেন অরণ্য, গাছপালা-তরুলতা, সাগর-নদী, আকাশ-বাতাস, চন্দ্র-সূর্য ও বিভিন্ন প্রকার প্রাণীকূল। আর এই সৃষ্ট জগতে মানুষকে পাঠিয়েছেন আশরাফুল মাখলুকাত রূপে। স্রষ্টার এই সুন্দর সৃষ্টি পরিচালিত হচ্ছে সুশৃঙ্খল নিয়ম-নীতি মেনেই। মানুষ তার পরম সত্তাকে জানার জন্য সর্বদাই আকুল। এ দুর্নিবার জানার আগ্রহ মানুষকে এক নৈর্ব্যক্তিক প্রষ্টার ধারনায় পৌঁছে দেয়। এ নৈর্ব্যক্তিক মহা সত্তা বা স্রষ্টা নৈর্ব্যক্তিক থেকে মানুষের হৃদয়ের আবেদন পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছ। তাই মানুষ যুগ যুগ ধরে নিজের অন্তরে সেই পরম সত্তাকে খুজে বের করে তার সাথে আত্মীক সম্পর্ক গড়তে চেয়েছে। আর এ সত্তাকে জানতে ও চিনতে হলে তাকে অবশ্যই একজন পবিত্র আত্মার মানুষ হতে হবে। আর পবিত্র আত্মার অধিকারী হতে হলে তাকে অবশ্যই আদর্শিক ও চারিত্রিক গুণে গুণান্বিত হওয়া আবশ্যক। একজন মু’মিনকে দেখে অপর একজন বিধর্মী ঈমান গ্রহণ করে এবং তারই জীবনে তা বাস্তবায়নের কারণে মানুষ হয়ে উঠে আল্লাহ্ মুখী ও তাকওয়াবান। যা আমরা রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর যুগে এবং তৎপরবর্র্তী যুগে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই। তাই তাকে অবশ্যই কতিপয় গুণাবলী বা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হবে যা দ্বারা মানুষ তার দিকে আকৃষ্ট হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে নিজেকে দোযখের কঠিন আযাব থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে।

মানবচরিত্রের দু’টি ধারা। একটি মানবচরিত্র ধ্বংসকারী অসৎ স্বভাবসমূহ ও মানবচরিত্র ধ্বংসের হাত থেকে পরিত্রাণকারী মহৎ গুণাবলী। এ দু’টি পদ্ধতির মধ্যে মানবচরিত্র ধ্বংসকারী অসৎ স্বভাবসমূহ থেকে বিরত থেকে মানবচরিত্র ধ্বংসের হাত থেকে পরিত্রাণকারী মহৎ গুণাবলী পালন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একমাত্র মানবচরিত্রকে উন্নতির স্বর্ণশিখরে পৌঁছতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি এমন কিছু গুণাবলি রয়েছে যেগুলো বর্জন করা মু’মিনের উপর আবশ্য। আলোচ্য প্রবন্ধে এ প্রসঙ্গেই ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করা হবে।

১. অহংকার

অহংকার পরিচিতি

অহংকার শব্দটির আরবী প্রতিশব্দ হলো : (আল-কিবর)الكِبْر। যার আভিধানিক অর্থ, বড়ত্ব, বড়াই, অহংকার ইত্যাদি। আল্লামা ইব্ন মানযুর রহ. বলেন : (আল-কিবর) الكِبْر শব্দের আভিধানিক অর্থ বড়ত্ব, অহংকার ও দাম্ভিক, অহমিকা ইত্যাদি।

অহংকারের পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রদানে হাদীসে রাসূল সা. বলেন :

عن عبد الله بن مسعود، عن النبي صلى الله عليه و سلم قال: لا يْدخُلُ الجَنةََّ مَنْ كَانَ فِي قَلْبهِِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كبِرٍ قَالَ رَجُلٌ: إِنَّ الرَّجُلَ يُحبُِّ أَنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حسَنًا، وَنْعُلُه حَسَنَةً. قَالَ: إِنَّ الله جَميِلٌ يُحبُ الجَمَالَ، الْكبِر بَطَرُ الحَقِّ، وَغَمْطُ الناَّسِ.

আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসুদ রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন : যার অন্তরে একটি অণু পরিমাণ অহংকার থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। রাসূল সা. এ কথা বললে, এক লোক দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেসা করল : কোন কোন লোক এমন আছে, সে সুন্দর কাপড় পরিধান করতে পছন্দ করে, সুন্দর জুতা পরিধান করতে পছন্দ করে, এসবকে কি অহংকার বলা হবে? রাসূল সা. উত্তরে বললেন : আল্লাহ্ তা‘আলা নিজেই সুন্দর, তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। (সুন্দর কাপড় পরিধান করা অহংকার নয়) অহংকার হল, সত্যকে গোপন করা এবং মানুষকে নিকৃষ্ট জানা।  উল্লেখ্য যে, রাসূল সা. এ হাদীসে অহংকারের সংজ্ঞা দু’টি অংশে তুলে ধরেন।

এক. প্রকৃত সত্যকে অস্বীকার করা। হককে কবুল না করে তার প্রতি অবজ্ঞা করা এবং সত্য কবুল করা থেকে বিরত থাকা। বর্তমান আমাদের সমাজে অধিকাংশ মানুষকে দেখা যায়, যখন তাদের নিকট এমন কোন লোক হকের দাওয়াত নিয়ে আসে, যে বয়স বা সম্মানের দিক দিয়ে তার থেকে ছোট, তখন সে তার কথার প্রতি কোন প্রকার গুরুত্ব দেয় না। আর তা যদি তাদের মতামত অথবা তারা যা নির্ধারণ ও যার উপর তারা আমল করছে, তার পরিপন্থী হয়, তখন তারা তা অস্বীকার ও প্রত্যাখান করে। আর অধিকাংশ মানুষের স্বভাব হল, যে লোকটি তাদের নিকট দাওয়াত নিয়ে আসবে, তাকে ছোট মনে করবে এবং তার বিরোধিতায় অটল ও অবিচল থাকবে, যদিও কল্যাণ নিহিত থাকে সত্য ও হকের আনুগত্যের মধ্যে এবং তারা যে অন্যায়ের উপর অটুট রয়েছে। তাতে তাদের ক্ষতি ছাড়া কোনই কল্যাণ না থাকে। আমাদের সমাজে এ ধরণের লোকের অভাব নেই। বিশেষ করে ছোট পরিসরে এ ধরণের ঘটনা অহরহ ঘটতে থাকে। যেমন : পরিবার, স্কুল, মাদ্রাসায়, অফিস আদালত ও বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে এ ধরণের ঘটনা নিত্যদিন ঘটে থাকে।

অহংকারীরা যে বিষয়টির আশংকা করে অপরের থেকে সত্যকে গ্রহণ করে না, তাহলো, সে যদি অপর ব্যক্তি থেকে প্রমাণিত সত্যকে গ্রহণ করে, তাকে মানুষ সম্মান দেবে না, মানুষ অপর লোকটিকে সম্মান দেবে তখন সম্মান অপরের হাতে চলে যাবে এবং সে মানুষের সামনে বড় ও সম্মানী লোক হিসেবে বিবেচিত হবে, অহংকারীকে কেউ সম্মান করবে না। এ কারণেই সে কাউকে মেনে নিতে পারে না, সে মনে করে সত্যকে গ্রহণ করলে তার সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে এবং মানুষ তার প্রতি আর আকৃষ্ট হবে না। মানুষ সে লোকটিকেই বড় মনে করবে এবং তাকেই মানবে। আর বাধ্য হয়ে অহংকারীকও অপরের অনুসারী হতে হবে। কিন্তু এ অহংকারী লোকটি যদি বুঝতে পারত, তার জন্য সত্যিকার ইজ্জত ও সম্মান হল, হকের অনুসরণ ও আনুগত্য করার মধ্যে, বাতিলের মধ্যে ডুবে থাকতে নয়ত, তা ছিল তার জন্য অধিক কল্যাণকর ও প্রশংসনীয়।

উমর ইব্নুল খাত্তাব রা. আবূ মূসা আল-আশআরী রা.-এর নিকট লিখেন, তুমি গত কাল যে ফায়সালা দিয়েছিলে, তার মধ্যে তুমি চিন্তা ফিকির করে যখন সঠিক ও সত্য তার বিপরীতে পাও, তাহলে তা থেকে ফিরে আসতে যেন তোমার নফস তোমাকে বাধা না দেয়। কারণ, সত্য চিরন্তন, সত্যের পথে ফিরে আসা বাতিলের মধ্যে সময় নষ্ট করার চেয়ে অনেক উত্তম।

আব্দুর রহমান ইবনে মাহদী রহ. বলেন : একদা আমরা একটি জানাযায় উপস্থিত হলাম, তাতে কাজী উবায়দুল্লাহ ইব্নুল হাসান রহ. হাজির হল। আমি তাকে একটি বিষয়ে জিজ্ঞেসা করলে, সে ভুল উত্তর দেয়, আমি তাকে বললাম : আল্লাহ্ আপনাকে সংশোধন করে দিক, এ মাসআলার সঠিক উত্তর এভাবে …। তিনি কিছু সময় মাথা নিচু করে চুপ করে বসে থাকলেন, তারপর মাথা উঠিয়ে বললেন : আমি আমার কথা থেকে ফিরে আসলাম, আমি লজ্জিত। সত্য গ্রহণ করে লেজ হওয়া আমার নিকট মিথ্যার মধ্যে থেকে মাথা হওয়ার চেয়ে অধিক উত্তম।

দুই. মানুষকে নিকৃষ্ট জানা। মনে রাখতে হবে যে, যারা মানুষকে খারাপ জানে, তাদের কর্মের পরিণতি হল, মানুষ তাদের খারাপ জানবে। এ ধরণের লোকেরা মানুষের সুনামকে ক্ষুন্ন এবং তাদের যোগ্যতাকে ম্লান করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। সে অন্যদের উপর তার নিজের বড়ত্ব ও উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার লক্ষ্যে, মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন ও ছোট করে। মানুষের সম্মানহানি ঘটানোর উদ্দেশ্যে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে ও অপবাদ রটায়। অহংকারীরা কখনোই মানুষের চোখে ভাল হতে পারে না, মানুষ তাদের ভালো চোখে দেখে না। অহংকারী তার নিজের কর্ম ও গুণ দিয়ে কখনোই উচ্চ মর্যাদা বা সম্মান লাভ করতে সক্ষম হয় না। তাই সে নিজে সম্মান লাভ করতে না পেরে নিজের মর্যাদা ঠিক রাখার জন্য অন্যদের কৃতিত্বকে নষ্ট করে এবং তাদের মান-মর্যাদা খাট করে দেখে।

আবূ ওহাব আল-মারওয়ারজি রহ. বলেন : আমি আব্দুল্লাহ্ ইব্ন মুবারককে জিজ্ঞেসা করলাম : কিবর কী? উত্তরে তিনি বললেন : মানুষকে অবজ্ঞা করা। তারপর আমি তাকে উজব সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করলাম : উজব কী? উত্তরে তিনি বললেন : তুমি মনে করলে যে, তোমার নিকট এমন কিছু আছে, যা অন্যদের মধ্যে নেই। তিনি বললেন : নামাজিদের মধ্যে উজব বা আত্মতৃপ্তির চেয়ে খারাপ আর কোন মারাত্মক ত্রুটি আমি দেখতে পাই না।

অহংকারের শ্রেণীবিভাগ ও স্তরসমূহ

প্রকাশ থাকে যে, অহংকার দুই প্রকার। এক. কিবরে জাহির (প্রকাশ্য অহংকার) দুই. কিবরে বাতিন (অপ্রকাশ্য অহংকার)

এক. প্রকাশ্য অহংকার : প্রকাশ অহংকার দ্বারা বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও কাজের মাধ্যমে যে কিবর বা অহংকার প্রকাশ পায় তাকে কিবরে জাহির বা প্রকাশ্য অহংকার বলে।

দুই. অপ্রকাশ্য অহংকার : নিজেকে অপরের চেয়ে মর্যাদায় বড় ধারণা করাতে অন্তরে যে এক সন্তুষ্টির হালত আসে উক্ত হালতকে কিবরে বাতিন বা অপ্রকাশ্য অহংকার বলে। উল্লেখ্য যে, কিবরে জাহির ছোটদের সামনে করা জায়িয কিন্তু বড়দের সামনে করা নাজায়িয।

অহংকারের স্তর

প্রকাশ থাকে যে, অহংকারের স্তর তিনটি। যথা :

এক. আল্লাহর সাথে : যেমন-নমরূদ, ফির‘আউন ও ইবলীসের তাকাব্বুরী।

দুই. রাসূল সা. এর সাথে : যেমন-কুফ্ফারে কুরাইশরা বলেছিল তারা ইয়াতীম মুহাম্মদের কাছে মাথা নত করতে পারবে না। তাদের সর্দারদেরকে কেন রাসূল করা হলো না?

তিন. রাসূল ব্যতীত অন্যান্য লোকদের সাথে। যেটি আমাদের সমাজে প্রচলিত।

অহংকারের কারণসমূহ

একজন অহংকারী মনে করে সে তার সাথী সঙ্গীদের চেয়ে জাতিগত ও সত্তাগতভাবেই বড় এবং সে অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র, তার সাথে কারো কোন তুলনা হয় না। ফলে সে কাউকেই কোন প্রকার তোয়াক্কা করে না, কাউকে মূল্যায়ন করতে চায় না এবং কারো আনুগত্য করার মানসিকতা তার মধ্যে থাকে না। যার কারণে সে সমাজে এমনভাবে চলা ফেরা করে মনে হয় তার মত এত বড় আর কেউ নেই। এ অহংকারের কতগুলো কারণ নিম্নরূপ :

এক. কারো প্রতি আনুগত্য প্রকাশ না করা

অহংকার প্রবেশের অন্যতম কারণ হলো কারোর প্রতি নমনীয় না হওয়া বা আনুগত্য না করার স্পৃহা। সে চিন্তা করে আমি কেন মানুষের কথা শুনবো। মানুষ আমার কথা শুনবে। আমিই মানুষকে উপদেশ দিব। এভাবেই তার দিন অতিবাহিত হতে থাকে। আর অহংকারের স্পৃহা বাড়তে থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন :

كَلَّا إِنَّ الْإِنْسَانَ لَيَطْغَى . أَنْ رَآهُ اسْتَغْنَى . إِنَّ إِلَى رَبِّكَ الرُّجْعَى .

“কখনও নয়, নিশ্চয়ই মানুষ সীমালঙ্ঘন করে থাকে। কেননা সে নিজেকে মনে করে স্বয়ংসম্পূর্ণ। নিশ্চয়ই তোমার রবের দিকেই প্রত্যাবর্তন।

আল্লামা বাগাভী রহ. বলেন : মানুষ তখনই সীমালঙ্ঘন এবং তার প্রভুর বিরুদ্ধাচারণ করে, যখন সে দেখতে পায়, সে নিজেই স্বয়ংসম্পন্ন। আর কারো প্রতি নত হওয়া বা কারো আনুগত্য করার কোন প্রয়োজন নেই।

দুই. প্রভাব বিস্তার করার অভিলাস

একজন অহংকারী সে মনে করে, সমাজে তার প্রাধান্য বিস্তার, সবার নিকট প্রসিদ্ধি লাভ ও নেতৃত্ব দেয়ার কোন বিকল্প নেই। তাকে এ লক্ষ্যে সফল হতেই হবে কিন্তু যদি সমাজ তার কর্তৃত্ব বা প্রাধান্য মেনে না নেয়, তখন সে চিন্তা করে, তাকে যে কোন উপায়ে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। চাই তা বড়াই করে হোক অথবা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে হোক। তখন সে যা ইচ্ছা তাই করে এবং সমাজে হট্রোগল শুরু করে।

তিন. দোষ-গুণ গোপন করা

একজন অহংকারী ইচ্ছা করলে তার দোষগুণগুলো বিনয়, নম্রতা, মানুষের সাথে বন্ধুত্ব ও চুপ-চাপ থাকার মাধ্যমে গোপন রাখতে পারত, কিন্তু তা না করে অহংকার করার কারণে তার সব গোমর ফাঁক হয়ে যায়। এ ছাড়াও মানুষ যা পছন্দ করে না, তা নিয়ে দু:খ প্রকাশ করা, কোন বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করা হতে দূরে থাকা এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য মিথ্যা দাবি করা হতে বিরত থাকার মাধ্যমে সে তার যাবতীয় দুর্বলতা ও গোপন বিষয়গুলো ধামা চাপা দিতে পারত কিন্তু সে তা না করে অহংকার করাতে তার অবস্থা আরও প্রতিকূলে গেল এবং ফলাফল তার বিপক্ষে চলে গেল। তার বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে তার যাবতীয় অপকর্ম মানুষ জানতে পারল।

চার. অপরকে সম্মান করতে না জানা

মানুষ শ্রেষ্ঠ হওয়ার মানদণ্ড কী এবং মানুষকে কীসের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হবে, তা আমাদের অবশ্যই জানা থাকতে হবে। অহংকারের অন্যতম কারণ হলো : মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড নিধারণে ত্র“টি করা। একজন মানুষের শ্রেষ্ঠ হওয়ার মানদণ্ড কি তা আমাদের অনেকেরই অজানা। রাসূল সা. তাঁর সাহাবীদের একটি সুস্পষ্ট ও বাস্তব দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝিয়ে দেন যে, একজন মানুষকে কিসের ভিত্তিতে মূল্যায়ন ও অগ্রাধিকার দেয়া হবে এবং তাকে কিসের ভিত্তিতে অবমূল্যায়ন ও পিছনে ফেলে রাখা হবে। মানুষের মর্যাদা তার পোশাকে নয়, বরং মানুষের মর্যাদা তার অন্তর্নিহীত সততা, স্বচ্ছতা ও আল্লাহ্ ভীতির উপর নির্ভর করে। যার মধ্যে যতটুকু আল্লাহ্ ভীতি থাকবে, সে তত বেশি সৎ ও উত্তম লোক হিসেবে বিবেচিত হবে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ্ সা. বলেন :

عن سهل بن سعد الساعدي قال : مَرَّ رجل على رسول الله صلى الله عليه و سلم فقال مَا تَقُولُونَ فِي هَذَا قالوا حِرٌّي إن خطب أَنْ ينكح وَإن شفع أن يُشَفَّعَ، وإن قال أَنْ يْسَتَمعَ، قال ثم سكت، فَمَرّ رجل من فقراء المسلمين، فقال مَاتَقُولُونَ فِي هَذَا قالواحِرٌّي إنْ خطب أن لا ينكح و َإِنْ شفع أَنْ لَا يُشَفَّعَ، وإن قال أَنْ لَا يْسَتَمعَ، فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم هَذَا خَيٌر مِنْ مِلِْء الْأرَْضِ مِثْلَ هَذَا.

সাহাল ইব্ন সাদ রা. হতে বর্ণিত; তিনি বলেন : একদিন রাসূল সা. এর সামনে দিয়ে একব্যক্তি অতিক্রম করে যাচ্ছিল, রাসূল সা. সমবেত লোকদের জিজ্ঞেসা করলেন, তোমরা এ লোকটি সম্পর্কে কী বল? তারা উত্তরে বলল : লোকটি যদি কাউকে বিবাহের প্রস্তাব দেয় তাহলে তার ডাকে সাড়া দেয়া হয়, যদি কারো বিষয়ে সুপারিশ করে, তাহলে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হয়, আর যদি কোন কথা বলে, তার কথা শোনা হয়। তাদের কথা শুনে রাসূল সা. চুপ করে থাকেন। একটু পর অপর একজন দরিদ্র মুসলিম রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করে যাচ্ছিল। রাসূল সা. তাকে দেখে বললেন : তোমরা এ লোকটি সম্পর্কে কী বল? তারা বলল : যদি সে প্রস্তাব দেয়, তাহলে তার প্রস্তাবে সাড়া দেয়া হয় না, কোন সুপারিশ করলে তা গ্রহণ করা হয় না, আর যদি সে কোন কথা বলে তার কথায় কোন কান দেয়া হয় না। তখন রাসূল সা. বললেন : এ লোকটি যমিনে ভরপুর যত কিছু আছে তার সবকিছুর চেয়ে উত্তম।

পাঁচ. আল্লাহকে ভুলে যাওয়া

কিবর বা অহংকারের অন্যতম কারণ হলো, একজন মানুষকে আল্লাহ্ তা‘আলা যে সব নিয়ামত দান করেছেন, সে সব নিয়ামতকে ঐ লোকের সাথে তুলনা করা যাকে আল্লাহ্ তা‘আলা কোন হিকমতের কারণে ঐ সব নিয়ামতসমূহ দেয়নি। তখন সে মনে করে, আমি তো ঐ সব নিয়ামতসমূহ লাভের যোগ্য ও উপযুক্ত ব্যক্তি, তাই আল্লাহ্ আমাকে আমার যোগ্যতার দিক বিবেচনা করেই নিয়ামতসমূহ দান করেছেন। ফলে সে নিজেকে সব সময় বড় করে দেখে এবং অন্যদের ছোট করে দেখে ও নিকৃষ্ট মনে করে। অন্যদেরকে সে মনে করে তারা নিয়ামত লাভের উপযুক্ত নয়, তাদের যদি যোগ্যতা থাকতো তাহলে আল্লাহ্ তাদের অবশ্যই নিয়ামতরাজী দান করতেন।

অহংকারের নিদর্শনসমূহ

অহংকারের অনেক আলামত রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

ক.  আল্লাহর হুকুম বিনা প্রতিবাদে মানতে মনে চায় না।

খ.  ধম বিরোধী কাজ করতে অন্তরে ভয় না হওয়া।

গ.  নায়েবে রাসূলদের অনুসরণ করতে মনে না চাওয়া।

ঘ.  হক ফতোয়া মানতে অন্তরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়া।

ঙ. মুসলমানদের দেয়া হাদিয়া কবুল না করাও অহংকারের আলামত হিসেবে গণ্য।

চ.  নিজেকে ছোট ধারণায় না আনাও অহংকারের আলামতের শামিল।

ছ.  ক্ষুদ্র কাজ করতে লজ্জাবোধ করা।

জ.  গরীব লোকদেরকে নিকটে বসতে না দেয়া।

ঝ.  কাউকে সালাম না দেয়া। উল্লেখ্য যে, সালাম না দেয়া যদিও তাকাব্বুরীর লক্ষণ কিন্তু ধর্ম বিরোধী কাফিরদের বেলায় তা প্রযোজ্য নয়।

ঞ. কেউ উপদেশ দিলে সেদিকে মনোযোগ সহকারে না শুনা।

ট.  অপরের সাথে দেখা-সাক্ষাত না করা।

ঠ.  সাধারণ লোকদেরকে ইতর জীবের মত মনে করা।

ড.  অন্যকে অবজ্ঞার চোখে দেখা।

বর্তমান যামানায় সামান্য কিছু লেখা পড়া করলেই সাংসারিক কাজ নিজের হাতে করাটাকে লজ্জাবোধ মনে করে। এটি একমাত্র অহংকারের চিহৃ ছাড়া আর কিছুই নয়। কতক পীর (ইলমে তাসাওউফ ও কিতাবী শর্তবিহীন নাকেছ পীর) এবং কতক আলিমগণের মধ্যে এই প্রকার অহংকার খুব প্রবল আকারে দেখা যায়। অথচ রাসূল সা. নিজের সাংসারিক কাজ এমনকি স্ত্রীদের সাথে রান্নার কাজেও সহযোগিতা করতেন বলে বহু সহীহ হাদীসে প্রমাণিত।

এছাড়া তিনি নিজে উট ও ছাগলকে খাদ্য ও পানি খাওয়াতেন, দুধ দোহন করেছেন, বাজার হতে সদায় ক্রয় করে আনতেন, ঘরে ঝাড়– দিতেন, মেহমানকে নিজ হাতে খাদিম দিয়ে খাওয়াতেন, নিজের হাতে নিজের কাপড় ধৌত করতেন। এভাবে অনেক সাংসারিক কাজ রাসূল সা. নিজ হাতেই সম্পাদন করতেন যা আমাদের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়।

পূর্ববর্তী নবীদের সময়কার অহংকারী

আলোচ্য নিবন্ধে যে সব অহংকারীকে তার অহংকার হকের অনুকরণ ও অনুসরণ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে তাদের দৃষ্টান্ত সম্পর্কে আলোচনা করা হবে:

এক. ইবলিস

অভিশপ্ত ইবলিসের কুফরী করা ও আল্লাহর আদেশের অবাধ্য হওয়ার একমাত্র কারণ তার অহংকার। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা মহাগ্রন্থ আল-কুর’আনে ঘোষণা করেন :

إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ طِينٍ . فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ . فَسَجَدَ الْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ . إِلَّا إِبْلِيسَ اسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ . قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنْتَ مِنَ الْعَالِينَ . قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ . قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ . وَإِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِي إِلَى يَوْمِ الدِّينِ . قَالَ رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ . قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ . إِلَى يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ . قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ . إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ . قَالَ فَالْحَقُّ وَالْحَقَّ أَقُولُ . لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكَ وَمِمَّنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ أَجْمَعِينَ . قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُتَكَلِّفِينَ . إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِلْعَالَمِينَ.

“স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন : আমি মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করব। যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তার মধ্যে আমার রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে যাও’। ফলে ফেরেশতাগণ সকলেই সিজদাবনত হল। ইবলীস ছাড়া, সে অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ল। আল্লাহ বললেন, ‘হে ইবলীস! আমার দু’হাতে আমি যাকে সৃষ্টি করেছি তার প্রতি সিজদাবনত হতে কিসে তোমাকে বাধা দিল? তুমি কি অহংকার করলে, না তুমি অধিকতর উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন?’ সে বলল : ‘আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নি থেকে আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।’ তিনি বললেন, ‘তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। কেননা নিশ্চয় তুমি বিতাড়িত। আর নিশ্চয় বিচার দিবস পর্যন্ত তোমার প্রতি আমার লা‘নত বলবৎ থাকবে। সে বলল : ‘হে আমার রব, আমাকে সে দিন পর্যন্ত অবকাশ দিন যেদিন তারা পুনরুত্থিত হবে।’ তিনি বললেন, আচ্ছা তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হলে-‘নির্ধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।’ সে বলল : ‘আপনার ইজ্জতের কসম! আমি তাদের সকলকেই বিপথগামী করে ছাড়ব।’ তাদের মধ্য থেকে আপনার একনিষ্ঠ বান্দারা ছাড়া। আল্লাহ বললেন : এটি সত্য আর সত্য-ই আমি বলি’ তোমাকে দিয়ে এবং তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করত তাদের দিয়ে নিশ্চয় আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব। বল, ‘এর বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না আর আমি ভানকারীদের অন্তর্ভুক্ত নই। সৃষ্টিকুলের জন্য এ তো উপদেশ ছাড়া আর কিছু নয়।”১০

দুই. ফির‘আউন ও তার সম্প্রদায়ের লোক

অনুরূপভাবে ফির‘আউনের কুফরী করার কারণ ছিল, তার অহংকার। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন :

وَقَالَ فِرْعَوْنُ يَا أَيُّهَا الْمَلَأُ مَا عَلِمْتُ لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرِي فَأَوْقِدْ لِي يَا هَامَانُ عَلَى الطِّينِ فَاجْعَلْ لِي صَرْحًا لَعَلِّي أَطَّلِعُ إِلَى إِلَهِ مُوسَى وَإِنِّي لَأَظُنُّهُ مِنَ الْكَاذِبِينَ . وَاسْتَكْبَرَ هُوَ وَجُنُودُهُ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ إِلَيْنَا لَا يُرْجَعُونَ . فَأَخَذْنَاهُ وَجُنُودَهُ فَنَبَذْنَاهُمْ فِي الْيَمِّ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الظَّالِمِينَ . وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يُنْصَرُونَ . وَأَتْبَعْنَاهُمْ فِي هَذِهِ الدُّنْيَا لَعْنَةً وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ هُمْ مِنَ الْمَقْبُوحِينَ.

আর ফির‘আউন বলল : ‘হে পারিষদবর্গ, আমি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ আছে বলে আমি জানি না। অতএব হে হামান! আমার জন্য তুমি ইট পোড়াও, তারপর আমার জন্য একটি প্রাসাদ তৈরী কর। যাতে আমি মূসার ইলাহকে দেখতে পাই। আর  নিশ্চয় আমি মনে করি সে মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত’। আর ফির‘আউন ও তার সেনাবাহিনী অন্যায়ভাবে যমীনে অহংকার করেছিল এবং তারা মনে করেছিল যে, তাদেরকে আমার নিকট ফিরিয়ে আনা হবে না। অতঃপর আমি তাকে ও তার সেনাবাহিনীকে পাকড়াও করলাম, তারপর তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। অতএব, দেখ যালিমদের পরিণাম কিরূপ হয়েছিল? আর আমি তাদেরকে নেতা বানিয়েছিলাম, তারা জাহান্নামের দিকে আহ্বান করত এবং কিয়ামতের দিন তাদেরকে সাহায্য করা হবে না। এ যমীনে আমি তাদের পিছনে অভিসম্পাত লাগিয়ে দিয়েছি আর কিয়ামতের দিন তারা হবে ঘৃণিতদের অন্তর্ভুক্ত।১১

তিন. সালেহ আ.-এর কওম সামূদ গোত্র

সামূদ গোত্রের কুফরীর কারণও একই। অর্থাৎ তাদের অহংকার। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন :

قَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا مِنْ قَوْمِهِ لِلَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا لِمَنْ آمَنَ مِنْهُمْ أَتَعْلَمُونَ أَنَّ صَالِحًا مُرْسَلٌ مِنْ رَبِّهِ قَالُوا إِنَّا بِمَا أُرْسِلَ بِهِ مُؤْمِنُونَ . قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا بِالَّذِي آمَنْتُمْ بِهِ كَافِرُونَ . فَعَقَرُوا النَّاقَةَ وَعَتَوْا عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ وَقَالُوا يَا صَالِحُ ائْتِنَا بِمَا تَعِدُنَا إِنْ كُنْتَ مِنَ الْمُرْسَلِينَ . فَأَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دَارِهِمْ جَاثِمِينَ.

“তার কওমের অহংকারী নেতৃবৃন্দ তাদের সেই মু’মিনদেরকে বলল যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত, ‘তোমরা কি জান যে, সালিহ তার রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত’? তারা বলল : ‘নিশ্চয় সে যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছে, আমরা তাতে বিশ্বাসী’। যারা অহংকার করেছিল তারা বলল : ‘নিশ্চয় তোমরা যার প্রতি ঈমান এনেছ, আমরা তার প্রতি অস্বীকারকারী’। অতঃপর তারা উষ্ট্রীকে যবেহ করল এবং তাদের রবের আদেশ অমান্য করল। আর তারা বলল : ‘হে সালিহ! তুমি আমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছ, তা আমাদের কাছে নিয়ে এসো, যদি তুমি রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাক’। ফলে তাদেরকে ভূমিকম্প পাকড়াও করল, তাই সকালে তারা তাদের গৃহে উপুড় হয়ে মরে রইল।”১২

চার. হুদ আ.-এর কাওম আদ সম্প্রদায়

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন :

فَأَمَّا عَادٌ فَاسْتَكْبَرُوا فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَقَالُوا مَنْ أَشَدُّ مِنَّا قُوَّةً أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللَّهَ الَّذِي خَلَقَهُمْ هُوَ أَشَدُّ مِنْهُمْ قُوَّةً وَكَانُوا بِآيَاتِنَا يَجْحَدُونَ . فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيحًا صَرْصَرًا فِي أَيَّامٍ نَحِسَاتٍ لِنُذِيقَهُمْ عَذَابَ الْخِزْيِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَخْزَى وَهُمْ لَا يُنْصَرُونَ . وَأَمَّا ثَمُودُ فَهَدَيْنَاهُمْ فَاسْتَحَبُّوا الْعَمَى عَلَى الْهُدَى فَأَخَذَتْهُمْ صَاعِقَةُ الْعَذَابِ الْهُونِ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ . وَنَجَّيْنَا الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ .

“আর ‘আদ সম্প্রদায়, তারা যমীনে অযথা  অহংকার করত এবং বলত, ‘আমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী কে আছে’? তবে কি তারা লক্ষ্য করেনি যে, নিশ্চয় আল্লাহ যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী? আর তারা আমার আয়াতগুলোকে অস্বীকার করত। তারপর আমি তাদের উপর অশুভ দিনগুলোতে ঝঞ্ঝাবায়ু পাঠালাম যাতে তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনাদায়ক আযাব আস্বাদন করাতে পারি। আর আখিরাতের আযাব তো অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক এবং তাদেরকে সাহায্য করা হবে না। আর সামূদ সম্প্রদায়, আমি তাদেরকে সঠিক পথের নির্দেশনা দিয়েছিলাম; কিন্তু তারা সঠিক পথে চলার পরিবর্তে অন্ধ পথে চলাই পছন্দ করেছিল। ফলে তাদের অর্জনের কারণেই লাঞ্ছনাদায়ক আযাবের বজ্রাঘাত তাদেরকে পাকড়াও করল। আর আমি তাদেরকে রক্ষা করলাম যারা ঈমান এনেছিল এবং তাকওয়া অবলম্বন করত।”১৩

পাঁচ. শু‘আইব আ.-এর কওম মাদায়েনবাসী

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন :

قَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا مِنْ قَوْمِهِ لَنُخْرِجَنَّكَ يَا شُعَيْبُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَكَ مِنْ قَرْيَتِنَا أَوْ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَا قَالَ أَوَلَوْ كُنَّا كَارِهِينَ . قَدِ افْتَرَيْنَا عَلَى اللَّهِ كَذِبًا إِنْ عُدْنَا فِي مِلَّتِكُمْ بَعْدَ إِذْ نَجَّانَا اللَّهُ مِنْهَا وَمَا يَكُونُ لَنَا أَنْ نَعُودَ فِيهَا إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّنَا وَسِعَ رَبُّنَا كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا عَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْنَا رَبَّنَا افْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِالْحَقِّ وَأَنْتَ خَيْرُ الْفَاتِحِينَ . وَقَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ قَوْمِهِ لَئِنِ اتَّبَعْتُمْ شُعَيْبًا إِنَّكُمْ إِذًا لَخَاسِرُونَ . فَأَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دَارِهِمْ جَاثِمِينَ . الَّذِينَ كَذَّبُوا شُعَيْبًا كَأَنْ لَمْ يَغْنَوْا فِيهَا الَّذِينَ كَذَّبُوا شُعَيْبًا كَانُوا هُمُ الْخَاسِرِينَ.

“তার কওম থেকে যে নেতৃবৃন্দ অহংকার করেছিল তারা বলল : ‘হে শু‘আইব, আমরা তোমাকে ও তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে অবশ্যই আমাদের জনপদ থেকে বের করে দেব অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে ফিরে আসবে।’ সে বলল : ‘যদিও আমরা অপছন্দ করি তবুও?’ আমরা তো আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করলাম যদি আমরা তোমাদের ধর্মে ফিরে যাইÑ সেই ধর্ম থেকে আল্লাহ আমাদেরকে নাজাত দেয়ার পর। আর আমাদের জন্য উচিত হবে না তাতে ফিরে যাওয়া। তবে আমাদের রব আল্লাহ চাইলে (সেটা ভিন্ন কথা)। আমাদের রব জ্ঞান দ্বারা সব কিছু পরিব্যাপ্ত করে আছেন। আল্লাহরই উপর আমরা তাওয়াক্কুল করি। হে আমাদের রব! আমাদের ও আমাদের কওমের মধ্যে যথার্থ ফায়সালা করে দিন। আর আপনি শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী। আর তার কওম থেকে যে নেতৃবৃন্দ কুফরী করেছিল তারা বলল : ‘যদি তোমরা শু‘আইবকে অনুসরণ কর তাহলে নিশ্চয় তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ অতঃপর ভূমিকম্প তাদের পাকড়াও করল। তারপর তারা তাদের গৃহে উপুড় হয়ে মরে রইল। যারা শু‘আইবকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, মনে হয় যেন তারা সেখানে বসবাসই করেনি। যারা শু‘আইবকে মিথ্যাবাদী বলেছিল তারাই ছিল ক্ষতিগ্রস্ত।”১৪

ছয়. নূহ আ.-এর সম্প্রদায়

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন :

قَالَ رَبِّ إِنِّي دَعَوْتُ قَوْمِي لَيْلًا وَنَهَارًا . فَلَمْ يَزِدْهُمْ دُعَائِي إِلَّا فِرَارًا . وَإِنِّي كُلَّمَا دَعَوْتُهُمْ لِتَغْفِرَ لَهُمْ جَعَلُوا أَصَابِعَهُمْ فِي آذَانِهِمْ وَاسْتَغْشَوْا ثِيَابَهُمْ وَأَصَرُّوا وَاسْتَكْبَرُوا اسْتِكْبَارًا . ثُمَّ إِنِّي دَعَوْتُهُمْ جِهَارًا . ثُمَّ إِنِّي أَعْلَنْتُ لَهُمْ وَأَسْرَرْتُ لَهُمْ إِسْرَارًا . فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا.

“সে বলল : ‘হে আমার রব! আমি তো আমার কওমকে রাত-দিন আহবান করেছি। ‘অতঃপর আমার আহ্বান কেবল তাদের পলায়নই বাড়িয়ে দিয়েছে’। ‘আর যখনই আমি তাদেরকে আহ্বান করেছি ‘যেন আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন’, তারা নিজদের কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়েছে, নিজদেরকে পোশাকে আবৃত করেছে, (অবাধ্যতায়) অনড় থেকেছে এবং দম্ভভরে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছে’। ‘তারপর আমি তাদেরকে প্রকাশ্যে আহ্বান করেছি’। অতঃপর তাদেরকে আমি প্রকাশ্যে এবং অতি গোপনেও আহ্বান করেছি। আর বলেছি, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’।”১৫

পরবর্তীতে তাদের শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

مِمَّا خَطِيئَاتِهِمْ أُغْرِقُوا فَأُدْخِلُوا نَارًا فَلَمْ يَجِدُوا لَهُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْصَارًا . وَقَالَ نُوحٌ رَبِّ لَا تَذَرْ عَلَى الْأَرْضِ مِنَ الْكَافِرِينَ دَيَّارًا . إِنَّكَ إِنْ تَذَرْهُمْ يُضِلُّوا عِبَادَكَ وَلَا يَلِدُوا إِلَّا فَاجِرًا كَفَّارً.

“তাদের পাপের কারণে তাদেরকে ডুবিয়ে দেয়া হল অতঃপর আগুনে প্রবেশ করানো হল; তারা নিজদের সাহায্যকারী হিসেবে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে পায়নি। আর নূহ বলল : ‘হে আমার রব! যমীনের উপর কোন কাফিরকে অবশিষ্ট রাখবেন না’। ‘আপনি যদি তাদেরকে অবশিষ্ট রাখেন তবে তারা আপনার বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে এবং দুরাচারী ও কাফির ছাড়া অন্য কারো জন্ম দেবে না’।”১৬

সাত. বনী ইসরাঈল

এ প্রসেঙ্গ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন :

وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ وَقَفَّيْنَا مِنْ بَعْدِهِ بِالرُّسُلِ وَآتَيْنَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ وَأَيَّدْنَاهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ أَفَكُلَّمَا جَاءَكُمْ رَسُولٌ بِمَا لَا تَهْوَى أَنْفُسُكُمُ اسْتَكْبَرْتُمْ فَفَرِيقًا كَذَّبْتُمْ وَفَرِيقًا تَقْتُلُونَ . وَقَالُوا قُلُوبُنَا غُلْفٌ بَلْ لَعَنَهُمُ اللَّهُ بِكُفْرِهِمْ فَقَلِيلًا مَا يُؤْمِنُونَ . وَلَمَّا جَاءَهُمْ كِتَابٌ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَهُمْ وَكَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا فَلَمَّا جَاءَهُمْ مَا عَرَفُوا كَفَرُوا بِهِ فَلَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْكَافِرِينَ . بِئْسَمَا اشْتَرَوْا بِهِ أَنْفُسَهُمْ أَنْ يَكْفُرُوا بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ بَغْيًا أَنْ يُنَزِّلَ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ عَلَى مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ فَبَاءُوا بِغَضَبٍ عَلَى غَضَبٍ وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ مُهِينٌ .

“যার বিনিময়ে তারা নিজদেরকে বিক্রয় করেছে তা কত জঘন্য (তা এই) যে, আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তা তারা অস্বীকার করেছে এই জিদের বশবর্তী হয়ে যে, আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তার উপর তাঁর অনুগ্রহ নাযিল করেছেন। সুতরাং তারা ক্রোধের উপর ক্রোধের অধিকারী হল। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব। আর তারা বলল : আমাদের অন্তরসমূহ আচ্ছাদিত; বরং তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ্ তাদেরকে লা‘নত করেছেন। অতঃপর তারা খুব কমই ঈমান আনে। আর যখন তাদের কাছে, তাদের সাথে যা আছে, আল্লাহ্র পক্ষ থেকে তার সত্যায়নকারী কিতাব এলো, আর তারা (এর মাধ্যমে) পূর্বে কাফিরদের উপর বিজয় কামনা করত। সুতরাং যখন তাদের নিকট এলো যা তারা চিনত, তখন তারা তা অস্বীকার করল। অতএব কাফিরদের উপর আল্লাহ্র লা‘নত। আর আমি নিশ্চয় মূসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তার পরে একের পর এক রাসূল প্রেরণ করেছি এবং মারইয়াম পুত্র ঈসাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ। আর তাকে শক্তিশালী করেছি ‘পবিত্র আত্মা’র মাধ্যমে। তবে কি তোমাদের নিকট যখনই কোন রাসূল এমন কিছু নিয়ে এসেছে, যা তোমাদের মনঃপূত নয়, তখন তোমরা অহংকার করেছ, অতঃপর (নবীদের) একদলকে তোমরা মিথ্যাবাদী বলেছ আর একদলকে হত্যা করেছ।”১৭

এমনিভাবে মহান আল্লাহ্ অহংকারীদের অহংকার ভেঙ্গে চুরে দাবিয়ে দেন।

অহংকারের শাস্তি

নিজেকে আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করা, অন্যদেরকে নিজের তুলনায় ছোট ও অধম মনে করে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা, আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধে ঔদ্ধ্যত প্রকাশ করে তার প্রতি অবাধ্য হওয়া ও আদেশ অমান্য করা সবই অহংকারের লক্ষণ ও অহংকারের মধ্যে গণ্য। আল কুরআনে বহু জায়গায় অহংকারের নিন্দা ও অহংকারীর প্রতি ধিক্কার ঘোষিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

وَقَالَ مُوسَى إِنِّي عُذْتُ بِرَبِّي وَرَبِّكُمْ مِنْ كُلِّ مُتَكَبِّرٍ لَا يُؤْمِنُ بِيَوْمِ الْحِسَابِ.

“মূসা বললো : আমি আমার ও তোমাদের প্রতিপালকের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি এমন প্রত্যেক অহংকারী থেকে, যে হিসাবের দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে না।”১৮

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা অন্য এক আয়াতে বলেন :

إنه لا يحب المستكبرين.

“নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না।”১৯

এ দ্বারা বুঝা গেল, আল্লাহর প্রতি তার ঈমান থাকলেও তাতে কোন লাভ হবে না। ইবলিসের ন্যায় সে কাফের বলে গণ্য হবে। লুকমান আ. তার ছেলেকে উপদেশ দিতে যেয়ে যে কথা বলেছিলেন তা আল্লাহ্ তা‘আলা এত বেশি পছন্দ করেছিলেন যে, আল্লাহ্ তা কুর’আনে উল্লেখ করে দিয়েছেন। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “অহংকার আমার পোশাক। এই পোশাক যে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চেষ্টা করে, তাকে আমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।”২০

রাসূল (সা.) আরো বলেন : যে ব্যক্তি অহংকারের সাথে চলাফেরা করে এবং নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে, সে যখন আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাত করবে, তখন তাঁকে তার ওপর রাগান্বিত দেখবে।”২১

অপর একটি হাদীসে এসেছে,আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূল (সা.) বলেছেন : আল্লাহ তা‘আলা তিন শ্রেণীর লোকের সাথে ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন না। (১) বয়ঃপ্রাপ্ত যেনাকার (২) মিথ্যুক শাসক (৩) অহংকারী দরিদ্র।২২

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন : রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘যে অহংকার বশত পায়ের নিচে লুঙ্গি ঝুলিয়ে রাখে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রতি দৃষ্টি দিবেন না’।২৩

এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, যারা অহংকার করে টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরবে আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তাদের দিকে দৃষ্টি দিবেন না। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে মুসলিম পুরুষরা লুঙ্গি, পাজামা, প্যান্ট গোড়ালীর নিচে ঝুলিয়ে পরে। এটা যেন এখন একটা ফ্যাশান। অথচ এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এ বিষয়ে কোন মানুষ চিন্তা করে না। এর মধ্যে কোন ভদ্রতা ও শালীনতা নেই। বরং এর পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম। তাই এ বিষয়ে প্রত্যেক মুসলিম পুরুষকে সজাগ ও সচেতন হওয়া জরূরী। জান্নাত পিয়াসী মুসলিম পুরুষকে টাখনুর উপরে কাপড় পরিধান করতে হবে। অন্যথা পরকালে তাদেরকে জাহান্নামে যেতে হবে।

মনে রাখতে হবে যে, জ্ঞান ও বিদ্যার শ্রেষ্ঠত্ব এবং পদমর্যাদার উচ্চতা নিয়ে বড়াই করা খুবই নিকৃষ্ট ধরনের অহংকার। যে ব্যক্তি আখিরাতের উদ্দেশ্যে বিদ্যা বিশেষত ইসলামী জ্ঞান অর্জন করে, সে অহংকারী হতে পারে না। সে সবসময় নিজের মনের ওপর পাহারা বসিয়ে রাখে এবং কড়া নজর রাখে। এ ব্যাপারে শৈথিল্য দেখা দিলেই মনে অহংকার আসবে এবং সঠিক পথ থেকে তাকে বিচ্যুত করে ফেলবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন : যে অহংকার করে তাকে আমি আমার আয়াতসমূহ থেকে ফিরিয়ে রাখবো। অর্থাৎ অহংকার মানুষের হেদায়েতের পথ বন্ধ করে দেয়। আর যে ব্যক্তি অহংকার করা ও মুসলমানদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জন করে এবং জ্ঞানার্জনের পর তাদেরকে বোকা ভাবে, সে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ধরনের অহংকারে লিপ্ত হয়।

অহংকার থেকে বাঁচার উপায়

একটি কথা মনে রাখতে হবে, কিবর তথা অহংকার এমন একটি কবীরা গুণাহ যা মানুষকে ধ্বংস করে দেয় এবং একজন মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতকে নষ্ট করে দেয়। এ কারণেই একজন মানুষের জন্য অহংকার থেকে দূরে থাকা বা তার জীবন থেকে তা দুর করা অকাট্যভাবে ফরয। আর এ কথ সত্য যার মধ্যে অহংকার থাকে সে শুধু আশা করলে বা ইচ্ছা করলেই অহংকারকে দূর করতে বা অহংকার হতে বিরত থাকতে পারে না। তাকে অবশ্যই এ মারাত্মক ব্যাধির চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। অহংকারের চিকিৎসা নিম্নরূপ :

এক. অন্তর থেকে দূরিভূত করা

প্রথমে অহংকারী নিজেকে চিনতে হবে, তারপর তাকে তার প্রভুকে চিনতে হবে। একজন মানুষ যখন নিজেকে ভালোভাবে চিনতে পারবে এবং আল্লাহ্ তা‘আলার মহত্ব ও বড়ত্বকে সঠিকভাবে বুঝতে পারবে তখন তার মধ্যে বিনয় ও নম্রতা ছাড়া আর কিছুই থাকতে পারে না, অহংকার তার থেকে এমনিতেই দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ্ তা‘আলাকে যখন ভালোভাবে চিনবে তখন সে অবশ্যই জানতে পারবে বড়ত্ব ও মহত্ব একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো জন্য প্রযোজ্য নয়। আর এভাবে সে তার মন থেকে অহংকার মুছে ফেলতে পারবে।

দুই. অহংকারের উৎসসমূহ থেকে বিরত থাকা

এানুষ যে সব বস্তু নিয়ে অহংকার করে তাতে চিন্তা ফিকির করা এবং মেনে নেয়া যে তার জন্য এসব বস্তু নিয়ে অহংকার করা উচিত নয়। কেউ যদি তার বংশ মর্যাদা নিয়ে অহংকার করে, তখন তাকে বুঝতে হবে যে, এটি একটি মূর্খতা বৈ কিছুই নয়। কারণ সে তো তার নিজের ভিতরের কোন যোগ্যতা নিয়ে অহংকার করছে না। সে অহংকার করছে অন্যদের যোগ্যতা নিয়ে। যা একেবারেই বিবেক ও বুদ্ধিহীন কাজ।

তিন. আল্লাহর নিকট সাহায্য যাওয়া

দো‘আ ও আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া হল, অহংকার থেকে বাঁচার জন্য সব চেয়ে উপকারী ও কার্যকর ঔষধ। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা যাদের হিফাযত করেন, তারাই অহংকার থেকে বাঁচতে পারে। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া বাঁচার কোন উপায় নেই। এ কারণে রাসূল সা. উম্মতদের দো‘আ শিখিয়ে দেন এবং তিনি নিজেও সালাতে বেশি বেশি করে আল্লাহর নিকট দো‘আ মুনাজাত করেন। এ প্রসঙ্গে হাদীসের এক বর্ণনায় এসেছে : যুবাইর ইব্ন মুতইম রা. হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল সা. কে একবার সালাত আদায় করতে দেখেন, তখন তিনি রাসূল সা.কে সালাতে এ কথাগুলো বলতে শোনেন :

الله أَكْبر كَبِيًرا الله أَكبر كَبِيًرا الله أَكبر كَبِيًرا وَالحَمْدُ لله كَثيِراً وَالحَمْدُ لله كَثِيراً وَالحَمْدُ لله كَثِيراً وَسبحَانَ الله بُكْرَةً وََأِصيلًا ثَلَاًثا، أَعُوذُ باِلله مِنْ الشَّيطْاَنِ الرجيم مِنْ نَفْخِهِ وَنَفْثِهِ وَهمْزِه 

“আল্লাহ তা‘আলা সব কিছু হতে বড়, আল্লাহ্ তা‘আলা সবকিছু হতে বড়, আল্লাহ্ তা‘আলা সবকিছু হতে বড়। আর সর্বাধিক প্রশংসা কেবলই আল্লাহরই, আর সর্বাধিক প্রশংসা কেবলই আল্লাহরই, আর সর্বাধিক প্রশংসা কেবলই আল্লাহরই। আর আমি বিতাড়িত শয়তান হতে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, আমি আরও আশ্রয় চাচ্ছি তার অহংকার থেকে তার প্ররোচনা থেকে ও ষড়যন্ত্র থেকে।”২৪

চার. আত্মপরিচয় সম্পর্কে অবগত হওয়া

যে ব্যক্তির মধ্যে অহংকার আসে তার চিন্তা করে দেখা উচিত যে, অহংকার কোন্ কারণে এসেছে, এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, অহংকার দূর করতে হলে নিজেকে এবং প্রভুকে চিনতে হবে। মানুষকে এক ফোটা তুচ্ছ পানি দ্বারা পয়দা করা হইয়াছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন :

هَلْ أَتَى عَلَى الْإِنْسَانِ حِينٌ مِنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُنْ شَيْئًا مَذْكُورًا . إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ نُطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا.

“মানুষের উপর এমন এক সময় কি আসেনি? যখন সে উল্লেখযোগ্য কোন জিনিসই ছিল না। নিশ্চয়ই আমি মানুষকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে সংমিশ্রিত ধাতু দ্বারা সৃষ্টি করেছি। অুঃপর আমি তাকে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টি শক্তির অধিকারী করেছি।”২৫

পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪| পর্ব ৫ | পর্ব ৬ | পর্ব ৭| পর্ব ৮ | পর্ব ৯ | পর্ব ১০


১. ইবনে মানযুর, লিসানুর আরব, (বৈরূত : দারুল ফিকর, তা.বি.), খ. ৫০, পৃ. ১২৫
২. মুসলিম, আস-সহীহ, পৃ. ৯১
৩. দার কুতনী, খ. ৪, পৃ. ২০৬
৪. তারিখে বাগদাদ, খ. ১০, পৃ. ৩০৭
৫. সিয়ার আলাম আন নুবালা, খ. ৭, পৃ. ৪০৭
৬. সূরা আল-আলাক, আয়াত : ৬-৮
৭. আল্লামা বাগাভী, তাফসীরু মাআলিমুত তানযীল, খ. ৮, পৃ. ৪৯৭
৮. বুখারী, আস-সহীহ, হাদীস নং-৫০৯৬
৯. ইসলাহে নাফস, পৃ. ১২
১০. সূরা সাদ, আয়াত : ৭১-৮৭
১১. সূরা আল-কাসাস, আয়াত : ৩৮-৪২
১২. সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত : ৭৫-৭৮
১৩. সূরা ফুসসিলাত, আয়ত : ১৫-১৬
১৪. সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত : ৮৮-৯২
১৫. সূরা নূহ, আয়াত : ৫-১০
১৬. সূরা নূহ, আয়াত : ২৫-২৮
১৭. সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত : ৮৭-৯০
১৮. সূরা আল মু’মিন
১৯. সূরা আন্-নাহল, আয়াত : ২৩
২০. সহীহ মুসলিম
২১. তাবারানী
২২. মুসলিম, মিশকাত, হাদীস নং-৫১০৯
২৩. বুখারী, হাদীস নং-৫৩৪২
২৪. আবূ দাউদ, আস-সুনান, খ. ৪, পৃ. ৪২৭, হাদীস নং-৪৯০৫।
২৫. সূরা আদ-দাহর, আয়াত : ১-২

অহংকার থেকে মুক্তির উপায়

$
0
0

arrogance

প্রশ্ন: কিভাবে একজন মানুষ অহংকার থেকে মুক্তি পেতে পারে?

উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ।

এক: 

অহংকার একটি খারাপ গুণ। এটি ইবলিস ও দুনিয়ায় তার সৈনিকদের বৈশিষ্ট্য; আল্লাহ যাদের অন্তর আলোহীন করে দিয়েছেন।

সর্বপ্রথম আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টির উপর যে অহংকার করেছিল সে হচ্ছে— লানতপ্রাপ্ত ইবলিস। যখন আল্লাহ তাকে নির্দেশ দিলেন— আদমকে সেজদা কর; তখন সে অসম্মতি জানিয়ে বলল: “আমি তার চেয়ে উত্তম। আমাকে বানিয়েছেন আগুন দিয়ে; তাকে বানিয়েছেন মাটি দিয়ে।”

আল্লাহ তাআলা বলেন:

“আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করলাম, এরপর আকার-অবয়ব তৈরি করেছি। অতঃপর আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম – আদমকে সেজদা কর; তখন সবাই সেজদা করল। কিন্তু ইবলিস সেজদাকারীদের মধ্যে ছিল না। আল্লাহ বললেন: আমি যখন তোকে সেজদা করার আদেশ দিলাম তখন কিসে তোকে সেজদা করতে বাধা দিল? সে বলল: আমি তার চেয়ে উত্তম। আমাকে বানিয়েছেন আগুন দিয়ে; তাকে বানিয়েছেন মাটি দিয়ে।” [ সূরা আরাফ, আয়াত: ১১-১২ ]

তাই অহংকার ইবলিসি চরিত্র। যে ব্যক্তি অহংকার করতে চায় সে জেনে রাখুক সে শয়তানের চরিত্র গ্রহণ করেছে। সে সম্মানিত ফেরেশতাদের চরিত্র গ্রহণ করেনি, যারা আল্লাহর আনুগত্য করে সেজদায় লুটিয়ে পড়েছিল।

অহংকার অহংকারীর জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ, ইজ্জতের মালিক আল্লাহকে সরাসরি দেখতে না পাওয়ার কারণ। দলিল হচ্ছে এ দুইটি হাদিস:

আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একলোক বলল: যে কোন লোক পছন্দ করে তার জামাটা ভাল হোক, তার জুতাটা ভাল হোক? তিনি বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর; তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অহংকার হচ্ছে – সত্যকে উপেক্ষা করা এবং মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা।” [ সহিহ মুসলিম ]

সত্যকে উপেক্ষার অর্থ: সত্য জেনেও সেটাকে প্রত্যাখ্যান করা।

মানুষকে তুচ্ছ করার অর্থ: মানুষকে ছোট করা, হেয় করা।

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে হাঁটবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না। আবু বকর (রাঃ) বললেন: আমার কাপড়ের একটা অংশ ঝুলে পড়ে যায়; আমি বারবার সেটাকে টেনে নেই। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি তো অহংকারবশতঃ সেটা কর না।” [ সহিহ বুখারী – ৩৪৬৫]

দুই:

অহংকার এমন একটি গুণ যা শুধু আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য। যে ব্যক্তি এ গুণ নিয়ে আল্লাহর সাথে টানাটানি করে আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেন, তার প্রতাপ নস্যাৎ করে দেন ও তার জীবনকে সংকুচিত করে দেন।

আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন: সম্মান হচ্ছে- আল্লাহর পরনের কাপড়; আর অহংকার হচ্ছে- আল্লাহর চাদর। যে ব্যক্তি এটা নিয়ে আমার সাথে টানাটানি করে আমি তাকে শাস্তি দেই।” [ সহিহ মুসলিম – ২৬২০]

নববী বলেন:

সহিহ মুসলিমের সব কপিতে এভাবে আছে। ازاره ও رداؤه শব্দদ্বয়ের ه জমির (সর্বনাম) দ্বারা আল্লাহকে বুঝানো হচ্ছে। এখানে বাক্যের কিছু অংশ উহ্য রয়েছে সেটা হচ্ছে-قال الله تعالى : ومن ينازعني ذلك أعذبه ( অর্থঃ আল্লাহ বলেন: যে ব্যক্তি সেটা নিয়ে আমার সাথে টানাটানি করবে আমি তাকে শাস্তি দিব)

আমার সাথে ‘টানাটানি’ করবে এর অর্থ- এ গুণ লালন করবে; ফলে সে অংশীদার এর পর্যায়ে পড়বে। এটি অহংকারের কঠিন শাস্তি ও অহংকার হারাম হওয়ার স্পষ্ট ঘোষণা।[ শারহু মুসলিম (১৬/১৭৩)]

যে ব্যক্তি অহংকার করতে চায় ও বড়ত্ব দেখাতে চায় আল্লাহ তাকে নীচে ছুড়ে ফেলে দেন ও বেইজ্জত করেন। যেহেতু সে তার মূলপরিচয়ের বিপরীতে গিয়ে কিছু করার চেষ্টা করেছে তাই আল্লাহ তাকে তার ইচ্ছার বিপরীতে শাস্তি দিয়ে দেন। বলা হয়: শাস্তি আমলের সম জাতীয় হয়ে থাকে।

যে ব্যক্তি মানুষের উপর অহংকার করে কিয়ামতের দিন তাকে মানুষের পায়ের নীচে মাড়ানো হবে। এভাবে আল্লাহ তাআলা অহংকারের কারণে তাকে লাঞ্ছিত করবেন।

আমর ইবনে শুয়াইব তার পিতা থেকে তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “কিয়ামতের দিন অহংকারীদেরকে ছোট ছোট পিপীলিকার ন্যায় মানুষের আকৃতিতে হাশরের ময়দানে উপস্থিত করা হবে। অপমান ও লাঞ্ছনা তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলবে। তাদেরকে জাহান্নামের একটি জেলখানায় একত্রিত করা হবে, যার নাম হবে “বুলাস। আগুন তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঢেকে ফেলবে। জাহান্নামীদের শরীরের ঘাম তাদেরকে পান করতে বাধ্য করা হবে।”। [সুনানে তিরমিজি – ২৪৯২, আলবানী সহিহ তিরমিজি গ্রন্থে – ২০১৫ এ হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]

তিন:

অহংকারের নানান রূপ রয়েছে:

১. সত্যকে গ্রহণ না করা; অন্যায়ভাবে বিতর্ক করা। যেমনটি আমরা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের হাদিসে উল্লেখ করেছি। “অহংকার হচ্ছে- সত্যকে উপেক্ষা করা এবং মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা।”

২. নিজের সৌন্দর্য্য, দামী পোশাক ও দামী খাবার ইত্যাদি দ্বারা অভিভূত হয়ে পড়া এবং মানুষের উপর দাম্ভিকতা ও অহংকার প্রকাশ করা।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা আবুল কাসেম বলেছেন: একদা এক ব্যক্তি হুল্লা পরে, আত্মম্ভরিতা নিয়ে, মাথা আঁচড়িয়ে হাঁটছিল এমতাবস্থায় আল্লাহ তাকে সহ ভূমি ধ্বস করে দিলেন এবং এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত সে নীচের দিকে যেতে থাকবে।”[সহিহ বুখারি – ৩২৯৭ ও সহিহ মুসলিম – ২০৮৮]

এ ধরণের অহংকারের মধ্যে ঐ ব্যক্তির আচরণও পড়বে যার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

“সে ফল পেল। অতঃপর কথা প্রসঙ্গে সঙ্গীকে বললঃ আমার ধন-সম্পদ তোমার চাইতে বেশী এবং জনবলে আমি অধিক শক্তিশালী।” [ সূরা কাহাফ, আয়াত: ৩৪]

কখনো কখনো আত্মীয়স্বজন ও বংশধরদের নিয়ে গৌরবের মাধ্যমেও অহংকার হতে পারে.

চার:

অহংকার প্রতিরোধ করার উপায় হল- নিজেকে অন্য দশজন মানুষের মত মনে করা। অন্যসব লোককে নিজের সমতুল্য মনে করা। তারাও এক বাপ-মা থেকে জন্মগ্রহণ করেছে। যেভাবে আপনিও এক বাপ-মা এর ঘরে জন্মগ্রহণ করেছেন। আর আল্লাহভীতি ব্যক্তির মর্যাদা পরিমাপের মানদণ্ড। আল্লাহ তাআলা বলেন:

“নিশ্চয় তোমাদের যে ব্যক্তি বেশি তাকওয়াবান সে আল্লাহর নিকট বেশি সম্মানিত।” [ সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১৩]

অহংকারী মুসলিমের জানা থাকা উচিত সে যতই বড় হোক না কেন পাহাড় সমান তো আর হতে পারবে না; জমিন ছিদ্র করে তো বেরিয়ে যেতে পারবে না। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

“অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।” [ সূরা লোকমান, আয়াত: ১৭-১৮]

ইমাম কুরতুবী বলেন:

“পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না” এখানে অহংকার থেকে বারণ করা হয়েছে এবং বিনয়ী হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আয়াতে المرح শব্দের অর্থ- তীব্র আনন্দ। কেউ কেউ বলেছেন: হাঁটার মধ্যে অহংকার করা, কেউ বলেছেন: কোন মানুষের তার মর্যাদার সীমা অতিক্রম করে যাওয়া।

কাতাদা বলেছেন: হাঁটার ক্ষেত্রে অহংকার। কেউ কেউ বলেছেন: প্রত্যাখান। কেউ কেউ বলেছেন: উদ্যম।

এ উক্তিগুলো সমার্থবোধক। কিন্তু এগুলো দুইভাগে বিভক্ত:

একটি: নন্দিত অপরটি: নিন্দিত।

অহংকার, প্রত্যাখান, দাম্ভিকতা এবং কোন মানুষের তার সীমা অতিক্রম করা: নিন্দিত।

আর আনন্দ ও উদ্যমতা: নন্দিত। [ তাফসিরে কুরতুবী ১০/২৬০]

অহংকার প্রতিরোধ করার আরেকটি উপায় হলো- এটি মনে রাখা যে, অহংকারীকে কিয়ামতের দিন পিঁপড়ার ন্যায় ছোট করে হাশর করা হবে মানুষের পায়ের নীচে মাড়ানো হবে। অহংকারী মানুষের নিকট অপছন্দীয় যেমনিভাবে সে আল্লাহর নিকটও অপছন্দনীয়। মানুষ বিনয়ী, নম্র, ভদ্র, সহজ, সরল মানুষকে ভালবাসে। আর কঠিন ও রুঢ় স্বভাবের মানুষকে ঘৃণা করে।

অহংকার প্রতিরোধ করার আরেকটি উপায় হলো- অহংকারী যে পথ দিয়ে বের হয়েছে পেশাবও সে পথ দিয়ে বের হয়। তার সৃষ্টির সূচনা হয়েছে নাপাক বীর্য থেকে। তার সর্বশেষ পরিণতি হচ্ছে- পচা লাশ। এ দুই অবস্থার মাঝখানে সে পায়খানা বহন করে চলছে। সুতরাং অহংকার করার মত কী আছে?!!

আমরা আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে অহংকার থেকে মুক্তি দেন এবং আমাদেরকে বিনয় দান করেন।

আল্লাহই ভাল জানেন।

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

একজন ঈমানদার দা‘ঈর বর্জিত গুণাবলি –পর্ব ২ –হিংসা

$
0
0

DawahMission_Gloucester_FB-01

লেখক:মুহাম্মদ শাহিদুল ইসলাম

পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪| পর্ব ৫ | পর্ব ৬ | পর্ব ৭| পর্ব ৮ | পর্ব ৯ | পর্ব ১০

২. হিংসা

হিংসা করা কবিরা গুনাহ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা মহাগ্রন্থ আল-কুর’আনে ঘোষণা করেন :

وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ.

“হিংসুক যখন হিংসা করে, তখন তার ক্ষতি হতে আশ্রয় প্রার্থনা কর।”২৬ 

এ প্রসেঙ্গ হাদীসের এক বর্ণনায় এসেছে,

عن أبى هريرة أن النبى صلى الله عليه وسلم قال : إياكم والحسد فإن الحسد يأكل الحسنات كما تأكل النار الحطب.

“রাসূল সা. বলেছেন : তোমরা হিংসা হতে বিরত থাক। কেননা হিংসা মানুষের সৎকর্মগুলোকে খেয়ে ফেলে যেমনিভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে।”২৭

হিংসার পরিচয়

হিংসার আরবী প্রতিশব্দ হলো হাসাদ (حسد)। যার আভিধানিক অর্থ হিংসা, ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি।

পরিভাষায় বলা হয় যে, কারো উন্নতি বা ভাল অবস্থা দেখে তা অসহ্য হওয়া এবং মনে মনে এই কামনা করা যে, তাঁর এ ভাল অবস্থা না থাকুক।

মানুষের ভাল অবস্থা দর্শনে অন্তরে দুই প্রকার হালত পয়দা হয়ে থাকে। এক প্রকারের নাম হলো হাসাদ তথা হিংসা অন্য প্রকার হলো গীবতা।

হাসাদ হলো অপরের ভাল দেখে মনে মনে তার অমঙ্গল কামনা ও অকল্যাণ কামনা করা এবং হিংসা করা।

গীবতা (غبط) শব্দটি আরবী। যার আভিধানিক অর্থ হলো অন্যের ন্যায় সুখ কামনা করা, ঈর্ষা, সুখ, খুশি, আনন্দ ইত্যাদি। আর যদি ভাল অবস্থা দেখে মনে মনে এই কামনা করে যে, আমারও এরূপ ভাল অবস্থা হাসিল হউক, তাহলে তাকে গীবতা বলে।

হিংসার হুকুম

হাসাদ তথা হিংসা করা হারাম। প্রকাশ থাকে যে, গোমরাহ পীর ও গোমরাহ্ আলিমগণ যে নিয়ামত দ্বারা গোমরাহীর কাজ বিস্তার করে উক্ত নিয়ামত ধ্বংসর কামনা করা জায়েয এবং ফাসিক লোকরা যে নিয়ামত দ্বারা বেশরা কাজ বিস্তার করে উহাতে হিংসা জায়িয।

যে নিয়ামত দর্শনে গীবতার উদয় হয় উক্ত নিয়ামত যদি দ্বীনি নিয়ামত হয় এবং হাসিল করা ওয়াজিব হয়, যেমন : ঈমান, নামায, যাকাত ইত্যাদি তবে গীবতা করা ওয়াজিব। আর যদি উক্ত নিয়ামত নফল হয়, তবে সে গীবতা করা

মুস্তাহাব। আর যদি উক্ত নিয়ামত দুনিয়াবী হয়ে থাকে তাহলে তা মুবাহ।২৮

হিংসা করার কারণসমূহ

বিভিন্ন গ্রন্থাদি ও মুসলিম মনীষীদের গবেষণার ফলে হিংসার নিম্নোক্ত কারণগুরো খুঁজে বের করা হয়েছে। যেমন :

১.        আদাওয়াত। তথা শত্রুতার কারণে অন্তরে হিংসা পয়দা হয়ে থাকে।

২.       সমশ্রেণী লোকদের উন্নতি দর্শনে অন্তরে হিংসা পয়দা হয়ে থাকে।

৩.       হিকারাত। অর্থাৎ যাকে হিকারাতের তথা অবজ্ঞার চোখে দেখা হয় হতো তার উন্নতি দর্শনে অন্তরে হিংসার পয়দা হয়।

৪.       তায়াজ্জুব। অর্থাৎ যার উন্নতি কল্পনা ছিল না, তাঁর উন্নতি দর্শনে হিংসা পয়দা হয়ে থাকে।

৫.       ইচ্ছা পুরণ না হওয়ার ভয় হলে।

৬.       মহব্বতে রিয়াসাতের জন্য অন্তরে হিংসার পয়দা হয়ে থাকে।

৭.       খুবস ও বুখলে নফসের কারণে অন্তরে হিংসার উৎপত্তি হয়ে থাকে।২৯

হিংসার পরিণাম

হিংসার পরিণাম খুব ভয়াবহ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা মহাগ্রন্থ আল-কুর’আনে ঘোষণা করেন :

وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ.

“হিংসুক যখন হিংসা করে, তখন তার ক্ষতি হতে আশ্রয় প্রার্থনা কর।”৩০ 

এ প্রসেঙ্গ হাদীসের এক বর্ণনায় এসেছে,

عن أبى هريرة أن النبى صلى الله عليه وسلم قال : إياكم والحسد فإن الحسد يأكل الحسنات كما تأكل النار الحطب.

“রাসূল সা. বলেছেন : তোমরা হিংসা হতে বিরত থাক। কেননা হিংসা মানুষের সৎকর্মগুলোকে খেয়ে ফেলে যেমনিভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে।”৩১

আব্দুর রহমান ইবন মু‘আবিয়া রা. হতে বর্ণিত; নবী করীম সা. বলেছেন :

তিনটি দূষণীয় কাজ থেকে কেউ মুক্তি পায় না : এক. খারাপ ধারণা, দুই. হিংসা, তিন. অশুভ ফলাফলের ধারণা।জনৈক সাহাবী জিজ্ঞেসা করলেন : হে আল্লাহর রাসূল সা.! এগুলো থেকে বিরত থাকার উপায় কী? রাসূল সা. বললেন : মনে মনে কাউকে হিংসা করলে কাজে কর্মে তা প্রকাশ না করা, কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণা করলে তা সত্য বলে বিশ্বাস না করা এবং অশুভ ফলাফলের ধারণার কারণে কাজ থেকে ফিরে না আসা।৩২

রাসূল সা. বলেন : সাবধান! শুনে নাও, আল্লাহর নিয়ামতেরও কিছু শত্রু রয়েছে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন : হে আল্লাহর রাসূল সা.! আল্লাহর নিয়ামতের শত্রু কারা? রাসূল সা. বললেন : আল্লাহ্ স্বীয় অনুগ্রহে মানুষকে যে নিয়ামত দান করেছেন, তার কারণে মানুষকে যে হিংসা করে, সে আল্লাহর নিয়ামতের শত্রু।৩৩

হিংসার পরিণতি সম্পর্কে উপরে বর্ণিত বর্ণনা ছাড়াও আরো অধিক অপকার রয়েছে, যেগুলো মানুষের জীবনের ও পারলৌকিক জীবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

হিংসা থেকে বাঁচার উপায়

প্রকাশ থাকে যে, হিংসার চিকিৎসা দুই প্রকারে হয়ে থাকে।

এক. ইলমী ইলাজ (علاج العلمي) : যার উন্নতি সাধিত হয়েছে এবং তা দর্শনে মনে হিংসার উদয় হয়েছে তার সম্বন্ধে এ ধারণা করা যে, এ ব্যক্তির তাকদীরে উন্নতি লেখা আছে বলেই উন্নতি হয়েছে। এক্ষণে এ ব্যক্তি সাথে হিংসা করলে আল্লাহর তাকদীর অস্বীকার করার মত গোনাহ হবে।

দুই. আমলী ইলাজ (علاج العملي) : অর্থাৎ যার সাথে হিংসার ভাব উদয় হয়েছে তাঁর সাথে ভাল ব্যবহার করা এবং তাঁর প্রশংসা করা। তাহলে দেখা যাবে যে, অন্তর থেকে হিংসার বীজ চিরতরে নি:শেষ হয়ে যাবে।

পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪| পর্ব ৫ | পর্ব ৬ | পর্ব ৭| পর্ব ৮ | পর্ব ৯ | পর্ব ১০


২৬ . সূরা আল-ফালাক, আয়াত : ৬।
২৭ . আবূ দাউদ, আস-সুনান, খণ্ড ৪, পৃ. ৪২৭, হাদীস নং-৪৯০৫।
২৮. দাওয়াউল হাসাদ ওয়া আছরুহু আল ত্বালাবাতিল ইলমি, খণ্ড ১, পৃ. ৪৫।
২৯. ইবনুল কায়্যিম আল-জাওজীর, কিতাবুর রূহ, পৃ. ৩৭৩-৩৭৪; ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহর, মাজমাউল ফাতাওয়া, খণ্ড ১০, পৃ. ১২৪-১২৫; ইবনে হাজার আসকালানীর, ফাতহুল বারী, খণ্ড ১০, পৃ. ৪৮১।
৩০. সূরা আল-ফালাক, আয়াত : ৬।
৩১. সুনান আবূ দাউদ, খণ্ড ৪, পৃ. ৪২৭, হাদীস নং-৪৯০৫।
৩২. মাজমা‘উয যাওয়ায়িদ – আল-হাইছামী, খণ্ড ৮, পৃ. ৮৭।
৩৩. দাওয়াউল হাসাদ ওয়া আছরুহু আল ত্বালাবাতিল ইলমি – শায়খ ইবনে জামআহ, খণ্ড ১, পৃ. ২৮০।

একজন ঈমানদার দা‘ঈর বর্জিত গুণাবলি পর্ব ৩

$
0
0

DawahMission_Gloucester_FB-01

লেখক:মুহাম্মদ শাহিদুল ইসলাম

পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪| পর্ব ৫ | পর্ব ৬ | পর্ব ৭| পর্ব ৮ | পর্ব ৯ | পর্ব ১০

৩. অন্তরে শত্রুতা

অন্তরে শত্রুতার পরিচয় ও হুকুম

বোগজ (بغض) শব্দটি আরবী। যার আভিধানিক অর্থ ঘৃণা,শত্রুতা, অবজ্ঞা, অপছন্দ ইত্যাদি। কারো সাথে অন্তরে শত্রুতাভাব পোষণ করাকে বোগজ বলা হয়ে থাকে।

বোগজের হুকুম

শরীয়াতের বৈধ হুকুম ব্যতীত কোন মানুষের সাথে শত্রুতা রাখা হারাম। কিন্তু শরীয়াত বিরোধী লোকদের সাথে এবং যারা শরীয়াতের মাসআলা গোপনা বা পরিবর্তন করে সমাজকে ভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা ওয়াজিব।

অন্তরে অন্তরে  শত্রুতার কারণ ও আলামতসমূহ

নিজের বা ধর্মের ক্ষতি দর্শনে বোগজ পয়দা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে, ধর্মের ক্ষতি দর্শনে যে শত্রুতা পয়দা হয় তা হারাম নয়। বরং প্রশংসনীয়। আর নিজের ক্ষতি দর্শনে অন্তরে যে শত্রুতা পয়দা হয় তা দোষণীয়।

অন্তরে অন্তরে শত্রুতা আলামতসমূহ

সংক্ষেপে এ কথা বলা যায় যে, শত্রুতার একমাত্র ও প্রধান আলমত হলো যার সাথে শত্রুতা আসে তার সাথে মিলে মিথ্যে থাকতে অসস্তিবোধ ও খারাপ মনে করা। সে তার সাথে সঙ্গ দিতেও অস্বীকৃতি জানায়।

অন্তরে অন্তরে শত্রুতা ভয়াবহ পরিণতি

পরষ্পর পরস্পরের সাথে শত্রুতা করা ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি কোন মু’মিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যা সে অপছন্দ করে তা নিয়ে কানাকানি করাও ইসলামে নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে হাদীসের এক বর্ণনায় এসেছে,

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : لاَ يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خَلْقًا رَضِىَ آخَرَ .

“আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন; রাসূল সা. বলেছেন :

কোন মু’মিন নর ও নারীর কোন চরিত্র অপছন্দ হলে তার অপর ভালো চরিত্র দ্বারা খুশি থাক।৩৪

অন্তরে শত্রুতা থেকে বাঁচার উপায়

সংক্ষেপে বলা যায় যে, যার সাথে শত্রুতা আছে তাঁর সাথে মিলে মিশে চলা এবং তাকে হাদীসা তোহফা প্রেরণ করা। তাহলে দেখা যাবে যে সকল প্রকার শত্রুতা বিদূরিত হয়ে উভয়ের মধ্যে চরম বন্ধুত্বপূর্ণভাব গড়ে উঠবে। আর এজন্যই রাসূল সা. ঘোষণা করেছেন :

عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : تهادوا تحابوا.

“আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সা. বলেছেন :

তোমরা পরস্পর পরস্পরকে হাদিয়া দাও তাহলে তোমাদের মধ্যে ভালবাসা তথা মহব্বত পয়দা হবে।৩৫

অপর এক হাদীসে শত্রুতা দূর করার পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে : আবূ হুরইরা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন; রাসূল সা. বলেছেন :

তোমরা ততক্ষণ বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে না পারবে, আর ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পর পরস্পর ভালবাসতে না পারবে। আমি কি তোমাদের বলে দেব যে কোন জিনিস তোমাদের মধ্যে ভালবাসা বৃদ্ধি করবে? আর সেটি হলো তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় করবে।৩৬

পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪| পর্ব ৫ | পর্ব ৬ | পর্ব ৭| পর্ব ৮ | পর্ব ৯ | পর্ব ১০


৩৪ . আল-বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা, খ. ৭, পৃ. ২৯৫, হাদীস নং-১৫১২৪।
৩৫. আল-বাইহাকী, শু‘আবুল ঈমান, খ. ৪, পৃ. ৪৭৯, হাদীস নং-৮৯৭৬।
৩৬ . মুসলিম আস-সহীহ, খ. ১, পৃ. ৫৩, হাদীস নং-২০৩।

Viewing all 452 articles
Browse latest View live


<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>